মানুষ স্বপ্ন দেখতে শিখলেই নাকি স্বপ্ন ছোঁয়ার সাহস পায়। সাফল্য যদি হয় দূর আকাশের তারা, তবে আমি সেই তারাই ছুঁতে চাই। এইতো কদিন আগেও তাবিশ খান নামটা ক্রিকেট দুনিয়ায় ছিল একদমই অচেনা। সেই অচেনা, অপরিচিত নামটাই এখন আলোচনার বিষয়বস্তু, ৩৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক্, একজন পেসারের এতোবছর অপেক্ষা সংগ্রহ শেষে অবশেষে স্বপ্নের দেখা পাওয়া, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানো, দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। তাবিশ খানের জার্নিটা কোনো রুপকথার চেয়েও তো কম কিছু নয়। তাবিশের চেয়ে বেশি বয়সে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হয়েছে কেবল আর দুজনের।
স্বপ্ন পূরণের এই গল্পটুকু বাদে ডানহাতি এই পেসারের জীবনটাই ছিল অবহেলা আর আক্ষেপে ভরপুর। পাকিস্তানের মানুষ আর স্বপ্নের শহর করাচি থেকে উঠে আসা তাবিশ খান, অবহেলার জবাব দেয়ার জন্য হাতে ছিল প্রার্থনা, হাতে ছিল বল, সুযোগের অপেক্ষা, প্রায় দুই দশকের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পয়লা টেস্টে একাদশে ছিলেন না, তবে ক্যামেরা ফ্রেম ঠিকই খুঁজে নিয়েছিল অচেনা, অপরিচিত একজন ডমেস্টিক কিংবদন্তিকে। ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে, জিম্বাবুইয়ান ধারাভাষ্যকার বলছিল, ওই সংখ্যাগুলো কিসের জন্য? তার পারফর্ম্যান্স বলে তিনি যেকোনো দলেই সুযোগ পাওয়ার দাবিদার। তাকে কেনো নেওয়া হলো না? কেনো পিসিবি তাকে নিচ্ছে না।
পাকিস্তান ক্রিকেটে অবহেলা আর বঞ্চনার ঘটনা তো নতুন নয়, দলের মধ্যেই শহর কেদ্রিক ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ। যার প্রভাব হয়তো পড়ে দল নির্বাচনে। তাবিশ খানও যদি আক্ষেপে ক্রিকেটটা ছাড়তেন তবে পাকিস্তানের বাইরে হয়তো তেমন কেউ তার নামটাও জানতো না, অনেক অনেকের মতো হারিয়ে যেতেন সময়ের পরিক্রমায়। ইতিহাসের পাতা উল্টে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এই কিংবদন্তিকে কেই-বা খুঁজতো।
দলে জায়গা পাওয়ার সাথে একাধিক রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন তাবিশ খান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের তাবিশের উইকেট সংখ্যা অভিষেকের আগেই ছিল ৫৯৮। এশিয়ানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ, ৫৫৮ উইকেট নিয়ে এর আগে যে রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার মালিন্দা পুষ্পাকুমারার। পাকিস্তানের ঘরোয়া আসর কায়েদী আজম ট্রফিতে সর্বোচ্চ উইকেটও তার। অভিষেকের আগেই তাবিশ খান খেলেছেন ১৩৭ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ, পাকিস্তানের হয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, পাকিস্তানের হয়ে অভিষেকের আগে সর্বোচ্চ ২১৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে খালিদ ইবাদুল্লাহ্।
২০০৯-২০১৮ এই দশ বছরে তাবিশ খানের উইকেট সংখ্যা ৪৯৫, পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একই সময়ে সময়ে সর্বোচ্চ উইকেট শ্রীলঙ্কার, পুষ্পাকুমারার, ৬১৬। অভিষেকের আগে দেশের বাইরে তাবিশ খান খেলেছেন কেবল ৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, শ্রীলংকা এ দলের বিপক্ষে।
সুযোগ না পেতে পেতে, অবহেলায় জর্জরিত তাবিশ খানের অবস্থা এমন ছিল যে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া বিশ্বাস করতে পারেননি তার মা, ভেবেছিল রসিকতা। সব আঁধার শেষে নাকি আলো নাকি আসে, তাবিশ খানের জীবনেও হয়তো সেই আলোটাই আসলো, হয়তো দেরিতে কিংবা তার জন্য সঠিক সময়েই।