শ্রীলংকান ইনিংসের ২৭তম ওভারের তৃতীয় বল। অফস্ট্যাম্পের বাইরে পরে তীক্ষ্ণ বাঁক নিয়ে ভেতরের দিকে আসতে থাকা তাইজুলের বলটা ব্যাকফুটে গিয়ে পয়েন্টের দিকে খেলে একটা রান নিলেন দিমুথ করুনারত্নে। উইকেটের পেছন থেকে লিটন দাশ তখন তাইজুলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “এইটা ভালো মারছে। ভাল বল ভালো মারছে। তুমি জায়গা ছাইড়ো না”
এই যে ভালো বলে ভালো শট খেলা বা ভালো ব্যাটিং, কৃতিত্বটা অবশ্যই শ্রীলংকার দুই ওপেনারের। ভাল বলের সংজ্ঞা যদি সার্বজনীন বিবেচনায় প্রায় একই রকম হয়, তাহলে নি:সন্দেহে বলা যায় পাল্লেকেলে টেস্টের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে “শতকরা তিরিশভাগ ভাল বল করেনি বাংলাদেশের পেসাররা”। বিচ্ছিন্নভাবে ওভারে একটা বা দুইটা ভাল বল হলেও টানা ভাল জায়গায় বল করে, রান আটকে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার মতো বোলিং হয়নি। উদাহরণ দেয়া যাক।
দ্বিতীয় সেশনের তৃতীয় এবং শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ১১তম ওভারে বল করছিলেন ইবাদত হোসেন। তৃতীয় বলটা ছিলো অফস্ট্যাম্পের অন্ততো দেড় ফুট বাইরে, শর্ট বল। থার্ডম্যান না থাকায় ওই বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হবার সম্ভাবনা ছিলো সর্ব্বোচ্চ দশভাগ। থিরিমান্নেও নিশ্চিন্ত মনেই সপাটে চালিয়েছিলেন। ব্যাটের কাঁনায় লেগে থার্ডম্যান দিয়ে চার। পরের বল লেগ স্ট্যাম্পের এক ফুট বাইরে, উইকেট কিপার লিটন নড়তেও পারেননি, ফাইন লেগ দিয়ে চার। ওভারের শেষ বলটা ইবাদত করেছিলেন লেগ মিডলে ফুলটস, মিড উইকেট দিয়ে চার। ইবাদতের ওই ওভার একটা স্পষ্ট বার্তা ছিলো, আর যাই হোক; টেস্টে উইকেট পেতে বা ব্যাটসম্যানকে আউট হতে বাধ্য করতে যে পরিকল্পনা দরকার, বাংলাদেশএর পেসাররা সেটা রপ্তই করতে পারেনি। এই সমালোচনার তীর্যক শব্দগুলো পরের ওভারেই আরো বেশি তিক্ত করেছেন তাসকিন। প্রথম বলে চার, হাফভলি বলে। চতুর্থ বলে আরেকটা চার, লেগবাই।
কি বুঝলেন? পেস বোলার এক ওভারে একটা বল করে শর্ট, একটা হাফভলি, দুটো লেগ সাইডে। একটা বল অফস্ট্যাম্পের বাইরে আরেকটা কি জানি কি!! ইবাদত আর তাসকিনের বোলিং কেবল তাদের দুজনের দুই ওভারের বোলিংয়ের ছবি না বরং বাংলাদেশের পেসারদের পারর্ফম্যান্সের মোটামুটি একটা ছবি। তুলনামূলকভাবে তাসকিন আহমেদ বাকি দুই পেসারের চাইতে ভাল বল করলেও, কোন রকম চাপ ছাড়াই ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে একশো রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন করুনারত্নে আর থিরিমান্নে। অর্ধশত লাহিরু থিরিমান্নের নামের পাশে, চুরানব্বই বলে।
তুলনামূলকভাবে স্পিনাররা ভালো করেছেন। গড়ে ৩.৬ ডিগ্রি টার্ন পেয়েছেন তাইজুল, তার চেয়ে একটু কম মিরাজ; তার গড় টার্ন ছিলো ৩.১ ডিগ্রি। ভাল জায়গায় বল করে রান আটকেছেন, টার্ন আর বাউন্সে কিছু সময়ে ব্যাটসম্যানদের ভুল করতে বাধ্যও করেছেন। ৩৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অফস্ট্যাম্পের বাইরের দারুণ লেন্থ থেকে বাঁক নেয়া বলে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন ফিফটি করা লাহিরু থিরিমান্নে। এলবিডব্লিউয়ের জোড়ালো আপিল নাকচ। পরে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেল বল লাগতো স্ট্যাম্পে অথচ বাংলাদেশ রিভিউ নেয়নি, ৩ রিভিউয়ের সবই হাতে আছে!!
তখন আবারো প্রশ্ন জাগলো, উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে লিটন কি কিছুই বোঝেন না!! রিভিউ নিতে উইকেটকিপারের ভূমিকা অনেক গূরুত্বপূর্ণ আর এই কাজটাতে লিটনের দায়িত্ববোধ এবং সামর্থ্য বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। সমালোচনা হয়েছে কমেন্ট্রি বক্সে, রিভিউ নেয়ার ক্ষেত্রে লিটনের সাম্প্রতিক অদক্ষতার উদাহরণও টেনেছেন বিশ্লেষকরা। তবে শেষ পর্যন্ত উইকেট পরেছে। মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন ৫৮ করা থিরিমান্নে। চা বিরতিতে লঙ্কানদের রান এক উইকেট একশো চোদ্দ।