৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

কাতার বিশ্বকাপের আলোচনা-সমালোচনা

- Advertisement -

ঠিক বছর তিনেক আগে, রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে কখনো কি কারও মনে হয়েছিলো, সব আর আগের মতো থাকবে না? অতো দূরে না যাই, একটা বছর আগেও কি কেউ বুঝতে পেরেছিল মহামারীর প্রকোপ কতোটা তীব্র হতে পারে? যে তীব্রতায় বদলে যাবে সব পরিকল্পনা, ভালো-খারাপ সব হিসেবনিকেশ।

‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপ মাঠে গড়াতে এখনো বছর দেড়েক বাকি। কাতারের এই আসরকে ঘিরে ইতোমধ্যে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাণহানির খবর হয়েছে সংবাদের শিরোনাম। মৃত্যুও মাঝেমধ্যে আপেক্ষিক, নয়তো এতসব কিছু ছাপিয়েও কেন চলছে বাছাইপর্বের ম্যাচ! তবে অন্যান্য বারের মতো হতে যাচ্ছে না কাতার বিশ্বকাপ, এতটুকু প্রায় নিশ্চিত।  পরিবর্তন এসেছে সময়সূচিতে, চলবে নভেম্বর-ডিসেম্বর জুড়ে। এতে প্রভাব পড়বে দুনিয়াজুড়ে চলা ঘরোয়া লিগগুলোতে।

এক দশক আগেই নিশ্চিত হয়েছিলো কাতারই হচ্ছে ২০২১ ফুটবল বিশ্বকাপ। রীতিমতো, জুন-জুলাই মাসেই হওয়ার কথা ছিলো টুর্নামেন্ট। কিন্তু মধ্য এশিয়ার দেশ হওয়ায় বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঐ অঞ্চলের তাপমাত্রা উঠে যায় প্রায় ৪২ ডিগ্রির উপরে। তাই পিছিয়ে যায় বিশ্বকাপের দিনক্ষণ। জটিলতা মূলত ইউরোপিয়ান সব লিগ নিয়ে, লিগগুলো সাধারণত আগস্টে শুরু হয়ে পরের বছর মে’তে গিয়ে শেষ হয়। কাতার বিশ্বকাপের কারণে ছয় সপ্তাহ বন্ধ থাকবে ২০২২-২৩ সিজনের অনেক ম্যাচ।

গোলমেলে শিডিউল নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি কোনো পক্ষই। আর্সেনালের সাবেক ম্যানেজার এবং বর্তমানে ফিফার চিফ অব গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট আর্সেন ওয়েঙ্গার প্রস্তাব দিয়েছেন ‘ওভারহল ফুটবল ক্যালেন্ডার’ এর, যেখানে এক সিজনের এক তৃতীয়াংশ ম্যাচ হবে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক খেলোয়াড়, অনেক দেশে ভ্রমণে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ স্থগিত করছে দলগুলো। ইউরো ২০২০ হওয়ার কথা আসন্ন জুন-জুলাইয়ে, তাও অনিশ্চয়তার মাঝে। ক্লাবগুলো ট্রান্সফার উইন্ডো নিয়েও বিপাকে পড়তে পারে।

খেলোয়াড়েরা কতটুকু প্রস্তুত থাকবেন লিগ ম্যাচ শেষ করেই আবার বিশ্বকাপের ম্যাচে খেলতে? কোচদের ভাবনাই বা কি তাদের নিয়ে? ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট বলেছেন,

“শুধু আমি নই, বড় বড় ক্লাব এবং জাতীয় দলের কোচদেরও কিছু বলার আছে (শিডিউল নিয়ে), তাদের মতামত না নিয়েই অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ“

আগামী দুই বছর যেকোনো ক্লাব, খেলোয়াড় বা কোচই ব্যস্ততম সময় পার করবেন, এতটুকু বলাই যায়।  সমর্থকরাও কি কম চাপে থাকবেন? আদৌ কি মাঠে বসে উপভোগ করতে পারবেন কোনো ম্যাচে! হয়তো হ্যা, হয়তো না, উত্তর সময়ের কাছেই তোলা থাক।

নতু্ন করে যুক্ত হয়েছে ‘কাতার বিদ্বেষ’! আয়োজক হিসেবে নাম ওঠার পরই ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্যা গার্ডিয়ানে’ প্রকাশিত, বিশ্বকাপে নিয়োজিত ৬৫০০ শ্রমিকের মৃত্যুর খবরে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল, যাকে কাতার সরকার ‘খুব সামান্য ক্ষতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে বরাবরই যত্নশীল কাতার। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ‘হিউম্যান রাইটস অন অ্যান্ড অফ দ্যা পিচ’ স্লোগানে কালো টিশার্ট পরে এরই মধ্যে প্রতিবাদ করেছে জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মতো বড় দল। অন্যদিকে, বিশ্বকাপ চলাকালীন ‘সমকামিতা’কে বৈধতা দেবার ঘোষণা দিয়েছেন কাতার বিশ্বকাপের ডেলিভারি ও লিগ্যাসি কমিটির প্রধান হাসান আল থাওয়াড়ি।

সবকিছু মিলিয়ে সমালোচনা, তীক্ততায় বিদ্ধ কাতার বিশ্বকাপ। তবুও বিশ্বাস, বিশ্বকাপ ফুটবল ছাপিয়ে যাবে সব বিতর্ক, ফুটবল উন্মাদনায় ভাসবে পুরো বিশ্ব।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img