মৃত্যু চিরসত্য, তবে মাঝেমধ্যে ওই চিরসত্য শব্দটার স্পর্শকাতরতা ছাড়িয়ে যায় সব ঠিক-বেঠিক, যদি-কিন্তুর হিসেব। গতকালের ইউরোতে ফিনল্যান্ড-ডেনমার্ক ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ থাকা মানুষ খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। অথচ মাঠে সেই ম্যাচটাই রূপ নিলো মরণখেলায়। যার লিড রোল প্লে করলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন, গল্পের শেষে তিনিই নায়ক। তবে সেই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু আবার, দ্য গ্রেটেস্ট গেইম অন আর্থ, ফুটবল। এরিকসেন শঙ্কা থেকে বেরিয়েছেন, তবে সমর্থক-সতীর্থের ভালোবাসা থেকে না। দিনের আরেক ম্যাচে রাশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বেলজিয়াম, গোল করার পর দলটির স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু ক্যামেরার সামনে গিয়ে বলতে থাকেন, ‘ক্রিস, ক্রিস, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
বেলজিয়াম থেকে ডেনমার্কের দূরত্ব হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি। তবে এই দুরত্ব জয় হয়েছে ফুটবলে, দুজনেই যে খেলেন সিরি ‘এ’-র দল ইন্টার মিলানে। শনিবার ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরোর ম্যাচ চলাকালে হঠাৎই মাঠে পড়ে যান এরিকসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে, মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। ছিল মৃত্যুর গুঞ্জনও। তবে পরবর্তীতে জানা যায় সুস্থ আছেন ডেনমার্কের নাম্বার টেন। প্রবল খড়ার পর বৃষ্টি যেমন, ওই খবরে স্বস্তিও হয়তো ছিল তেমনি। এরিকসনের ছিলেন প্রার্থনায়, প্রায় পুরোটা সময়।
ম্যাচের ১০ মিনিটে দ্রিস মের্টেনসের একটি পাস রুশ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বক্সের মধ্যে থাকা লুকাকুর পায়ের কাছে পড়লে স্কোরশিটে নাম তুলতে ভুল করেননি তিনি। ম্যাচে বেলজিয়াম জয় পেয়েছে ৩-০ গোলে। ম্যাচ শেষে অবশ্য জানিয়েছেন, মাঠে সময়টার তাদের জন্য মোটেই সহজ, এরিসনের ঘটনা তাদের খুব গাঢ়ভাবেই স্পর্শ করেছিল। এমনকি ম্যাচে নিজের পারফরম্যান্স এরিকসেনকে উৎসর্গ করেছেন লুকাকু।
‘আমি কেঁদেছিলাম, আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়ছিলাম। তার সাথে আমি পরিবারের থেকেও বেশি সময় কাটিয়েছি। আশা করি সে ঠিকঠাক আছে। আমি আমার আজকের (গতকাল রাত) পারফরম্যান্স তাকে উৎসর্গ করলাম।’
এরিকসেনের শারীরিক অবস্থার উন্নতির খবরে আবার মাঠে গড়িয়েছিল ফিনল্যান্ড-ডেনমার্ক ম্যাচ। গোল ব্যবধানে হেরেছে ডেনমার্ক, তবে জিতেছেন এরিকসেন, জিতছে ফুটবল। মাঝেমধ্যে হিসেব-নিকেশের আসলে মূল্য থাকে না, তখন এরিকসনের মতো চরিত্ররাই হয়ে ওঠেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।