দেশের ক্রিকেটে হালকা ‘পালাবদলের’ বাতাস বইছে যেন। গণমাধ্যম, অনলাইন, অফলাইন- কোথাও সিনিয়র বা প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের নিয়ে খুব বেশি আলোচনা নেই, বরং বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর পাকিস্তান সিরিজের জন্য নতুন যে সাতজন তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে কাজ শুরু করেছেন ‘টিম ডিরেক্টর’ খালেদ মাহমুদ সুজন তাদের নিয়েই হচ্ছে সমস্ত আলোচনা। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে গেলেই দেখা মিলছে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার ঘাম ঝড়াচ্ছেন সুজনের নির্দেশনায়। প্রতিদিন কথা হচ্ছে এক একজন নতুন খেলোয়াড়ের সাথে।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ গণমাধ্যম পেয়ে গেলো তৌহিদ হৃদয়ের দেখা। ডানহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। তবে তার আগে থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গনে বেশ পরিচিত এবং বয়সের তুলনায় বেশ পরিণত একজন হিসেবেই ধরা হয় হৃদয়কে। ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন। ব্যাট হাতে ঐ বয়সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা ছোটানোর কারণে ২০১৮ এশিয়া কাপের প্রাথমিক ৩০ সদস্যের দলেও রাখা হয়েছিলো ১৭ বছর বয়সী হৃদয়কে। তবে তখনও ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই পরিণতি আসেনি; যতটা এসেছে অনূর্ধ্ব-১৯ সেটআপের সাথে থেকে। বিশ্বকাপের আগে টানা তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি করেছিলেন।
বিশ্বকাপ জয়ের পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। ‘লিস্ট এ’ ম্যাচে হৃদয়ের ব্যাটিং গড় ৫২.৩০, টি-টোয়েন্টি গড়ও ৩০+, স্ট্রাইক রেট ১১৬। স্ট্রাইক রোটেশন, দুর্দান্ত স্ট্রোকপ্লে ও শটের রেঞ্জের জন্য ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই জাতীয় দলের মিডল অর্ডারের ভবিষ্যৎ বলে মনে করেন হৃদয়কে। গণমাধ্যমকে হৃদয় জানালেন শটের রেঞ্জ আরো বাড়াতেই জাতীয় লিগের ম্যাচ ছেড়ে এই ক্যাম্পে খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে দীক্ষা নিচ্ছেন তিনিসহ ক্যাম্পের বাকিরা।
“এখানে আমরা এসেছি আমাদের ফোকাস বাড়ানো ও রেঞ্জ হিটিং বাড়ানোর জন্য। সুজন স্যার আছেন, আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে শটের রেঞ্জ আরো বাড়াতে পারি”
“পাকিস্তান সিরিজে সুযোগ পাওয়া না পাওয়া আমার হাতে নাই, আমার হাতে আছে আমার প্র্যাকটিস। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে পরিশ্রম করবো এবং চেষ্টা করবো আমার যে সুযোগগুলি আছে তা কাজে লাগানোর”- যোগ করেছেন হৃদয়।
![](https://kcs3.eu-west-1.klovercloud.com/allrounderbd-live-ailkxhbi/2021/11/jhg.jpg)
হৃদয়রা মাঠের একদিকে প্র্যাকটিস করছেন তো মাঠের আরেকদিকে সবার থেকে আলাদা হয়ে ঘাম ঝড়াচ্ছেন জাতীয় দলের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান। দেশসেরা ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে টোটকা নেওয়ার লোভ তো হৃদয়রা সংবরণ করতে পারবেন না তা জানা কথাই। হৃদয় জানালেন তামিমও নাকি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করছেন না।
“তামিম ভাই সবসময় আমাদের ইন্সপায়ার করেন। ওনার কাছ থেকে ভালো ভালো কথাই শুনি। কিভাবে আমরা আরো ভালো করবো। নেক্সট স্টেপে কিভাবে যাবো, সেখানে কি কি ফেস করা লাগতে পারে। যেমন এই সিরিজ সম্পর্কে তামিম ভাই বলছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি নাকি প্রথম ৬ বলের ভেতরই ইয়র্কার মারবে। সিনিয়রদের থেকে এই ছোট ছোট তথ্যগুলি যদি আগে থেকে জানতে পারি তাহলে আমাদের পথচলাটা আরো সহজ হয়।”
কথপোকথনে অবধারিতভাবে চলে এলো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কথা। সেখানে হৃদয় ব্যক্ত করে ফেললেন নিজের ও বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর মনের ভেতর থাকা সুপ্ত এক উজ্জ্বল স্বপ্নের কথাও,
“আমরা যতদিন ক্রিকেট খেলব ততদিন একটা কনফিডেন্স দিবে। আমরা ওয়ার্ল্ড কাপ জিতছি। এবং আমাদের দলের প্রতিটি খেলোয়াড় আমরা যদি সুযোগ পাই তো পরেরবার বড়দের যে বিশ্বকাপটা হবে সেটাও আমরা জিতে আনবো।”
তবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী সবাই তো পরের ধাপটা বা সেই পরের ধাপেরও ‘পরের’ ধাপটায় উঠতে ব্যর্থ হন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় তো এটি আরো বেশি সত্য। এই প্রশ্নের জবাবে হৃদয় হয়ে গেলেন বাস্তববাদী।
“এটা আসলে ডিপেন্ড করবে আমরা কিভাবে চাই। মানুষ যদি চায় সবই সম্ভব। আমরা চেষ্টা করবো আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে জাতীয় দলে ঢোকার ও জাতীয় দলে ভালো করার”