ডেনমার্ক বেলজিয়ামের ম্যাচের তখন সবে দশ মিনিট। আগে থেকেই ঘোষণা দেওয়ায় হয়তো চমক ছিল না, তবে ম্যাচের দশম মিনিটে পুরো গ্যালারির একসঙ্গে হাততালি দেওয়া নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণা যোগাবে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনকে। বেলজিয়াম শিবির থেকে এরিকসেনের ক্লাব সতীর্থ রোমেলু লুকাকু জানিয়েছিলেন এরিকসেনের জার্সি নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে দশম মিনিটে বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে এটা নিশ্চিত করবেন। ততক্ষনে এক গোলে পিছিয়ে থাকলেও ভালোবাসায় পিছিয়ে থাকতে নারাজ লুকাকুরা। ডেনমার্কের বিপক্ষে ম্যাচে ভালবাসার নিদর্শন স্থাপন করল বেলজিয়াম।
❤️ "All of Denmark is with you, Christian."#EURO2020 https://t.co/zp0PcsgPBm pic.twitter.com/vz5Q9VXfVU
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 17, 2021
ইউয়েফা ইউরো ২০২০ এ ডেনমার্ক-বেলজিয়াম ম্যাচ যেন ছিল অসুস্থ এরিকসেনকে স্মরণ করার উপলক্ষ।পুরো গ্যালারি খেলা দেখতে নয়, এসেছিল এরিকসেনকে ভালোবাসা জানাতে। মাঠে আনা হয়েছিল এরিকসেনের বিশাল এক জার্সি। এরিকসেনের জ্ঞান হারানোর সময় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া,এমনকি মাঠেই তার স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়া সাইমন কায়েরকে এরিকসেনের জার্সি ফ্রেমে বাঁধাই করে দেওয়া হয় । দশম মিনিটে বল মাঠের বাইরে পাঠানোর পর থমাস ডেলানিকে জড়িয়ে ধরেন লুকাকু। ভালবাসা তো এভাবেই হয়।
লুকাকুদের মনে ভালবাসা ছিল,ভালবাসার মতো ছিল লড়াই করার শক্তিও। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই পিছিয়ে পড়েছিল বেলজিয়াম, সেখান থেকে দুইবার ডেনমার্কের জালে বল জড়িয়েছে কেভিন ডি ব্রুইনারা। ভালবাসার খেলায় যেভাবে জিতেছে, মাঠের খেলায়ও সেভাবেই জিতেছে তারা। ডেনমার্কের হয়ে দুই মিনিটের মাথায় গোল করেন ইউসুফ পলসেন। আর বেলজিয়ামের হয়ে দ্বিতীয়ার্ধে গোল করেন থর্গান হ্যাজার্ড এবং কেভিন ডি ব্রুইনা। এ জয়ে ইউরো ইতিহাসে প্রথমবার বেলজিয়াম তাদের প্রথম দুই ম্যাচেই জিতলো, মুদ্রার অন্য পিঠ আবার ড্যানিশ শিবিরে। প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরেছে তারা।
De Bruyne inspires Belgium to victory and a Round of 16 spot! ???#EURO2020 | #BEL
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 17, 2021
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই বেলজিয়াম শিবিরে পলসনের আঘাত। নিজের দ্বিতীয় টাচেই গোল করেন এই লেইপজিগ স্ট্রাইকার। পঞ্চম মিনিটে আবার সুযোগ আসে ড্যানিশদের সামনে, বার্সেলোনা স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রাথওয়েটের শট সরাসরি চলে যায় বেলজিয়াম গোলকিপার থিবো কুর্তুয়ার কাছে। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় বেলজিয়াম ছিল নিজেদের ছায়া হয়ে। প্রথমার্ধের খেলা দেখে কেউ বাড়ি চলে গেলে তাকে নিশ্চয়ই কেউ বুঝাতে পারবে না এই বেলজিয়ামই পৃথিবীর এক নম্বর দল।
দ্বিতীয়ার্ধে রবার্তো মার্তিনেজের দল খেলেছে গোছানো ফুটবল। যার নেপথ্যে ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা। গত ম্যাচে ইনজুরির জন্য খেলতে না পারা ডি ব্রুইনাকে এ ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন বেলজিয়াম কোচ । মাঠে নামার দশ মিনিটের মধ্যেই প্রমান করেন কেন তাকে বর্তমান সময়ের সেরা মিডফিল্ডার বলা হয়। থর্গান হ্যাজার্ডের সামনে সামনে এমন বল রাখলেন, যেন মনে হবে এ কোন উপহারের থালা। সেই থালা থেকে একেকটা উপহার নিবেন আর সেটা গোল হয়ে স্কোরশিটে জমা পড়বে। ম্যাচের ৭০ মিনিটে নিজেই গোল করে বেলজিয়ামকে এগিয়ে দেন ডি ব্রুইনা। এই গোলের উৎস মিনিট দশেক আগে মাঠে নামা বেলজিয়ামের আরেক তারকা ইডেন হ্যাজার্ড। তার পাস থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি ডি ব্রুইনার।
৮৪ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ আসে ডেনমার্কের সামনে। ব্র্যাথওয়েট পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সেবার। মিনিট তিনেক পর আবার ডেনমার্কের আক্রমন, আবার ব্র্যাথওয়েট, আবার মিস। এবার তার হেড প্রতিহত হয় পোস্টে। ফলে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেলজিয়াম। এ জয়ে মেজর টুর্নামেন্টের গ্রূপ পর্বে টানা সাত ম্যাচ জিতল বেলজিয়াম, আর শেষ ১২ ম্যাচে ১১ ম্যাচ।