আগেরদিন প্রেস কনফারেন্সে এসে মুশফিকুর রহিম বলে গিয়েছিলেন, “যারা সমালোচনা করেন তাদের আয়নায় মুখ দেখা উচিত। কারণ তারা বাংলাদেশের হয়ে খেলেন না, আমরাই খেলি।”
কথা সত্যি, তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর ইংল্যান্ডের সাথে যেভাবে হারলো আজ বাংলাদেশ, নিজেদের মুখ কি ম্যাচশেষে আয়নায় দেখতে পারবেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েররা? হয়তো পারবেন, তবে দেশছাড়ার আগে যা বলে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সেই স্বপ্ন দেখার আয়না কিন্তু ক্রমশ ঘোলাটে হতে শুরু করেছে।
দুইদলের ইতিহাসে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা বলতে গেলে ‘ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে’ই জিতলো ইংল্যান্ড। এক মুহূর্তের জন্য জেতার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তাদের ১২৪ রানে আটকে দিয়ে, সেই রান পরে ইংল্যান্ড তাড়া করেছে ১৪.১ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে।
টসে জিতে আজও ব্যাটিং নেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ওভারেই লিটন দাস মঈন আলীকে দুটি চার মেরে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ‘ফিরে আসা’র ইঙ্গিত।; তবে তা ইঙ্গিত হয়েই থেকে গেছে। পরের ওভারেই মঈন আলীকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৯ রানে। পরের বলেই একই ভুল করেন নাইম শেখ। জোড়া উইকেট নিয়ে মঈন আলীর সামনে চলে আসে ‘হ্যাটট্রিক চান্স’। দুই ওভার পর ক্রিস ওকসরে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আদিল রশিদের অসাধারণ ক্যাচের শিকার হন সাকিব; ফিরে যান ৪ রান করে।
এরপরই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুরু হয় ভুতুড়ে কান্ড। লিয়াম লিভিংস্টোনের নিরীহদর্শন এক বলে রিভার্স সুইপ খেলার ‘শখ’ জাগে মুশফিকুর রহিমের। পায়ে লেগে সেটি চার হয়েও যায়, কিন্তু রিভিউ নিয়ে দেখা যায় এলবিডাব্লিউ হয়েছেন মুশফিক। তাঁর ২৯ রানই অবশ্য হয়ে থেকেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এরপর আফিফ হোসেনকে অদ্ভুত এক কলে রান আউট করান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপরের দুই বলেই আবার নুরুল হাসান সোহানকেও পরপর দুবার রানআউটের শঙ্কায় ফেলেন রিয়াদ! নিজে আউট হয়েছেন ১৯ রানে।
Bangladesh end up with a total of 124/9.
Against a fearsome English batting line-up, will it prove to be enough? #T20WorldCup | #ENGvBAN | https://t.co/lyuqx0NllZ pic.twitter.com/PxsL5eKZvP
— T20 World Cup (@T20WorldCup) October 27, 2021
বাংলাদেশের পক্ষে খানিকটা ‘ইতিবাচকতা’ আসেন ‘স্পিনার’ নাসুম আহমেদ। স্লগ ওভারে হুট করে ব্যাটসম্যান হয়ে যান নাসুম আহমেদ। আদিল রশিদকে এক ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার উড়িয়ে মারেন এই স্পিনার। ৯ বলে করেছেন ১৯ রান। ইনিংস শেষে যখন ফিরছেন, তার নামের পাশে ছিলো ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি।
মাত্র ১২৫ রানের লক্ষ্যে ঠিক যেমন নির্ভার শুরু হওয়া উচিত, ঠিক তেমন শুরুই করেছিলো ইংল্যান্ড। সাকিব আল হাসানকে নতুন বল তুলে দিয়েও কোন লাভ পায়নি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পয়েন্ট দিয়ে সাকিবকে চার মেরেই ইনিংসের সূচনা করেছেন জেসন রয়। এরপর মাত্র ২৯ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি। এরপর নাসুম আহমেদের বলে নাইম শেখকে ক্যাচ দিয়ে ১৮ রানে আউট হন জস বাটলার। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারেই উঠে যায় ৫০ রান।
বাটলার আউট হলেও জেসন রয় ও ডেভিড মালানের ব্যাটে ভালোই আগাতে থাকে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের বোলিং ফিল্ডিংয়ে গা ছাড়া ভাব দেখে মনে হচ্ছিলো ব্যাটিং ইনিংসের পরই ম্যাচ জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে তারা। গোটা ম্যাচে কখনোই মনে হয়নি ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশের বোলিং। বরং আশাভঙ্গ হলে হবেন জেসন রয়, ৩৮ বলে ৬১ করেছেন, তবে ম্যাচ শেষ করে ফিরতে পারলেন না, বিশ্বকাপ অভিষেকে শরিফুল ইসলামের প্রথম উইকেট হিসেবে ফিরে গেছেন ১২.৫ ওভারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (মুশফিক ২৯, রিয়াদ ১৯ নাসুম ১৯; মিলস ৩/২৭, লিভিংস্টোন ২/১৫ )
ইংল্যান্ড: ১৪.১ ওভারে ১২৬/২ (রয় ৬১, মালান ২৮; নাসুম ১/২৬, শরিফুল ১/২৬)