“আমার ধারণা ছিল, এমনকি আমার এখনো ধারণা এই গ্রুপে বাংলাদেশ সবচেয়ে শক্তিশালী। এখন এসোসিয়েট মেম্বারদের সাথে খেলতে গিয়ে এতো প্ল্যানিং করতে হবে, এতো চিন্তা করতে হবে, এতো কষ্ট করতে হবে এটা দেখার জন্য জন্য তো আমরা প্রস্তুত না।”
মাসকটে সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমের সাথে যে দীর্ঘ কথোপকথনটি হলো বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের, তার একটি ছোট্ট উদ্ধৃতি মাত্র। এতো হতাশ শেষ কবে লেগেছে সভাপতির কন্ঠ তা হয়তো গবেষণার বিষয় হতে পারে।
তিন সহযোগী সদস্যদের নিয়ে গ্রুপ ‘বি’ তে রয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে টাইগারদের তিনটি ম্যাচেই ভূমিধ্বস বিজয় প্রায় ধরেই রাখার কথা ছিল, সেখানে প্রথম ম্যাচটিই স্কটল্যান্ডের সাথে হেরে গিয়ে বাংলাদেশকে এখন আগামী ম্যাচগুলোর কথাও চিন্তা করতে হচ্ছে দুরুদুরু বক্ষে।
ম্যাচ হারের চেয়ে ম্যাচ ‘যেভাবে হেরেছে’ বাংলাদেশ বা খেলোয়াড়দের যে শরীরী ভাষা ছিল, সেটিই যেন পীড়া দিচ্ছে সমর্থকদের। সোমবার মাসকটে গণমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কন্ঠেও ঝড়ে ঝড়ে পড়লো সেই পীড়াজনিত হতাশা। এ জানিয়েছেন, এভাবে খেললে বিশ্বকাপের আশা করা বাতুলতা।
“হারা জেতা নিয়ে আমি কখনোই চিন্তা করিনা। টি-টোয়েন্টিতে তো যেকোন দল যেকোন দলকে হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু কাল তো আমাদের খেলার “এপ্রোচ” বা “এটিচুড” কিছুই ঠিক ছিলোনা। দুটো উইকেট পড়ার পর সাকিব মুশফিক রিয়াদ যেভাবে ব্যাট করেছে সেখানেই আমরা ম্যাচ হেরে গেছি। যেভাবে খেলেছি এভাবে খেললে তো আমরা ১৪০ তাড়া করতে পারব না। এটা তো কাউকে নতুন করে বলে দিতে হবে না, যে এভাবে খেললে আমরা জিততে পারবনা।”- বলেছেন পাপন
লিটন সৌম্যর উইকেট পতনের পর যথাক্রমে সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদ নেমেছেন, কিন্তু কেউই পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী ব্যাট করতে পারেননি। অথচ পরের দিকে আফিফ, সাইফুদ্দিন, মাহেদিরা ঠিকই স্ট্রোক খেলেছেন, মারতে চেষ্টা করেছেন। যদিও ততক্ষণে আর কিছুই করার ছিলনা। এবং এই ধারা বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন কিছুও না, ‘সিনিয়রদের আগে জুনিয়রদের নামানো যাবে না’ এটি প্রায় অলিখিত নিয়মই যেন হয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে, তা সেই জুনিয়র যতই সামর্থ্যবান হোন। পাপন প্রশ্ন তুলেছেন এই ‘শ্রেণীবৈষম্যের’ হেতু নিয়েও।
“শুরুর তিন ওভারে ২ উইকেট পড়ে গেছে, আরো আড়াই ওভার বাকি তখন ব্যাটিং অর্ডার চেঞ্জ করা দরকার ছিল। কাউকে তিনে খেলাতেই হবে, কাউকে চারে খেলাতেই হবে এটা কেমন কথা? এটা তো ম্যাচের কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে। এরপর যেভাবে আমরা ব্যাটিং করেছি, ১৩-১৪ ওভার পর্যন্ত বলের চেয়ে রান কম করেছি এটা তো কোনভাবেই হতে পারেনা। কারণ এভাবে ব্যাট করলে তো পরে যত ভালো ব্যাটসম্যানই থাকুক তাদের জন্য তো কোন সুযোগ থাকছে না। ওদের বাধ্য হয়েই ‘অলআউট’ খেলতে হচ্ছে। এভাবে প্ল্যান করার তো কোন কারণ নাই। এটা একটা এপ্রোচের সমস্যা। তাদের মাথায় কি চলছিল জানিনা।”
ব্যাটিংয়ে চরম ব্যর্থ, তাই তুলনামূলক বিচারে বোলিংটা অনেকের কাছেই ভালো মনে হচ্ছে। পাপন জানালেন, বোলিং নিয়েও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি তিনি।
“৬-৬টা উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কেন ১৪০ করবে স্কটল্যান্ডের মত দল? শেষের দিকে এতো রান আমরা কেন দিলাম? টি-টোয়েন্টি তো শুধু উইকেট নেওয়ার খেলা না, রান তো আটকাতে হবে। যদিও সবাই বলছে বোলিং ভালো হয়েছে, আমি বলছি বোলিং ভালো হয়নি।”
সমস্যা নিরসনে পাপনের সমাধান একটিই। ব্যাটিং বোলিং দুটি ‘এপ্রোচেই’ আনতে হবে বদল। এবং এই বিষয়ে নাকি দলের শীর্ষ সদস্যদের সাথে কথাও হয়েছে তাঁর।
“প্লেয়ারদের সাথে আমি কথা বলতে পারিনি। তবে কোচ, রিয়াদ আর সাকিবকে পেয়েছি। তাদের সাথে জ্যুমে মিটিং করেছি। আমি তাদের শুধু এই জিনিসটাই বলেছি, কাউকে কোন স্পেসিফিক পজিশনে খেলতেই হবে এই সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং অর্ডার চেঞ্জ করতে হবে। সাকিব মুশফিক রিয়াদ এরা হচ্ছে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। এদেরকেই ম্যাচ শেষ করে আসতে হবে, সেজন্য যদি (ব্যাটিং অর্ডারে) নিচের থেকে কাউকে উপরে উঠিয়ে নিজেদের নিচে খেলতে হয় তাহলে তাই করুক। আর যদি নিজেরা উপরে খেলতে চায়, তাহলে রিস্ক নিতে হবে। নিজেরা রিস্ক না নিয়ে পরের ব্যাটসম্যানদের ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে’ পুশ করা যাবে না।”
“টি-টোয়েন্টিতে তো শুধু কত রান করলাম তা মুখ্য না। কত বলে কতো রান করলাম সেটা হচ্ছে বড়। সবচেয়ে বড় কথা আমরা রান তাড়া করছিলাম, সেখানে আপনারা ধীরে খেলছেন, রানরেট বাড়তে বাড়তে ১০-১২ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা আসছে যে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের চার বলে চারটা ছয় মারা লাগবে। এটা তো সম্ভবই না।”
বোলিং নিয়েও পাপনের ছিল কড়া হুশিয়ারি।
“এবং আমি এও বলেছি বোলিং ভালো হয়নি। শুরুতে ভালো হয়েছে, কিন্তু শেষদিকে অত্যন্ত খারাপ বোলিং হয়েছে। সাকিব মাহেদি বিউটিফুল বোলিং করেছে, কিন্তু বাকিরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনাই। কে কয়টা উইকেট নিল আমার জানার দরকার নাই, টি-টোয়েন্টিতে আপনাকে রান আটকাতে হবে।”
দলের সবার মনোবল চাঙ্গা রাখতে অধিনায়ক রিয়াদের পাশাপাশি সিনিয়র হিসেবে সাকিব আল হাসানকেও ভূমিকা রাখতে বলেছেন পাপন।
“সাকিবকে আরো বেশি ইনভলভ হতে বলেছি খেলোয়াড়দের চাঙ্গা করার জন্য। একটা অঘটন ঘটে গেছে এরপর দলের অনেকের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। আমি বুঝাতে বলেছি এতো ভেঙ্গে পড়ার কিছু নাই। নেক্সট দুই ম্যাচ জিতে আমরা কোয়ালিফাই করবো। তার পরেরটা পরে দেখা যাবে।”