চট্টগ্রামে তৌহিদ হৃদয়ের পর শতক তুলে নিয়েছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান অমিত হাসানও। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেছেন বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলের এই ব্যাটসম্যান, হৃদয়কে নিয়ে গড়েছেন ২২০* রানের জুটি। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা অমিত ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন বিসিএলেও। শুধুই কি বিসিএলেই? অমিত তো ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন নিজের জীবনের গল্পতেও। বিশ বছর বয়সী অমিতের গল্পটা যে একটু আলাদা!
২০১৯ সালের কথা, জাতীয় লিগের ম্যাচে খেলছে সিলেট। হঠাৎ দুই ভরসামান তরুণ ব্যাটসম্যান জাকের আলী অনিক এবং জাকির হাসানের ডাক এসেছে ‘এ’ দল এবং ‘এইচপি’ দলে। ব্যাটসম্যানের সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দল, প্রধান কোচ রাজিন সালেহর মাথায় হাত। দুশ্চিন্তায় জীর্ণ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফোন করলেন সতীর্থ হান্নান সরকারকে। হান্নান তখন বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক, যুব বিশ্বকাপজয়ী দলটাও তারই নির্বাচন করা।
অমিত হাসানের গল্পটা শুরু এখান থেকেই; ২০১৯ সালে ঘোষিত যুব বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন, একের পর এক ক্যাম্প করতে করতে ক্লান্ত। ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে যখন চিন্তিত, ঠিক তখনই অমিতকে হঠাৎ পাঠানো হলো সিলেটে। রাজিন সালেহ প্রথমবারের মতো নেটে ব্যাটিং করতে দেখলেন যুব দল থেকে বাদ পড়া উইকেটকিপার এই ব্যাটসম্যানকে। প্রথমবার দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন সিলেট কোচ যে অমিতকে নামিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে পরের ম্যাচেই।
অভিষেক ম্যাচ, কিছুটা নার্ভাস ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু চাপটাকে জয় করে ঠিকই চেনালেন জাত। অভিষেকেই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি, দলকে এনে দিলেন জয়। সেইসাথে প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরাও ১৯ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ১২৫ রান করা অমিত। সেই যে শুরু, এরপর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি আর।
দলের ক্রান্তিকালে এসেছিলেন প্রথমবার, এরপর যখনই দল বিপদে পড়েছে প্রতিবারই ঢাল হয়ে দাড়িয়েছেন প্রতিপক্ষের সামনে। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগে ১১ ইনিংসে দুই শতকে ৫৯ গড়ে করেছেন ৫৯০ রান, হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। প্রথম স্তর থেকে দল যখন অবনমন হয়ে যাওয়ার পথে তখন রংপুরের বিপক্ষে খেলেছেন ১৮৬ রানের হার না মানা ইনিংস।
যুবদলে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেননি। বলা যায়, সুযোগটাই পাননি। পাঁচ ওয়ানডেতে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে করেছেন ১৩, এরপর আর জায়গাই হয়নি একাদশে। টেস্টে অবশ্য খেলেছেন ছয়টি ম্যাচ, কিন্তু গড়টা ছিল না আশানরুপ। ১৭ গড়ে করেছিলেন ১৭৩, অর্ধশতক একটি। যুবদলে ব্যাটিংয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারা অমিত কি অবিশ্বাস্যভাবে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন জাতীয় লিগ, বিসিএলে! জাতীয় দলে জায়গা হবে একদিন এই স্বপ্ন নিশ্চয়ই দেখেন অমিত। কিন্তু, তার দিকে চোখ পড়ে তো নির্বাচকদের?