ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে আসার পর প্রথমবার ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ক্লাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোনালদো তুলে ধরেছেন এই ক্লাবকে ঘিরে তাঁর স্মৃতিমালা, সাবেক কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সাথে তার সম্পর্ক, নতুন কোচ ওলে গানার সুলশারের কাছে তার প্রত্যাশা, ইউনাইটেডের সমর্থকদের ভূয়সী প্রশংসা এবং ইউনাইটেডের হয়ে এই দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাঁর লক্ষ্যের কথা।
ঘরের ছেলে ১২ বছর পর ঘরে ফিরেছে! ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আবারো ফিরেছেন সেই ক্লাবে যা তাঁকে মাদেইরার অখ্যাত কিশোর থেকে বানিয়েছিল বিশ্বতারকা, যে ক্লাবের হয়ে তিনি জিতেছিলেন প্রথম ব্যালন ডি’অর, তার প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। যে সমর্থকরা এখনো যাঁর নামে কোরাস তুলে গান করে। এখনো নতুন কোন খেলোয়াড়কে যাঁর সঙ্গে তুলনা করা হয়। বিশ্বজুড়ে ইউনাইটেডের সমর্থকদের মনে তাই খুশির জোয়ার!
সম্প্রতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের হয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টুয়ার্ট গার্ডেনার। সেখানে জানিয়েছেন এই ক্লাবের হয়ে আবারো মাঠে নামতে নাকি তর সইছে না ৫বারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর। তাঁর মনে হচ্ছে তিনি ঘরেই ফিরে এসেছেন।
“এই ক্লাবটির সাথে আমার খুবই চমৎকার ইতিহাস রয়েছে। ১৮ বছর বয়সে আমি প্রথম এই ক্লাবে এসেছিলাম। এখন ১২ বছর পর আবারো এখানে ফিরতে পেরে আমি খুবই খুশি। ক্লাবের জার্সিতে আবারো মাঠে নামার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি“
শোনা যায় তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্তের পেছনে বড় অবদান রেখেছিল সাবেক কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সাথে তাঁর একটি কথোপকথন। কতোটা ভূমিকা রেখেছিলেন স্যার অ্যালেক্স?
“১৮ বছর বয়সে আমার এই ক্লাবে আসার পেছনে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনই মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। ফুটবল জগতে উনি আমার বাবার মতন। উনার কাছে অনেক শিখেছি, অনেক কিছুতে উনার সাহায্য পেয়েছি। অবশ্যই উনি এবারও আমার প্রত্যাবর্তনের পেছনে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। উনার আর আমার মধ্যে যে সম্পর্ক, সেটাই ছিল আমার আবারো ইউনাইটেডে ফিরে আসার সিদ্ধান্তের পেছনে মূল চাবিকাঠি।“
ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে এই সিদ্ধান্ত নেবার যৌক্তিকতা সম্পর্কেও নিঃসন্দেহ ৩৬ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ তারকা।
“আমার ধারণা এই মুহুর্তে এটাই সেরা সিদ্ধান্ত। জুভেন্তাস থেকে ম্যানচেস্টারে আসাটা আমার জীবনের নতুন আরেকটি অধ্যায়, যা নিয়ে আমি ভীষণ খুশি। আমি আবারো নতুন করে শুরু করতে চাই, এই ক্লাবের হয়ে ট্রফি জিততে চাই, নতুন ইতিহাস গড়তে চাই।“
তাঁর একসময়ের সতীর্থ এখন ইউনাইটেডে তাঁর কোচ। ওলে গানার সুলশারের এই নতুন ইউনাইটেডে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে কতোটুকু আত্মবিশ্বাসী রোনালদো?
জানিয়েছেন, কোচের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজের শতভাগ ঢেলে দিতে বরাবরের মত এবারো কার্পণ্য করবেন না তিনি।
“আমাদের কথা হয়েছে, তবে সামনাসামনি নয়। আমাদের অবশ্যই একসাথে বসতে হবে, আমার কাছে তার প্রত্যাশা কি সেটা জানার জন্য। আমরা অতীতে সতীর্থ হিসেবে মাঠে খেলেছি, কিন্তু এখন আমাদের ভূমিকা ভিন্ন। আমি এখনও খেলোয়াড় কিন্তু সে এখন কোচ। যদিও আমাদের সম্পর্ক এখনো খুবই ভালো, এবং যেহেতু আমি এই ক্লাবকে সাফল্য এনে দিতেই এসেছি, তাই কোচ হিসেবে সে যেভাবে চায় সেভাবেই খেলার জন্য আমি রাজি”
সবশেষে ইউনাইটেডের সমর্থকদের প্রতি রোনালদো জানিয়েছেন তাঁর কৃতজ্ঞতা।
“সমর্থকরাই ফুটবলের সবকিছু। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দর্শকরা যে কত অসাধারণ, তা তো আমার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে। তাঁরা এখনও আমার নামে গান বাঁধে, গান গায়। এটা যে আমাকে কতটা সুখানুভূতি দেয় তা বলা বাহুল্য। আমি আবারো মাঠে নামতে চাই, তাঁদের সামনে খেলতে চাই, নিজের সেরাটা দিতে চাই গোল করতে চাই, অ্যাসিস্ট করতে চাই, ম্যাচ জিততে চাই। তাঁদের সাথে আবারো দেখা করার জন্য আমি মুখিয়ে রয়েছি“