অতি দূর্বল কেউ তারচেয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক শক্তিশালী কাউকে প্রথম দেখাতেই কুপোকাৎ করে দিয়েছে, এমন তো দেখা যায় সচরাচর সিনেমার পর্দাতে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে আজ যা করলো এফসি শেরিফ তিরাস্পোল, দু’পক্ষের শক্তিমত্তা আর ইতিহাস ঐতিহ্যের ব্যবধান বিবেচনা করলে, তা যেন সিনেমা বা রূপকথার গল্পকেও হার মানালো।
নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এসেছে শেরিফ, শুধু তাই না ইউরোপের ছোট্ট দেশ মলদোভা থেকে ইতিহাসেই প্রথমবার কোন ক্লাব চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এলো। অথচ এই ক্লাবটিই কিনা ১৩ বারের ইউরোপ সেরা ও তর্কযোগ্যভাবে ইউরোপিয়ান ফুটবল ইতিহাসেরই সর্বশ্রেষ্ঠ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল রিয়ালেরই মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ! যে ঘটনায় এইমুহুর্তে স্তম্ভিত পুরো ফুটবল বিশ্ব।
Sheriff win at Real Madrid ?
? Biggest shock ever?#UCL pic.twitter.com/UPeMh4VJp4— UEFA Champions League (@ChampionsLeague) September 28, 2021
এমনও নয় যে ‘পুঁচকে’ প্রতিপক্ষ পেয়ে তৃতীয় সারির একাদশ নামিয়েছিলেন কার্লো আনচেলত্তি। রিয়ালের নিয়মিত একাদশের করিম বেনজেমা, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ইডেন হ্যাজার্ড, ক্যাসেমিরো, কোর্তোয়ারাই তো খেলতে নেমেছিল, চোট কাটিয়ে স্কোয়াডে ফিরেছিলেন টনি ক্রুসও। প্রথমার্ধের শুরুতেই বেনজেমার একটি ফ্রি কিক ঠেকিয়ে দেন শেরিফ গোলকিপার জর্জিওস আথানাসিয়াদিস। গোলবঞ্চিত হয় রিয়াল মাদ্রিদ। ২৪ মিনিটের সময় বাঁ প্রান্ত থেকে শেরিফ উইংব্যাক ক্রিশ্চিয়ানোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে রিয়ালের জালে প্রথম আঘাত হানেন ইয়াসুরবেক ইয়াখশিবোয়েভ। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় এফসি শেরিফ। হতচকিত ভাবটা মাত্র কাটিয়ে উঠবে রিয়াল, তখনই ৩১ মিনিটে আরেকটি গোল প্রায় করেই বসেছিলেন শেরিফের সেবাস্টিয়েন থিল। অপরদিকে রিয়ালের ভিনিসিয়ুস, হ্যাজার্ড, নাচোরা শুরু করেছিলেন সহজ সুযোগ নষ্ট করার মহড়া।
সমতা বিধান করতে রিয়ালের সময় লাগে দ্বিতীয়ার্ধের ৬২ মিনিট পর্যন্ত। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে ডি বক্সে ফাউল করেন শেরিফের এডমুন্ড আদো ও ফার্নান্দো কস্ট্যানজা। পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ১-১ করেন করিম বেনজেমা।
গোল শোধ দেওয়ার পরও জয়সূচক গোলের জন্য রিয়ালের খেলোয়াড়রা ঘুরছিল হন্যে হয়ে। সুযোগ নষ্টের ধারা বজায় রেখেছিলেন ভিনিসিয়ুস। লুকা মদ্রিচের একটি শট তো আথানাসিয়াদিসের মুখে গিয়ে লাগে, আহত হয়ে রিয়ালের এগিয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে দেন শেরিফ গোলকিপার। ৮৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সেবাস্টিয়েন থিলের দুর্দান্ত এক গোলে রচিত হয় শেরিফের ইতিহাস! সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে স্তম্ভিত ও রিয়াল মাদ্রিদের অহংবোধকে চুরমার করে দিয়ে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এফসি শেরিফ তিরাস্পোল। ও হ্যাঁ, ৭১ মিনিটে আরো একবার রিয়ালের জালে বল পাঠায় শেরিফ। কিন্তু তা অফসাইডের খাঁড়ায় কাটা পড়ে, নাহলে হয়তো ব্যবধান ৩-১ ও হতে পারতো।
এটিকে ‘আপসেট’ বা ‘অঘটন’ চাইলেই বলা যায়, আবার এও বলা যায়, যে এরপর আর কোনদিনও যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার সুযোগ নাও হয় শেরিফের, তবুও এই ইয়াকশিবোয়েভ-থিলরা, কিংবা তাঁদের দেশ মলদোভার মানুষগুলো, নিজেদের পরবর্তী তিন প্রজন্মের কাছে শুনানোর মতো বীরগাঁথা কিন্তু পেয়েই গেল।