৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

কিছু গল্পের শেষেই হয় শুরু

- Advertisement -

দুইদিন পরেই সেমিফাইনাল। কি করে খেলবেন ম্যাচটা, আইসিইউয়ের বিছানাটায় শুয়ে সেটা ভেবেই অস্থির মোহাম্মদ রিজওয়ান। সময়ের দিকে তাঁকালেই অন্ধকার হয়ে আসে পাকিস্তান ওপেনারের মুখ। অপেক্ষার প্রহর যেনো থামতেই চাইছে না। কিন্তু, তাকে যে খেলতেই হবে ম্যাচটা!

রিজওয়ান দৃঢ়প্রত্যয়ী, ঠিকই নিজেকে ফিট প্রমাণ করে খেলেছেন সেমিফাইনালে; ছড়িয়েছেন আলো। শেষঅব্দি জয় না এলেও, জিতেছেন ভক্ত-সমর্থকদের হৃদয়। তাঁকে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। শুধুই কি তাঁকে নিয়ে? হেরেও বিশ্বক্রিকেটে যে পাকিস্তানেরই জয়জয়কার। ট্রফি না জিতেও জায়গা করে নেবেন ভক্ত সমর্থকদের হৃদয়ে, বাবর আজমরা নিজেরাও ভেবেছিলেন কি!

 

শুধু ভক্ত সমর্থকেরাই নয়, সেমিফাইনালে হারের পরও বাবর আজমের দলের বন্দনায় মেতেছেন ইমরান খান, ইনজামাম-উল-হক, শহীদ আফ্রিদি থেকে শুরু করে বোর্ড প্রেসিডেন্ট রমিজ রাজাও। সকলেই বলেছেন দলের পারফরম্যান্সে গর্বিত তারা, মাথাটা রাখতে বলেছেন উঁচুতে। দল হারলে যেখানে হয় অসংখ্য সমালোচনা, সেখানে কেউই আঙ্গুল তুলেননি পাকিস্তান দলের দিকে। আঙ্গুলটা নামিয়ে রেখেছেন বাবর আজমও, বাকিদেরও বলেছেন নামিয়েই রাখতে।

“কষ্ট সকলেই পেয়েছি। আমরা কোথায় ভুল করেছি, কোথায় আরও ভালো করা যেতো এটা নিয়ে সকলেরই দুঃখ আছে। কিন্তু, এখান থেকে আমাদের শিখতে হবে। আমাদের যেই দলটা তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এটা যেনো ভেঙ্গে না যায়। কেউই যেনো কারোর দিকে আঙ্গুল না উঠাই। কেউই যেনো কাউকে দোষারোপ না করি।”

“আমি আবারও বলতে চাই, এই বন্ধনটা যেনো কখনোই ভেঙ্গে না যায়। অনেক কঠিন এরকম সম্পর্ক তৈরি করা, অনেক সময় লাগে আমার ভাইয়েরা। আমাদের এই সুখী পরিবার থেকে কেউই যেনো বের না হয়ে যায়। আমি সকলের পাশে আছি। একজন অধিনায়ক হিসেবে আপনারা সকলেই আমাকে যেভাবে সাপোর্ট করেছেন তা অবিশ্বাস্যকর। যেকোনো প্রয়োজনেই সকলে এক হয়ে লড়েছি। অধিনায়ক হিসেবে এরচেয়ে বেশী একজন ক্যাপ্টেন আর কিই বা চাইতে পারে!”

“আমি জানি সকলেই অনেক কষ্টে আছি। কিন্তু, আমরা কেউই যেনো ভেঙ্গে না পড়ি। একজন আরেকজনের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এটাই সেই সময় যখন আমাদের সকলের পাশেই আমাদের থাকা প্রয়োজন। দোষ যেনো কাউকেই না দেই। যেই দোষ দিবে আর আমার কানে যদি সেটা আসে, তাহলে তাকে আমি দেখে নিবো। তার সাথে আমার কঠিন কিছু কথাই হবে।”

অধিনায়ক তো এরকম একজনেরই হওয়া উচিত; যে দলের দুঃসময়েও দিয়ে যাবেন সামনে থেকে নেতৃত্ব। দলকে আগলে রাখবেন, ভাঙ্গতে দিবেন না তিলে তিলে গড়ে ওঠা পরিবারটাকে। ম্যাচ শেষে সকলের সাথে তোলা শাহীন শাহ আফ্রিদির সেলফি কিংবা অনুশীলনের ফাঁকে সরফরাজ আহমেদের ইমামতিতে পুরো দলের নামাজ আদায়; সবটাই তো এক পরিবারের, এক দল হয়েই খেলার গল্প বলে দিয়ে যায়।

ম্যাচ জয়ের পর শাহীন আফ্রিদির সেলফিতে পুরো দল

বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টিতে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এসেছিল পাকিস্তান। ফিরতে হচ্ছে শিরোপা না জিতেই, তবে রেখে যাচ্ছেন অসংখ্য সুখস্মৃতি। পুরো জার্নিতেই যে সৃষ্টি করেছেন বেশকিছু উদাহরণ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় শেষে পুরো স্কটিশ দলকে নিয়ে হারিস রউফের জন্মদিন উদযাপন, মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে যখন সমালোচনায় মত্ত সকলেই তখন রিজওয়ানের করা টুইট; সবই তো উদাহরণ হিসেবেই থেকে যাবে চিরদিন।

লড়াইয়ে নামার পূর্বে

অনেক বছর পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাস যখন মনে করার চেষ্টা করবে পরবর্তী প্রজন্ম,  তখন হয়তো এই সুখস্মৃতিগুলো মনে পড়বে না কারোরই। এই পৃথিবী যে শুধুই সেরাদের মনে রাখে, শুধুই মনে রাখে চ্যাম্পিয়নদের! বাবর আজমরাও তাই নিশ্চিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েই নিজেদের নামটা স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে রাখতে চাইবেন। আর সেই সুযোগটা তারা পাচ্ছেন আগামী বছরেই, কিংবা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে; টানা দুই বছরে যে অনুষ্ঠিত হবে দুইটি বিশ্বকাপ।

এই বিশ্বকাপ অভিযান নাহয় এখানেই শেষ! কিন্তু, এখান থেকেই পাকিস্তান দল করতে পারে নতুন সূচনা। কিছু কিছু গল্পের শেষ থেকেই যে হয় শুরু!

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img