৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

কিছু গল্প হার মানায় কল্পনাকেও…

- Advertisement -

অকল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলা চলছে। বল হাতে বাহাতি পেসার এজাজ প্যাটেল; বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পরিচিত দৃশ্য। নতুন বলে সুইং আদায় করে নিয়ে কতবার যে উইকেট তুলে নিয়েছেন নিজেরও মনে নেই। শুধু বয়সভিত্তিক দলেই নয় এজাজ পেস বল করতেন ঘরোয়া প্রিমিয়ার লিগেও। গল্পটা নাহয় শোনা যাক তার মুখেই!

“সত্যি বলতে, আমি ছিলাম একজন বাহাতি পেসার। প্রিমিয়ারে এবং অকল্যান্ডের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলার সময়েও আমি পেস বলই করতাম। কিন্তু, হঠাৎ একদিন মনে হলো ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে সামনে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবো না। আমার পরিবর্তন দরকার।”

আট বছর বয়সে ছেড়েছেন মুম্বাই

এলাকায় মাঝে মাঝেই ক্রিকেট খেলতে যেতেন এজাজ। এলাকার এমনই এক ক্রিকেট ম্যাচে বল হাতে ইনিংসের সূচনা করার জন্য রানআপ নিচ্ছিলেন তিনি। আচমকাই থেমে গেলেন, এবং পেছনে ফিরে শুরু করলেন স্পিন। জন্ম হলো এক স্পিনারের, ‘এজাজ প্যাটেল’ নাম।

“শহরের এক ক্রিকেট ম্যাচে আমি পেস বল করতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু, কি মনে করে যেনো আমি পেছনে ফিরে আসি, এবং স্পিন করা শুরু করি। বল করার পর দেখলাম স্পিনে আমি বেশি উইকেট নিতে পারছি, সুবিধা করতে পারছি। আমার কাছে কিছুটা অন্যরকম মনে হতে লাগল ব্যাপারটা  এবং মুহুর্তেই আমি স্পিন বোলিংটা উপভোগ করতে শুরু করলাম।”

পেসার এজাজকে স্পিনার হতে সাহায্য করেছেন দীপক প্যাটেল

স্পিন বল করবেন সেটা ভাবলেও, এজাজকে স্পিনার হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন সাবেক কিউই স্পিনার দীপক প্যাটেল।  ২১ বছর বয়সে জন্ম হলো এক স্পিনারের, নয় বছর পর যে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছে নিউজিল্যান্ডের হয়ে। এজাজ কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি স্পিনার হয়ে খেলবেন কিউইদের হয়ে, অথচ সত্যটা কি রোমাঞ্চকর হয়েই না ধরা দিলো!

“আমার গা এখনও শিউরে ওঠে। যদি আপনি আমাকে বলেন আমি কখনো স্পিনার হিসেবে কিউইদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ভেবেছি কি না, শুনলে আপনিও হাসবেন। এটা অদ্ভুত কিন্তু মজার ছিল।”

গল্পের শেষ এখানেই নয়, আসল টুইস্ট তো এখনও বাকি। ১০ টেস্টে ২৯ উইকেট নিয়ে স্পিনার এজাজ অবশেষে পা রেখেছেন মুম্বাইয়ে। সেই মুম্বাইয়ে, যেখানে জন্মেছেন; কেঁটেছে জীবনের প্রথম আটটা বছর। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন সময়েই এসেছেন মুম্বাইয়ে, এবার যখন এলেন তখন যেনো কিছুটা স্মৃতিকাতরই হয়ে গেলেন তিনি।

“অন্যরকম অনুভূতি। আমি নিজেও এটা ভাবছিলাম। অসংখ্যবার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে মুম্বাই এসেছি।  আবার পরবর্তী ছুটিতে মুম্বাইয়ে ফিরে আসার ইচ্ছা নিয়ে নিউজিল্যান্ডেও ফিরে গেছি। তবে, এবারের যাত্রাটা সম্পূর্ণ আলাদা। এবার যে আমি মুম্বাইয়ে এসেছি নিউজিল্যান্ড দলের খেলোয়াড় হয়েই!”

কথিত আছে, ভারতীয়রা অথিতিসেবায় অন্যতম সেরা। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছেন, তার জন্য বিশেষ কিছু তো করা তখনও বাকি মুম্বাইয়ের। ওয়াংখেড়েতে দ্বিতীয় দিনের খেলা চলছে, ভারতের সংগ্রহ ৩২৫। সর্বোচ্চ ১৫০ রান এসেছে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ব্যাট থেকে। ভাবছেন তাহলে অথিতি সেবা হলো কোথায়? ভারতের সবকটি উইকেটই যে নিয়েছেন একজন স্পিনার, ‘এজাজ প্যাটেল’ তার নাম।

যেদিন প্রথমবার কিউইদের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন তার আগের রাতে  ঘুমোতে পারেননি সারারাত। শনিবার তো পেয়ে গেলেন জীবনের সেরা মুহুর্তটারই দেখা, ঘুমটা নিশ্চয়ই আজও হবে না এজাজের। হয়ত সারারাত জেগে জেগে নিজের জীবনের গল্পটাই কল্পনা করে যাবেন। আর হেসে হেসে বলবেন, ‘কিছু গল্প হার মানায় কল্পনাকেও…’

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img