রিয়াল মাদ্রিদের সাথে গোলশূন্য ড্র করে, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাদ লিভারপুল। প্রথম লেগ ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকায় সেমি ফাইনালে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ, শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসি।
আরেকটা অ্যানফিল্ড মিরাকলের স্বপ্ন নিয়ে যারা খেলা দেখতে বসেছিলেন, তাদেরকে সত্যিকার অর্থেই স্বপ্ন দেখানো শুরু করেছিলো লিভারপুল। ম্যাচ শুরু হতে না হতেই ডি-বক্সের ভেতর থেকে নেয়া মো সালাহর শট পা দিয়ে কোনরকমে ঠেকিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কুর্তোয়া। যার একটু পরেই রেডস অধিনয়াক জেমস মিলনারের নেয়া জোড়ালো শটটা ঠেকাতেও কুর্তোয়াকে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়েছিলো।
ম্যাচের এমন শুরু দেখে হয়তো বেশ নড়েচড়েই বসেছিলেন লিভারপুল সমর্থকরা। ঠিক একইভাবে নিজেদের অবস্থান যেন নড়চড় না হয়, সেদিকে মনোযোগী হয়েছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। জিদানের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের গুছিয়ে নিতে যদিও একটু সময় নিয়েছে রিয়াল,গুছিয়ে নেয়ার তারপরই লিভারপুলকে যথেষ্ট ভাল আক্রমণ করতে না দেয়াই ছিলো রিয়ালের মূল লক্ষ্য। মাঝমাঠে কাসেমিরো ছিলেন বরাবরেই মতোই দূর্দান্ত, প্রথম লেগের পারর্ফম্যান্সের তুলনায় ক্রুস আর মডরিচ ছিলেন একটু নিস্প্রভ।
লিভারপুল আক্রমণের শক্তির জায়গা দুই উইংব্যাক, আলেকজান্ডার আরনল্ড আর অ্যান্ডি রবার্টনসকে বোতলবন্দী করতে না পারলেও বেশভালভাবেই আটকে রেখেছিলেন রিয়ালের উইংব্যাক ফেদেরিকো ভালভার্দে এবং ফারলান মেন্ডি।ফলে বাধ্য হয়েই মাঝখান থেকে খেলা গুছিয়ে গোলের চেষ্টা করে গেছে লিভারপুল। আর তখনই বারবার বাধা হয়ে উঠেছিলেন কাসেমিরো।এরিয়াল ডুয়েলে শতভাগ সাফল্য, ৮৬বার বল ছুঁয়েছেন, ম্যাচ সর্ব্বোচ্চ ৫টি করে ট্যাকল এবং ক্লিয়ারেন্স, প্রতিপক্ষের থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন ১৩বার, সেটাও পুরোম্যাচে সবচেয়ে বেশি। একজন কাসেমিরোর মূল্য সবচেয়ে ভাল হয়তো জানেন জিদান আর রিয়াল মাদ্রিদ।
এত কিছুর মধ্যেই প্রথমার্ধে গোটা তিনেক দারুণ সুযোগ নষ্ট করেছে স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ডি-বক্সে ফাকায় দাঁড়ানো ভাইনালদামও বল মারেন ক্রসবারের ওপর দিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধেও প্রায় একইরকম মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামে লিভারপুল। তবে প্রথমার্ধে যা পরিকল্পনা ছিলো, তার বাইরে যেতে পারেনি অলরেডস। রিয়ালও কেবল সাদা পোষাকের কম্বল বানিয়ে লিভারপুলকে আটকে গেছে, তারমানে এই না যে রিয়াল ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলেছে বরং হিসাব কষা ফুটবল বলতে যা বোঝায়, সেটাই করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই কাউন্টার অ্যাটাক করেছে রিয়াল, করিম বেনজেমা পোস্টেও বল মেরেছেন। সবমিলে বলা যায়, গোল করার চাইতে বলের পজিশন ধরে রেখে, খেলা এগিয়ে নেয়াতেই বেশী মনযোগী ছিলো রিয়াল।
৫৬ ভাগ বলের দখল, ১৫ বার গোলে শট আর চারটা “অন টার্গেট” কিন্তু লিভারপুলের বিখ্যাত “ফ্রন্টথ্রি” ছিলেন নখদাঁতহীন বুড়ো বাঘের মতো। লম্বা সময় ধরে গোলক্ষরায় ভোগা সাদিও মানে বা রবের্তো ফিরমিনো, কেউই সেরা ছন্দে নেই বেশ কয়েক মাস, যার অনিবার্য পরিনতি ছিলো গোল করতে না পারা। অ্যানফিল্ডে স্প্যানিশ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শেষ যে দুটো ম্যাচ লিভারপুল জিতেছিলো, দুটো ম্যাচের ব্যবধানই ছিলো ৪-০, প্রতিপক্ষ ছিলো রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। এবার দরকার ছিলো অর্ধেক, সেটা হয়নি। ভেস্তে গেছে আরেকটা অ্যানফিল্ড মিরাকলের স্বপ্ন। যোগ্যতর দল হিসেবেই কোয়ার্টার ফাইনাল টপকেছে রিয়াল মাদ্রিদ, তাতেই নিশ্চিত হয়েছে চলতি বছর আর কোন ট্রফিই জিতছে না লিভারপুল। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা হবে কিনা, সেটাও শঙ্কায় কেননা ইংলিশ লিগের পয়েন্ট টেবিলে লিভারপুল এখন ষষ্ঠস্থানে।