২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, শুক্রবার

মানুষ আশা করে বলেই সমালোচনা করে: শান্ত

- Advertisement -

নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি আপনি দেখেছেন। না দেখলেও, এতক্ষনে জেনে গেছেন। সেঞ্চুরির পরের অংশটুকু ছিল শুরুর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। টিকে থাকা, উইকেট না দেয়া, নতুন করে মনঃসংযোগ; অনেক কিছুর মিশেল। ৮৮তম ওভারে বিশ্ব ফার্নান্দোর পঞ্চম বল। হুট করেই অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে চলে আসা বলটা শেষ মুহুর্তে সামনের পায়ে ডিফেন্স করলেন শান্ত, ব্যাটের কানায় লেগে ফাইন লেগে, দুই রান, বাংলাদেশের তিনশো। শান্ত কোনরকম তাড়াহুড়া করেননি, শান্ত থাকার চেষ্টা করেছেন, বলের মেরিট বুঝে খেলেছেন, ধৈর্য্যের প্রমাণ তো বটেই!

শান্তর দুর্দান্ত ইনিংস। ছবি: অলরাউন্ডার

প্রথম দিনের শেষ দিকের উদাহরণটা এজন্যেই দেয়া, ওই সময়েই ব্যাটসম্যানরা মনঃসংযোগ খুঁইয়ে উইকেট দিয়ে আসেন। নাজমুল শান্ত ছিলেন ব্যতিক্রম, তার পুরো ইনিংসের ছবি ছিলো ওই একটা শট। আপাত দৃষ্টিতে যেটা সাধারণ, ব্যাটের কানায় লাগা; কিন্তু নাজমুল শান্ত পথ হাররনি। মাটি কামড়ে উইকেটে থেকে শুরুর কষ্ট শেষ বেলায় ম্লান হতে দেননি। নটআউট থেকে দিন শেষ করতে চেয়েছিলেন, নিজেকে প্রমাণের চোয়ালবন্ধ যে প্রতিজ্ঞা দিনের শুরু থেকেই তার ব্যাটে দেখা গেছে, ক্যান্ডির শেষ বিকেলের আলোয় সেই কষ্টের ইনিংসটাকে ফিকে হতে না দিয়ে বরং আপন আলোয় আলোকিত করেছেন বাংলাদেশের সাদা পোষাকের নাম্বার থ্রি। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতে তিনি অন্য আর দশজনের মতো আবেগের বানে জোয়াড় হয়ে ভেসে যেতে চাননি বরং বড় কিছুর প্রত্যয়ে উন্মাদনার মানসে লাগাম টানেছেন।

‘সত্যি বলতে আমাকে নিয়ে কী হয়েছে, খুব একটা দেখিনি। হ্যাঁ শুনেছি, ফ্রেন্ড সার্কেল, ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে শুনেছি যে এরকম হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় সবাই আমার কাছে অনেক আশা করে। (বিশ্বাস করে) আমি ভালো করতে পারি। এই জন্য হয়তো মানুষ এগুলো করে ভালো খেলার আশায়’

শান্তর ইনিংসের শুরুটা খেয়াল কররে দেখা যায়, তামিম ইকবালকে সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্বটা বেশ ভালভাবেই পালন করেছেন। উইকেটের সুইং আর বাউন্স নতুন বলে এমনিতেই আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে দেখা দেয়। নতুন বল সামলে বাইশ গজের আর্দ্রতা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা প্রথম সেশনের পর থেকেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। লঙ্কান ফাস্টবোলারদের গতি, বাউন্স আর সুইং সামলে নিজেকে টিকিয়ে রাখাতেই সবচেয়ে বেশী মনযোগী ছিলেন নাজমুল শান্ত। ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন অংশটুকু পার করার সাথে সাথেই হয়ে উঠেছিলেন আত্মবিশ্বাসী। ব্যক্তিগত ২৮ রানে শ্রীলঙ্কান উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়েলার কাছে জীবন পেয়ে ভুলটাও শুধরে নিয়েছিলেন খুব দ্রুত। তামিমের আউটের পরেও উটকো কোন চাপ নেননি বরং ইতিবাচক থেকেই ইনিংস এগিয়ে নিয়েছেন। ২৩৫ বল খেলে তুলে নিয়েছেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তার ইনিংসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, ভুল শটের সংখ্যা একেবারেই কম।

নাজমুল শান্তর উদযাপনের সঙ্গী তামিম ইকবাল।

‘আসলে (সেঞ্চুরি করে) একটু স্বস্তি পেলাম। শেষ কয়েক মাস অনেক পরিশ্রম করেছি। শেষ দুই টেস্টে রান করতে পারিনি। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল, রান করতে পারব। আজ হয়েছে, তাই খুশী।।’

যুব দল থেকে দারুণ সম্ভাবনাময় তরুন হিসেবেই জাতীয় দলে এসেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট অভিষেক ২০১৭ সালে। তারপর থেকেই ব্যাটিং অর্ডারের নানা জায়গায় খেলেছেন, সবশেষ তাকেই বাংলাদেশের নাম্বার থ্রি হিসেবে মানা হলো। যদিও কোনো ফরম্যাটেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাকে দলে রাখা উচিত কিনা সেই সমালোচনা যখন মুখে মুখে, তখনই যেন শেষ চেষ্টাটা করলেন  শান্ত। তার শতরান যেন একটা দমকা হাওয়া না হয় কিংবা প্রখর রোদের পরে এক পশলা বৃষ্টি। নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর যে আস্থা আর ভরসা বাংলাদেশ রেখেছে, সেই ভরসা “সামান্য হলেও যেন পূরণ করেছেন শতরান করে”। সেঞ্চুরিকে যখন সামান্য বলতে হয়, তখন সামনের দিনের প্রত্যাশা যে অনেক বড় হয়ে ওঠে, সেটা শান্তর বুঝতে পারাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img