ম্যাচের শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাঠে প্রবেশ করলেন একঝাঁক নারী। পরণে তাঁদের রংবেরংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। আজ নাকি ছিল ওমানের ‘নারী দিবস’। নারীদের এই মহান উপলক্ষ্যে তাই তো নারীদের দিয়েই আরেকটি মহোৎসবের সূচনা করলো ওমান। এক দশক আগে যে দেশে খেলার জন্য একটা সবুজ মাঠ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল, যারা রুক্ষ বালুতে ক্রিকেট খেলতো, তারা আজ বিশ্বকাপের আয়োজন করছে; মহোৎসব তো বটেই।
প্রতিপক্ষ পাপুয়া নিউগিনি, আইসিসির যেকোনো বিশ্ব আসরে এই প্রথমবার যাদের পদার্পণ। দুই শক্তিশালী প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে যারা এতোদিন দেখেই এসেছে, তারা আজ তাঁদের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে। তাসমান পাড়ের দেশটিতেও মহোৎসবের উপলক্ষ্যই যে এসেছে তা তো বলাই বাহুল্য।
এমন এক উৎসবমুখর আবহেই ওমানের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে পর্দা উঠলো আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। এবং উদ্বোধনী ম্যাচেও রান উৎসব করলেন ওমানের দুই ওপেনার; দারুণভাবে জিতল ওমান। পাপুয়া নিউগিনির দেওয়া ১৩০ রানের টার্গেট কোন উইকেটই না হারিয়ে মাত্র ১৩.৪ ওভারেই তাড়া করে জিতে গেলো মরুর দেশটি; অধিনায়ক আসাদ ভালার লড়াকু ফিফটি সত্ত্বেও বোলারদের ব্যর্থতায় বিশাল পরাজয় বরণ করলো পাপুয়া নিউগিনি।
টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন ওমানের অধিনায়ক জিসান মাকসুদ। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই পাপুয়া নিউগিনির টনি উরাকে বোল্ড করেন ওমানের বাঁহাতি পেসার বিলাল খান। পরের ওভারেই লেগা সিয়াকার মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দেন আরেক পেসার কলিমুল্লাহ। দুই ওভার শেষে পাপুয়া নিউগিনির স্কোর হয় ০/২।
চার্লস আমিনিকে নিয়ে এরপর পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করেন অধিনায়ক আসাদ ভালা। ১১.৩ ওভার পর্যন্ত আর কোন উইকেটই হারায়নি পিএনজি; দুজনে গড়েছেন ৮১ রানের জুটি। চার্ল আমিনি ৩৭ রান করে রানআউটের শিকার হলেও বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটিটি তুলে নেন অধিনায়ক ভালা। কলিমুল্লাহর শিকার হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় খেলেন ৫৬ রানের ইনিংস।
তবে ভালার বিদায়ের পরই আবারো ম্যাচে ফিরে আসে ওমান। অধিনায়ক জিসান মাকসুদ ১৫তম ওভারেই তুলে নেন পিএনজির তিন তিনটি উইকেট। ১১২/৪ থেকে মুহুর্তে ১১৩/৭ হয়ে যায় পিএনজি। ১৮তম ওভারে আবারো আঘাত হানেন মাকসুদ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করে পাপুয়া নিউগিনি। ওমান অধিনায়ক জিসান মাকসুদ নিয়েছেন ২০ রানে ৪ উইকেট।
১৩০ রানের লক্ষ্যে উড়ন্ত সূচনা করেন ওমানের দুই ওপেনার আকিব ইলিয়াস ও জাতিন্দর সিং। পাপুয়া নিউগিনির বোলারদের কোন পাত্তাই না দিয়ে মাঠের চারপাশে আছড়ে ফেলতে থাকেন তারা। আর কাউকে ব্যাটিংয়ে নামতেই হয়নি। ৪২ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩* রান করেন জাতিন্দর সিং। আকিব ইলিয়াস করেন ৪৩ বলে ৫০*। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে কোন উইকেট না হারিয়ে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। ওমানের জন্যও এটি যেকোনো উইকেটেরই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
ম্যাচে একদল জিতবে একদল হারবে এটাই তো নিয়তি। তবে জয় পরাজয় ছাপিয়ে এই দুই সহযোগী দেশের জন্যই এই ম্যাচটি যে হয়ে থাকলো অমোচনীয় এক মাইলফলক।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
পাপুয়া নিউগিনিঃ ২০ ওভার শেষে ১২৯/৯ (ভালা ৫৬, আমিনি ৩৭, সেসে বাউ ১৩; জিসান ৪/২০, বিলাল ২/১৫, কলিমুল্লাহ ২/১৯ )
ওমানঃ ১৩.৪ ওভারে ১৩১/০ (জাতিন্দর ৭৩*, আকিব ইলিয়াস ৫০*)
ফলাফলঃ ওমান ১০ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরাঃ জিসান মাকসুদ (ওমান)