কি ফ্রন্ট ফুট, কি ব্যাক ফুট! কি অন সাইড, কি অফ সাইড; সবখানেই লিটন দাস দুর্দান্ত। সামনের পায়ে ভর করে পুল, কাভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ কিংবা স্কয়ার কাট অথবা ফ্লিক! আপনি যেই শটটার কথাই বলুন না কেন, লিটন দ্য বেস্ট। এই শটগুলো অনেকেই খেলেন, কিন্তু যখন লিটন খেলেন তখন বোঝা যায় পার্থক্যটা, মনে হয় শটগুলো অথেনটিক। পঞ্চাশতম ম্যাচে এসে মিস করেছেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক, ২০১৯ বিশ্বকাপের পর করা পাঁচ ফিফটির মধ্যে প্রথমবার পৌঁছতে পারেননি তিন অঙ্কে। তাতে কী! কোনো সন্দেহ ছাড়াই লিটনের ব্যাটিংয়ে বলা যায় ‘অবিশ্বাস্য, অনবদ্য’!
শুরুর দিকে লিটন ছিলেন সকলের দুই চোখের বিষ। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এইতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও লিটনের বাজে ফর্ম দেখে বাংলাদেশে অফার বেরিয়েছিল, ‘লিটনের ব্যাটে যত রান ততো মূল্য ছাড়’। কিন্তু কোচ থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়ক থেকে খেলোয়াড় প্রত্যেকেই রেখেছেন লিটনে আস্থা। সেই আস্থার প্রতিদানই দিচ্ছেন টাইগার ওপেনার। পঞ্চাশ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের সেরাদের সেরা অনায়াসেই বলে দেয়া যায় দিনাজপুরের লিটুকে।

প্রথম পঞ্চাশ ম্যাচে শাহরিয়ার নাফীস করেছিলেন ৪ সেঞ্চুরি, সাকিব আল হাসান ২টি; তামিম ইকবালের মতো মোহাম্মদ আশরাফুলেরও ছিল ১টি মাত্র শতক। হাবিবুল বাশার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের কেউই প্রথম পঞ্চাশ ম্যাচে পাননি শতকের দেখা। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের নাম আসলে এই নামগুলোই আসবে ঘুরেফিরে।
লিটন যখন বাইশগজে ব্যাটিং করেন, তখন মাঠে উপস্থিত দর্শক কিংবা টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা মানুষটা, যেই হোক না কেন, নিশ্চিতভাবেই অপেক্ষায় থাকেন দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের। লিটনের ব্যাটিং চোখ আর মনকে দেয় প্রশান্তি, জাগায় বারবার দেখার আকাঙ্ক্ষা। এমনি এমনি তো আর ইয়ান বিশপ বলেননি, ‘লিটন যখন ব্যাট করে, মনে হয় মোনালিসার মত কোনো চিত্রকর্ম দেখছি।’

সবকিছু বাদ দেয়া যাক, আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেটার দিকেই তাকানো যাক। আফগান বোলারদের দাপটে যখন একে একে প্যাভিলিয়নের পথে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী; তখন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লিটন চিনিয়েছেন নিজেকে নতুন করে। ধৈর্য ধরেছেন, নিজের টেকনিকে আস্থা রেখেছেন, দুর্দান্ত সব শটে মুগ্ধ করেছেন রশিদ-নবিদের। হোক না ইনিংস শেষে রানটা ৮৬, খেলেছেন তো চেনা ছন্দেই।
লিটনের এই ইনিংসটাকে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ক্লাসের এক প্রদর্শনী। ব্যাট থেকে যেভাবে ছিটকে বেরোচ্ছিল আত্মবিশ্বাসের ছটা, বলাই যায় লিটনের এই ইনিংস দর্শকদের মন রাঙিয়ে দেয়ার মতো, দর্শকের মন জয় করে নেয়ার মতো..