বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের মাঠে নামবে, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে খেলবে। আর বড় ব্যবধানে হারবে এটা এক রকম ধরাবাঁধা নিয়ম। তাই হয়েছে ডানেডিনে। পুরনো গল্প নতুভাবে লিখেছে তামিমরা। ৮ উইকেটে হেরে সিরিজ শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। ওয়ানডে ম্যাচটা যেন টি-টোয়েন্টি বানিয়েই জিতলো স্বাগতিকরা। তিন ম্যাচে সিরিজ এগিয়ে থাকলো কিউইরা। নিউজিল্যান্ডের মাঠে বাংলাদেশ সবশেষ ম্যাচটা খেলেছিল এই ডানেডিনেই, দুই বছর আগে। ওই ম্যাচ হেরেছিল ৮৮ রানে। দুই বছর পর একটুও পরিবর্তন নেই হারের ধরনে।
New Zealand win!
Brilliant bowling from the @BLACKCAPS helps the hosts to an eight-wicket victory over @BCBtigers in Dunedin. #NZvBAN | https://t.co/fPmDmMSVvY pic.twitter.com/GtsMxzNkhu
— ICC (@ICC) March 20, 2021
১৩২ রানের টার্গেট, কিউই ব্যাটসম্যানদের জন্য একবারে মামুলি ব্যাপার। মুস্তাফিজের প্রথম চার বল একটু দেখেছেন ওপেনার গাপটিল। চতুর্থ বলে চার হাঁকিয়ে শুরু, পরেরটাতে আরো বিধ্বংসী মার, ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে বিশাল ছক্কা। ইনিংসে গাপটিলের ৩৮ রান, তার মধ্যে ৩৬ রানই করেছেন ছক্কা-চারে। ভয়ংকর এই ব্যাটসম্যানকে থামান তাসকিন আহমেদ, ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে। দারুণ এক সুইংয়ে কট বিহাইন্ড হন। রিভিউ নিয়েছিলেন, লাভ হয়নি। দুই ওপেনারের পার্টনারশিপ হয়েছিলো ৫৪ রানের।
? for New Zealand!
Henry Nicholls and Devon Conway bring up a partnership worth more than 50 runs as the @BLACKCAPS reach triple figures.#NZvBAN | https://t.co/fPmDmMSVvY pic.twitter.com/sFX3NOLWfc
— ICC (@ICC) March 20, 2021
আরেক ওপেনার হ্যানরি নিকোলস ছিলেন শেষ পর্যন্ত, ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ আরো একটি উইকটে পেয়েছে, তবে এটা ১৯তম ওভারের শেষ বলে। স্কয়ারে চিপ করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দেন কনওয়ে। ২৭ রানে করে আউট হন। বিশ ওভারেই হয়তো শেষ করার টার্গেট ছিল নিউজিল্যান্ডের। লক্ষ্যের চেয়ে ৮ বলে বেশি খেলেছে। ১৭২ বল হাতে রেখে কিউইদের জয়। নিউজিল্যান্ডের ১৩২ রানের ৭৬ রানই এসেছে চার-ছক্কায়। ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে গাপটিলরা বুঝিয়ে দিলো কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সময় বোলিংবান্ধব উইকেট যেন বদলে গেল নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময়। হারের পর তামিমের কন্ঠেই ফুটে উঠেছে নিজেদের ব্যাটিং দূর্বলতার দুর্দশা।
আমাদের ব্যাটসম্যানরা বাজিভাবে আউট হয়েছে, কোন সন্দেহ নেই তাদের বোলিং দুর্দান্ত ছিল। সব দোষ আমাদেরই। আমরা নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে অনেক গর্ব করি। সেটা আজ কাজে লাগেনি। আমাদের ব্যাটিং নিয়ে ইতিবাচক বলার মতো কিছু নেই। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা এখানে। তাই প্রস্তুতির ঘাটতে রয়েছে এমন কিছু বলার কোন সুযোগ নেই। এমন কন্ডিশন নতুন কিছু নয়।
New Zealand wins the toss and @Tomlatham2 elects to bowl in his 100th ODI.
Devon Conway, Daryl Mitchell and Will Young will all make their debuts today at Dunedin.
?: @BLACKCAPS #NZvBAN pic.twitter.com/G5g6ZApZgk
— ICC (@ICC) March 19, 2021
তার আগে ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশের হার, টসে। তামিমও বলেছিলেন টস জিতলে বোলিংয়ই নিতেন। ইউনিভার্সিটি ওভালের উইকেটে ছিল একটু বাড়তি বাউন্স। রোদের দেখা ছিল না বলে পেসারদের জন্য শুরুতে সহায়তাও কিছুটা ছিল। কিন্তু বিপজ্জনক কিছু নয়। দলকে ডোবায় ব্যাটসম্যানদের বাজে শট নির্বাচন।
একটা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশকে প্রথম ওভারেই নতুন কিছুর আভাস দিয়েছিল তামিমের চোখ জুড়ানো ছক্কা। ওভার পয়েন্ট দিয়ে রানের খাতা খুলেন। কিন্তু এই সাহসী ব্যাটিং বেশক্ষণ টিকে নাই। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে সুইং হবে ভেবেছিলেন তামিম। কিন্তু বোল্ট ব্রিলিয়ান্ট বোলিংয়ে তামিমকে এলবি’র ফাঁদে ফেলেন। ১৫ বলে ১৩ রান করেন।
নিজের জায়গা নিয়েই দিশেহারা সৌম্য সরকার। শান্তুর জায়গায় তিনে নেমে ওই একই অবস্থা তিনের। শুন্যতেই সৌম্য শেষ। শিকার হন নিশামের।
All out! ✅
The @BLACKCAPS restrict Bangladesh to 131 in the 42nd over.@trent_boult the standout bowler with 4/27. New Zealand require 132 runs to win the first ODI.#NZvBAN | https://t.co/fPmDmMSVvY pic.twitter.com/1B1KNHAJch
— ICC (@ICC) March 20, 2021
এরপর বাংলাদেশের জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারানো। লিটন দাস কিছুটা লড়েছেন, কিন্তু বিশও ছুঁতে পারেননি। ১৪তম ওভারে মিড অনে পুশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এমন শট খেলেই নিজেই অবাক, ক্যাচ দেন বোল্টের হাতে।
4 – Trent Boult's figures of 4-27 for the @BLACKCAPS in this afternoon's #NZvBAN men's ODI marks his third haul of 4+ wickets in the format at University Oval; no other player has achieved the feat more than once at the Dunedin venue. Strategy. pic.twitter.com/EpV1ZX6BpH
— OptaJason (@OptaJason) March 20, 2021
৫০ হওয়ার আগেই তিন টপ অর্ডার নেই। এই চাপে বেসামাল অন্যরা। এরপর দু’টা ২৭ রানের পার্টনারশিপ হয়েছে। প্রথমটা মিথুনকে নিয়ে মুশফিকের। কিন্তু ইনিংসের দুর্দশা কাটেনি তাতে। ২২তম ওভারের প্রথম বল, নিশামের শর্ট বলে কার্ট করতে গিয়ে তালগোল পাকান মুশফিক। গালিতে ক্যাচ দেন। জুটি ভাঙ্গে ৬৯ রানে। দুই ওভারের ব্যবধানের মিঠুন আউট হন রান আউটে। দুই স্পিনার মেহেদী মিরাজ-মাহেদে হাসান ফিরেন দলের শতরান হওয়ার আগেই।
এরপর ২৭ রানের পার্টনারশিপ মাহমুদউল্লাহ’র, বোলার তাসকিনকে নিয়ে। সেই জুটিতেই শতরান পেরিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অলআউট হয় ৪১ ওভার ৫ বলে, ১৩১ রানে। দুইটা ২৭ রানের পার্টনারশিপে ইনিংস সর্বোচ্চ ওই ২৭ রানই, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। চার উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। দুটা করে নিয়েছেন নিশা এবং স্যান্টনার। ডানেডিনে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটাও করে ফেললো এই ম্যাচে। ১১ বছর আগে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ১৮৩ রান করেছিল ওই ম্যাচে।
সিরিজের পরের ওয়ানডে মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চে, দিবা-রাত্রির ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাতটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১৩১ ( মাহমুদউল্লাহ ২৭, মুশফিক ২৩, লিটন ১৯) বোল্ট ৪/২৭, নিশাম ২/২৭, স্যান্টনার ২/২৩
নিউজিল্যান্ড ১৩২/২ ( নিকোলস ৪৯*, গাপটিল ৩৮, কনওয়ে ২৭) তাসিকন ১/২৩, হাসান মাহমুদ ১/৪৯