ভারতীয় ক্রিকেটে চলছে টালমাটাল অবস্থা। গুঞ্জনকে সত্যি করে বিশ্বকাপের পরই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভিরাট কোহলি। ‘কারণ’ হিসেবে বলেছেন নিজের ওপর থেকে বাড়তি কাজের বোঝা নামানো।
তবে সত্যিই কি সেটিই আসল কারণ? কারণ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাদে তো ভারত টি-টোয়েন্টিই খেলবে হাতেগোনা! এমন কি বাড়তি চাপ পড়তো ‘ক্যাপ্টেন কোহলি’র ঘাড়ে? তো কেন এই ‘অজুহাতে’ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত?
গুঞ্জন কিন্তু বলছে অন্য কথা! ভারতীয় গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় সংগঠন প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) ‘অভ্যন্তরীণ’ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত অস্ট্রেলিয়া সফরের পর থেকে নাকি বোর্ডের সাথেও নানান বিষয়ে কোহলির দূরত্ব গড়ে উঠছিল; এমনকি সতীর্থদের সাথেও আগের সেই সম্পর্কটা নাকি নষ্ট করে ফেলছিলেন ভিরাট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলেই নাকি কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করতে একপ্রকার ‘বাধ্যই’ করা হত বোর্ড থেকে; এমনকি তাঁকে অব্যাহতি নিতে হতে পারতো সাদা বলের (টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে উভয়) অধিনায়কত্ব থেকেই। এবং এসম্পর্কে কোহলিও নাকি ছিলেন ওয়াকিবহাল।
With dressing room drifting away, @imVkohli quits T20 captaincy but it might not safeguard 50-over leadership
Read: https://t.co/PnTy0hVMAc pic.twitter.com/hyffiPC9kr
— TOI Sports (@toisports) September 16, 2021
“ভিরাট খুব ভালো করে জানত যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো না করলে তাঁর কাছ থেকে সাদা বলের অধিনায়কত্ব চিরতরেই কেড়ে নেওয়া হবে। পদত্যাগের ঘোষণাটা দিয়ে সে শুধু ভাব দেখিয়েছে যে, সে নিজে থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”- বলেছেন এই কর্মকর্তা।
পিটিআই এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্প্রতি নাকি বোর্ডের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সহ-অধিনায়ক পদ থেকে রোহিত শর্মাকে সরিয়ে যথাক্রমে লোকেশ রাহুল ও রিশভ পান্থকে বসাতে আবেদন করেছিলেন কোহলি। বোর্ড সেই আবেদন কানে তোলেনি।
একই গণমাধ্যমকে সাবেক একজন ভারতীয় ক্রিকেটারও জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমে শ্রদ্ধার জায়গাটা নাকি দ্রুত হারাচ্ছিলেন ভিরাট। সতীর্থ খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট এমনকি বোর্ডেও নাকি ভিরাটের আগের সেই ‘প্রভাব’ আর নেই। এবং দোষটা নাকি ভিরাটের নিজেরই।
“ভিরাটের মূল সমস্যা হল, তাঁর সাথে কথা বলা খুব কঠিন! এমএসের (ধোনি)র সময় আমরা দেখতাম তাঁর রুমের দরজা সতীর্থদের জন্য সবসময় খোলা থাকতো। যে কেউ ঢুকতে পারতো, কথা বলতে পারতো, প্লেস্টেশনে গেম খেলতে পারতো। কিন্তু কোহলি এমন নয়, সে মাঠের বাইরে একেবারেই সতীর্থদের নাগালের বাইরে আবদ্ধ জীবনযাপন করে”- বলেছেন এই সাবেক ক্রিকেটার।
বরং, অনুমিতভাবেই টি-টোয়েন্টিতে তাঁর খালি চেয়ারে যিনি বসতে যাচ্ছেন, সেই রোহিত শর্মাই নাকি জুনিয়রদের কাছে অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয়। রোহিতের নেতৃত্বগুণকে ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সাথেও তুলনা করেছেন এই সাবেক ক্রিকেটার।
“রোহিতের মধ্যে ধোনির ছায়া আছে। সে জুনিয়রদের বাইরে খেতে নিয়ে যায়, তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে, তাদের সাহস দিয়ে পিঠ চাপড়ে দেয়।”
কোহলির ওয়ানডে ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব যে ঝুঁকির মুখে আছে, এমনটা দাবি করেছেন এই সাবেক ক্রিকেটারও। তার পেছনে যুক্তিও দেখিয়েছেন তিনি।
“খেয়াল করবেন, সৌরভ (বিসিসিআই সভাপতি) ও জয় (সেক্রেটারী) কিন্তু ভিরাটকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কিন্তু একবারও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেননি যে তাঁরা তাকে ২০২৩ বিশ্বকাপে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চান, সুতরাং ২০২৩ অব্দি তিনি ওয়ানডে অধিনায়কও থাকবেন কিনা সে বিষয়ে কিন্তু কোন উপসংহার টানা যাচ্ছে না”- বলেছেন এই সাবেক।
সবমিলিয়ে, ভারতীয় ক্রিকেটে কোহলি-যুগের অবসানের ধ্বনি কি শোনা যাচ্ছে?