নতুন মৌসুমের শুরুতেই হোঁচট খেলো আর্সেনাল। প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী খেলায় ২-০ গোলে হেরেছে আর্সেনাল; প্রতিপক্ষ ১৯৪৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে সুযোগ পাওয়া ‘দ্য বিজ’ বা মৌমাছির দল খ্যাত ব্রেনফোর্ড। চেলসি এবং ম্যানচেষ্টার সিটির বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ব্রেনফোর্ডে দারুণ একটা শুরু করতে চেয়েছিলো মিকেল আর্টেটার দল। কিন্তু শুরুতেই হেরে উল্টো চাপের মুখে আর্সেনাল।
ম্যাচ শেষে ব্রেনফোর্ড ভক্তরা মিকেল আর্টেটাকে লক্ষ্য করে স্লোগান দেয়, “সকালেই বরখাস্ত” করে। যদিও মৌসুমের একিবারে শুরুতেই এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবুও খুব দ্রুত যদি জয়ের দেখা পেতে শুরু না করে আর্সেনাল, তাহলে যে বেশ চাপের মুখেই পড়তে হবে আর্টেটাকে তা অনুমান করাই যায়। প্রিমিয়ার লিগে টানা দুইটি মৌসুম আট নাম্বারে থেকে শেষ করা আর্সেনালের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন দলটির ম্যানেজার আর্টেটা। নিজের পরিকল্পনার উপরে ভক্তদের আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু আস্থা তো তখনই টিকে থাকে, যখন প্রতিদান মেলে। আর্টেটা যে দিতে পারছেননা সেটাও। টানা দুইবার আট নাম্বারে থেকে শেষ করে এবারের মৌসুমটাও শুরু করলেন হার দিয়ে।
নতুন মৌসুমের আর্সেনাল দলের খেলাতেও দেখা মেলেনি উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন। অসুস্থতার কারণে প্রথম ম্যাচের দলে ছিল না পিয়েরে, অ্যামেরিক আউবামেয়াং এবং আলেকজান্দ্রে লাকাজেটের মতো খেলোয়াড়রা। কিন্তু ম্যাচ হারার পরে এটা কোনো অজুহাত হতেই পারে না।
“আমাদের যেই দলটা খেলেছে তারা প্রত্যেকেই দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে সক্ষম। ম্যাচের ফলাফলটা অন্যরকমও হতে পারত। আমরা জানি আমরা কি করতে চেয়েছিলাম। আমাদের শক্তির জায়গা এবং আমাদের দুর্বলতাগুলো সম্পর্কেও আমরা অবগত। আমরা জানি, আজকের ম্যাচে নতুন কিছুই ছিলনা। তবে আমি আশা হারাচ্ছি না। খেলোয়াড়দের থেকে তাদের সেরাটা এবং ম্যাচে জেতার উপায়টা খুব দ্রুত আমাদের খুঁজে নিতে হবে” -ম্যাচশেষে বলেছেন আর্টেটা
খুব দুঃখজনক একটা ব্যাপার হচ্ছে, আর্সেনাল প্রস্তুতির জন্য বেশ সময় পেয়েছে; কিন্তু তারা সময়টাকে খুব ভালোমতো কাজে লাগাতে পারেনি; যেখানে তারা জানতো প্রিমিয়ার লিগ কত বড় আসর। আর্সেনালের গত মৌসুমের সমস্যাগুলো এই মৌসুমের শুরুতেও লক্ষ্য করা গেছে; আক্রমনভাগে নেই ধাঁর, বিপক্ষ দলের আক্রমণকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য নেই দুর্দান্ত রক্ষণভাগ। মার্টিন ওডেগার্ড সঠিক সময়ে যদি রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ফিরেও, তবুও আর্সেনালকে খেলে ফেলতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এরমধ্যে চেলসি এবং ম্যানচেষ্টার সিটির সাথে ম্যাচ দুটি তো আছেই।
আর্টেটার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তার দল যেভাবে খেলছে, তাতে জয়ের কাছাকাছি পৌছানোটাও কঠিন হয়ে যাবে। এটা স্বীকার করেছেন তিনি নিজেও; যা গত মৌসুমেও দেখা গেছে, আর দেখা গেছে শুক্রবার রাত্রেও। পুরো ম্যাচে বল আর্সেনালের পায়ে বেশি থাকলেও, পায়নি গোলের দেখা। ম্যাচ শেষে তারা সেটাই পেয়েছে এইমুহুর্তে তারা যেটার যোগ্য, “কিছুই নাহ”। কমিউনিটি স্টেডিয়ামে প্রায় ১৭০০০ দর্শকের সামনে শুক্রবার ২-০ গোলে হেরেছে আর্টেটার আর্সেনাল; ম্যাচের ২২ এবং ৭৩ মিনিটে গোল করে ব্রেনফোর্ডকে জয় এনে দিয়েছেন সার্জিও কানিওস এবং ক্রিস্টিয়ান নরগার্ড। ম্যাচ শেষে উল্লাসে মেতে উঠে পুরো স্টেডিয়াম, ব্রেনফোর্ডের এই জয় যে তাদের জন্য রুপকথার চেয়ে কোনো অংশেই কম না।
“এই মুহুর্তটা অসাধারণ। এখানকার কেউই এই মুহুর্তটাকে ভুলবে না। এরকম ঐতিহাসিক একটা মুহুর্তের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত” – ম্যাচ শেষে বলেছেন ব্রেনফোর্ড ম্যানেজার থমাস ফ্রাঙ্ক
টানা দুইটি মৌসুম আট নাম্বারে থেকে শেষ করার পরেও কিছুই বদলায়নি। দ্রুতই সমাধান খুঁজে বের করতে না পারলে আর্সেনালকে যে ভুগতে হবে এই মৌসুমেও, আর্টেটাসহ পুরো আর্সেনাল দলকেই যে শুনতে হবে দর্শকদের দুয়ো সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। নতুন মৌসুম, অথচ তবুও পুরোনো আর্সেনাল!