৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

রিয়াল বিবর্ণতায় ইস্তাম্বুলে ‘অল ইংলিশ’ ফাইনাল

- Advertisement -

রিয়াল মাদ্রিদ জয় ছাড়া সবই জিতল। সংবাদে এমন শিরোনামও হয়তো দেওয়া যেতো, আলফ্রেদো দি স্তিফানো স্টেডিয়ামে বৃষ্টিভেজা প্রথম লেগের লড়াইয়ের আমেজ যদি স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে কিছুটা হলেও ফিরতো। তবে মাঠের দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। জয়ের জন্য যে গোল প্রয়োজন সেটাই করতে পারেনি অল হোয়াইটস। ফলাফল সেমিফাইনাল থেকেই নির্লিপ্ত বিদায়। তুরস্কের ইস্তাম্বুল এখন ‘অল ইংলিশ’ ফাইনালের অপেক্ষায়।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চেলসি-রিয়াল মাদ্রিদের সেমিফাইনালের প্রথম লেগ শেষ হয়েছিল সমতায়। ড্রতেই এগিয়ে থাকা যায়। চেলসি এগিয়েই ছিল। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে গোল টুখেলের দলের জন্য ছিল অনুপ্রেরণা। মাঠে নামার আগেই আঘাত, রিয়াল মাদ্রিদের টিম বাসে বোতল ছুঁড়ে মারে চেলসি সমর্থকেরা। ম্যাচের উত্তাপ বাড়তে পারতো, তবে তেমন কিছুই হয়নি।

ছবিঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ ইন্টারনেট

চেলসির ৩-৪-২-১ ফর্মেশনের বিপরীতে রিয়াল মাঠে নামে তাদের ট্রেডমার্ক ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। লড়াইটা শুধুই দুদলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, দুই মাস্টার মাইন্ড কোচ জিনেদিন জিদান আর টুখেল ছিলেন আলোচনায়। সার্জিও রামোস ফিরেছেন, আগেরদিন তুষারাচ্ছন্ন মাঠে খেলছিল সিটি- পিএসজি, বৃহস্পতিবার পরিষ্কার আকাশের মতো আউটফিল্ডও ছিল চমৎকার। শুরুতেই মুহুর্মুহু আক্রমণে মাদ্রিদ ডিফেন্সের পরীক্ষা নেয় চেলসি। দশম মিনিটে কান্তের দূরপাল্লার শট রুখে দেন থিবো কোর্তোয়া। সকাল দেখেই নাকি বোঝা যায় দিন কেমন যাবে। ম্যাচের চৌদ্দতম মিনিটে জর্জিনহো যখন হলুদ কার্ড দেখলেন, তখনই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল, ম্যাচটা যথেষ্ট উত্তেজনা বয়ে আনবে।

ম্যাচের ১৮তম মিনিটে গোলের সুযোগ আসে চেলসির সামনে , টিমো ওয়ার্নার বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে সেই আরাধ্য গোল বাতিল করেন রেফারি। আট মিনিট পর ম্যাচের প্রথম সত্যিকারের সুযোগ পায় রিয়াল মাদ্রিদ, বক্সের বাইরে থেকে শট করিম বেনজেমার। কিন্তু গোলকিপার এদুয়ার্দ মেন্দির দক্ষতায় রক্ষা পায় চেলসি। ফুটবল’তো কাউন্টার অ্যাটাকের খেলা। মিনিট দুই পরেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই গোলের দেখা পায় চেলসি। কান্তের পাস থেকে কাইল হার্ভার্টজ ফ্লিক বারে লেগে ফিরে এলেও টিমো ওয়ার্নার এবার আর অফসাইডের ফাঁদে পড়েননি। মাথা ছোঁয়াতে হয়েছে শুধু, বল খুঁজে নিয়েছে জালের ঠিকানা।

ছবিঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ ইন্টারনেট

প্রথম লেগের পুনরাবৃত্তি হতে পারতো দ্বিতীয় লেগেও। সমতা ফেরানোর সুযোগ ছিল করিম বেনজেমার সামনে, কিন্তু ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে তার হেড কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন মেন্দি। সেই কর্নারেই চেলসি ডিবক্সের মধ্যে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস। ম্যাচে কার্ড দেখানো হয়েছে, কিন্তু গোলই ছিল অধরা। আর প্রায় ষাট শতাংশ বল দখলে রেখেও গোলবিহীন অবস্থায় বিরতিতে যায় সফরতরা।

হার্ভার্টজের পোস্ট ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছেই না। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে তার হেড ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হলে দ্বিতীয়বারের মতো গোলবঞ্চিত হন এই জার্মান মিডফিল্ডার। মিনিট পাঁচেক পরে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মাউন্ট, টিমো ওয়ার্নারের ব্যাক হিল থেকে বল পেয়ে ওয়ান টু ওয়ান পজিশন থাকার পরেও ব্যর্থ। চেলসি বসের মাথায় হাত, মিনিট পাঁচেক পর আবারও চেলসির ওয়ান টু ওয়ান পজিশন, আবারও মিস। মিনিট ষাটেক পর ট্যাকটিক্সে পরিবর্তন আনেন জিনেদিন জিদান, আক্রমণে ধার বাড়াতে করেন জোড়া পরিবর্তন। গোলকিপারকে একা পেলেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে চেলসি খেলোয়াড়রা। এবার হতাশার নাম কান্তে, পারলেন না। বাকি সময় শত চেষ্টা করেও গোলমুখ খুলতে ব্যর্থ রিয়াল মাদ্রিদ।

ছবিঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ ইন্টারনেট

মাঠে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। সময় যত গড়িয়েছে অল হোয়াইটদের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে প্রতিটা ফাউল আর হলুদ কার্ডে। প্রতিবার চেলসি খেলোয়াড়রা যখন বল পেয়েছে, প্রতি আক্রমণে তটস্থ করে রেখেছে রিয়াল রক্ষণ। ফলাফল ২-০ গোলে জয়।

দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার সুযোগ চেলসির সামনে, দীর্ঘ নয় বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ইংলিশ লিগের দলটা। চেলসির ঘোর দুঃসময়ে যে সমর্থক পাশে ছিল এ জয় হয়তো তারই প্রাপ্য। চেলসি যদি হতো বনলতা সেন, সেই সমর্থক হতেন জীবনানন্দ দাশ। তার অন্তরে বয়ে যাওয়া প্রশান্তির ঢেউয়ে তিনি আনমনে বলে উঠতেন ‘আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো বনলতা সেন।‘

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img