ফেব্রুয়ারী ২০২০ থেকে জুলাই ২০২১, মাঝে কেটে গেছে ষোল মাস। সময় বদলেছে, বদলেছে পরিস্থিতিও। ষোল মাস আগে যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে টেষ্টের জন্য অচল বলে বাদ দেওয়া হয়েছিল, সেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেষ্টে। শুধু ফিরেছেন বললে ভুল হবে, হারারেতে রীতিমতো লিখেছেন প্রত্যাবর্তনের গল্প। ষোল মাস পর রিয়াদ ফিরেছেন, সেঞ্চুরি করেই ফিরেছেন।
রাওয়ালপিন্ডি টেষ্টে্র এক ইনিংসে ২৫ আরেক ইনিংসে শুন্য, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের টেষ্ট ক্যারিয়ারের যবনিকা পাত একপ্রকার হয়েই গিয়েছিল। সেই টেষ্টের পর বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কোনো রাগঢাক ছাড়াই ঘোষনা দেন মাহমুদুল্লাহকে টেষ্ট দলে চাননা তিনি, এমনকি মাহমুদুল্লাহকে টেষ্টের জন্য অচল বলেও ঘোষনা করেন। সেই মাহমুদুল্লাহ আবার ফিরেছেন, নিজের মতোই ফিরেছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই টেষ্টের চার টেষ্ট আগেই নিউজিল্যান্ডে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেছিলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। হ্যামিল্টন টেষ্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১৪৬। সিরিজের পরের টেষ্ট ছিল ওয়েলিংটনে, সেই টেষ্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন অনবদ্য ৬৭। তার পরেই যেন কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পরের তিন টেষ্টে ছিলেন নিজের ছাঁয়া হয়ে। আফগানিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে তিন টেষ্টই বাংলাদেশ হারে ইনিংস ব্যবধানে। ঐ তিন টেষ্টে রিয়াদের রান যথাক্রমে ৭,৭,১০,১৫,৬,৩৯*। ৬ ইনিংসে প্রায় ১৭ গড়ে রিয়াদের রান ৮৪।
হয়তো আন্তর্জাতিক মান বিবেচনায় রিয়াদের সেই পারফর্ম্যান্স মানসম্মত নয়, হয়তো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে রিয়াদের কাছ থেকে আরো ভালো কিছু প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট। টেষ্ট ক্রিকেটে রিয়াদ ব্যাটিং করেন অনেকটা লোয়ার-মিডল অর্ডার পজিশনে, তবে বাংলাদেশ কী সেই পজিশনে আদৌ এমন কোন ব্যাটসম্যান তৈরী করতে পেরেছে যিনি ভরসা দিতে পারেন? বাংলাদেশ কী এমন ব্যাটসম্যান আদৌ তৈরী করতে পেরেছে যিনি নিয়মিত বড় রান করবেন? উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে পাল্টা প্রশ্ন, মাত্র তিন ম্যাচের পারফর্ম্যান্স দিয়েই কী মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে একেবারে ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব? আর উত্তর যদি ‘হ্যা’ হয়, তবে সেই উত্তরের সঙ্গে পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখতে চাইবে যেকেউ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টেষ্ট পারফর্ম্যান্স সেই পরিসংখ্যান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে।
মুখের কথায় বাংলাদেশ ক্রিকেট তো অনেক এগিয়ে, কাজের বেলায় যে বেশ পিছিয়ে সেটাই স্পষ্ট এই ঘটনায়। তা নাহলে কেন ষোল মাস আগে যে ক্রিকেটারকে অচল বলে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাকেই আবার কেন ফেরানো হবে? তাও আবার দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল এবং মুশফিকুর রহিমের ‘তথাকথিত’ ব্যাক-আপ হিসেবে। যে ব্যাটসম্যান দলের সেরা দুই খেলোয়াড়ের ব্যাক-আপ হতে পারেন, তিনি কি মূল দলের প্রথম সারির পছন্দ হওয়ার যোগ্যতা রাখেননা?
বিশ্বের কোনো দেশে কী মাত্র তিন-চার ম্যাচের পারফর্ম্যান্সে কোনো সিনিয়র ক্রিকেটারকে ছুঁড়ে ফেলা হয়? মোটা দাগে বললে রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে মাত্র একটা শটের জন্য। বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেছিলেন নাসিম শাহ, নাসিমের সেই হ্যাট্রিক এসেছিল মাহমুদুল্লাহকে আউট করে। নাসিমের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন তিনি। সেটাই মূলত কাল হয়ে দাঁড়ায় রিয়াদের জন্য।
আফগানিস্থানের ম্যাচের আগের নয় ইনিংসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছিলেন দুর্দান্ত। তখন টেষ্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে তুখোর ফর্মে ছিলেন রিয়াদ। আফগানিস্তানের ঐ ম্যাচের আগে শেষ নয় ইনিংসে রিয়াদের মোট রান ৫৫৫, এই রান তিনি তুলেছিলেন প্রায় ৭০ গড়ে। শেষ নয় ইনিংসে প্রায় ৭০ গড়ে রান করা একজন ব্যাটসম্যানকে মাত্র তিন ম্যাচের পারফর্ম্যান্স দিয়ে দল থেকে বাদ দেওয়া কী অবিচার নয়? মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাছে হয়তো সেটা অবিচারই। যে অবিচারের যোগ্য জবাব দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন, দলকে দারুন সংগ্রহ এনে দিয়েছেন।