জম্মুর গুজ্জারনগরের একটি সাধারণ এলাকা ‘সিধি চৌক’; সেখানে ছোট একটি ফলের দোকান চালান আবদুল রশিদ মালিক। গত দুদিন ধরে নিজের দোকানে কাস্টমারের ভিড় সামলাতেই পারছেন না আবদুল। মৌমাছির মতো মানুষ আসে, ফল কেনে, আর বারবার করে জানতে চায় তাঁর ছেলে কথা। মানুষকে একই কথা বারবার বলতে অবশ্য একেবারেই ক্লান্ত হচ্ছেন না অবশ্য আবদুল; কারণ তার ছেলে যা করেছে, পিতা হিসেবে গর্বে তার বুক ভরে যাওয়ারই কথা।
কি করেছেন আবদুল রশিদ মালিকের ছেলে উমরান মালিক? ঝড় তুলে দিয়েছেন আইপিএলে, গতির ঝড়! যে ঝড়ে এখন কাঁপছে গোটা ভারত। কাগিসো রাবাদা, আইনরিখ নরকিয়া, লকি ফার্গুসনদের মতো গতিদানবেরা যা এই মৌসুমে পারেননি, জম্মু কাশ্মীরের এই আনকোরা পেসার আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচেই তা করে দেখিয়েছেন, তুলেছেন বল হাতে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ গতি।
Not Nortje, Not Ferguson, Not Rabada, but it's 21-year-old Umran Malik who has bowled the fastest ball of IPL 2021.#RCBvSRH #UmranMalik pic.twitter.com/BDz8gdsD8v
— CricTracker (@Cricketracker) October 6, 2021
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে রোববার নিজের প্রথম ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য করে নিয়মিত ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে গোলা ছুঁড়ে গেছেন উমরান; সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১৫১.০৩ কিলোমিটার- যা এই মৌসুমে ভারতীয় কোন পেসারের তোলা সর্বোচ্চ। বুধবার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে পরের ম্যাচেই ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে; ঘন্টায় ১৫২.৯৫ কিলোমিটার গতি তুলে এই মৌসুমে আইপিএলের সর্বোচ্চ গতিময় পেসার হয়ে গেছেন এই ২১ বছর বয়সী। শুধু তাই নয়, উমরানের মাত্র দুই ম্যাচের ঝলকেই এই মৌসুমে আইপিএল পেসারদের গতির চার্ট হয়ে গেছে ‘উমরানময়’। এই মৌসুমে সর্বোচ্চ ৫টি গতিময় ডেলভারির ৩টি করেছেন উমরান, হায়দ্রাবাদের হয়ে সর্বোচ্চ গতির ১০টি ডেলিভারির ৯টিই বের হয়েছে তার হাত থেকে।
টিভিপর্দা বা খবরের কাগজ নয়, বিপক্ষদলের হয়ে উমরানের গতি মাঠ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন স্বয়ং ভিরাট কোহলি। ভারতীয় অধিনায়ক ম্যাচশেষে এই পেসারকে ভাসিয়ে দিয়েছেন প্রশংসায়; উমরানের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের ফাস্ট বোলিং ডিপার্টমেন্টকে আরো শক্তিশালী করার আশায় চকচক করছে কোহলির জহুরি চোখ।
“ফাস্ট বোলারদের তালিকায় উমরানের মত একজনের যুক্ত হওয়া ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক ঘটনা। এবং আপনি যখনই এমন প্রতিভা দেখবেন আপনার নিশ্চিত করতে হবে তার প্রতিভার সর্বোচ্চ উপযোগ বের করে আনার জন্য যা করা দরকার তাই যেন করা হয়; যেমনটা আইপিএল করে আসছে”- ম্যাচশেষে বলেছেন কোহলি
অথচ এই আইপিএলে খেলারই কথা ছিল না উমরানের, যে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন, তারা তাকে দলে নিয়েছিল একজন সাধারণ ‘নেট বোলার’ হিসবে। করোনাক্রান্ত পেসার টি নটরাজনের ‘কোভিড-বদলি’ হিসেবে উমরানকে দলে ভিড়িয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে জম্মু ও কাশ্মীরের হয়ে একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়েছে।
উমরানকে প্রশংসাবন্যায় তো ভাসাচ্ছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বই। তবে ভারতীয় অধিনায়কের প্রশংসাটি অবশ্যই তার চোখে পাবে বিশেষ মর্যাদা; ভারতীয় অধিনায়কের সুনজরে থাকতে পারলে যে যেকোনসময় জাতীয় দলের দুয়ারটাও খুলে যেতে পারে উমরান মালিকের জন্য!