ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরের দ্বিতীয় পর্বের সবচেয়ে দুর্দান্ত দল নিঃসন্দেহে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। সর্বশেষ ৭ ম্যাচে তারা ৫ ম্যাচ জিতে প্লে অফে একপ্রকার এক পা দিয়েই ফেলেছে। তবুও কিছু যদি কিন্তু আছে, সেই যদি কিন্তুর নাম মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। শুক্রবার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে ১৭১ রানে হারাতে পারলেই প্লে অফে জায়গা করে নিতে পারবে রোহিত শর্মার দল! বাদ পড়বে সাকিবের কলকাতা।
ক্রিকেটে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়, তবে মুম্বাই এত বড় ব্যবধানে জিতে প্লে অফ খেলবে এমন আশা বোধহয় স্বয়ং তাদের সমর্থইকরাই করছে না। কার্যত অনেকের কাছেই এটাকে অসম্ভব মনে হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যায় মুম্বাইয়ের প্লে অফ খেলার আশা করা সমর্থকদের পুড়তে হচ্ছে ট্রলের আগুনে। তবে মুম্বাইয়ের খেলোয়াড়রা আশার আলো খুঁজতে পারেন, কেননা পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে ১৭১ কিংবা তার চেয়ে বেশি রানে জয় পেয়েছে ৫টা দল! সেই পাঁচটা ম্যাচের চারটাই আবার শেষ তিন বছরে। তাদের থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতেই পারে মুম্বাই…
৩০ আগষ্ট ২০১৯, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের ৮৭২ নম্বর ম্যাচ। তুরস্কের মুখোমুখি চেক রিপাবলিক। প্রথমে ব্যাট করে চেকদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৭৮, জবাবে মাত্র ২১ রানেই গুটিয়ে যায় তুরস্ক। ফলাফল ২৫৭ রানের বড় ব্যবধানে জয় চেক রিপাবলিকের। সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি তো বটেই, সবধরনের টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড গড়ে চেকরা। লজ্জার রেকর্ডের অংশ হওয়া তুরস্ক ভাঙ্গে মাত্র আগেরদিন নিজেদের গড়া সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে হারার রেকর্ড!
চেকদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেরদিন, অর্থাৎ ২৯ আগষ্ট ২০১৯ সালে রোমানিয়ার বিপক্ষে ১৭৩ রানের ব্যবধানে হারে তুরস্ক। রোমানিয়ার ২২৬ রানের জবাবে তুরস্ক অলআউট হয় ৫৩ রানে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের দুই লজ্জার রেকর্ডই তুরস্কের দখলে, দুটোই একই ভেন্যুতে, একই টুর্নামেন্টে। কন্টিনেন্টাল কাপে, মোয়ারা ভ্লাসিয়েই ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। যেটা আবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রানের ব্যবধানে তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়।
এই দুই রেকর্ডের মাঝের রেকর্ড অন্ধ্রর দখলে, সেটাও ঐ একই বছরের ঘটনা। ২২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে নাগাল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে রিকি ভুইয়ের সেঞ্চুরিতে অন্ধ্র তোলে ২৪৪ রান। জবাবে নাগাল্যান্ডের সংগ্রহ মোটে ৬৫। হানুমা বিহারির দলের জয় ১৭৯ রানে।
পরের ঘটনাটা বেশ আগের, রোমানিয়ার ১৭৩ রানে জয়ের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওটাই ছিল সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেনিয়াকে নিয়ে একদম ছেলেখেলায় মাতে শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করে বোর্ডে তোলে ২৬০ রান, জবাবে আফ্রিকান দেশটি গুটিয়ে যায় ৮৮ রানে। মাহেলা জয়াবর্ধনের দলের জয় ১৭২ রানের বড় ব্যবধানে।
মুম্বাইয়ের জিততে হবে ১৭১ রানে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একদম ১৭১ রানে জয়ের ঘটনাও আছে একটি। ঘটনাটা আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগের, ২০১৮ সালে। শারজায় আগে ব্যাট করে ক্রিস গেইলের ফিফটিতে বালখ লিজেন্ডসের সংগ্রহ ২৩৫ রান, জবাবে নাঙ্গাহার লেওপার্দস অলআউট ৬৪ রানে। মোহাম্মদ নবীর দল জেতে ১৭১ রানে।
এই তো গেল অন্য দলের কথা, মুম্বাই অনুপ্ররেরণা নিতে পারে নিজেদের থেকেই। আইপিএলে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড যে তাদেরই দখলে। ২০১৭ সালে দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে মুম্বাইয়ের বোর্ডে রান ৩ উইকেটে ২১৩, জবাবে ৬৬ রানেই শেষ দিল্লীর ইনিংস। রোহিত শর্মার দলের জয় ১৪৬ রানে।
প্লে অফে যেতে হলে নিজেদের রেকর্ডকে ভাঙ্গতে হবে মুম্বাইকে, অনুপ্রেরণা হতে পারে চেক রিপাবলিক,শ্রীলঙ্কা এমনকি স্বয়ং তারাই। বড় ব্যবধানে জয়ের অভ্যাস যে তাদের আগে থেকেই আছে। হোক না সেটা ১৭১ রানের থেকে কম, তবুও সেই অভিজ্ঞতাই তো তাদের শক্তি। এত বড় ব্যবধানে জিততে না পেরে যদি কাছাকাছিও যেতে পারে মুম্বাই, যদি প্লে অফে খেলার সম্ভাবনা একটু হলেও জিইয়ে রাখতে পারে- তবেই তো জিতে যাবে ক্রিকেট, জিতে যাবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।