লিটন দাস যদি ভানুকা রাজাপাকশে বা চারিথ আসালাঙ্কার দুটি ক্যাচের যেকোন একটি ধরে ফেলতেন, বা দুটোই ধরতেন তাহলে কি বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে যেত? হয়তো। আবার, লিটনের জায়গায় সেখানে যদি অন্যকেউ থাকতো, তাহলে তিনিও কি ক্যাচ মিস করতে পারতেন না? হয়তো।
তবে ‘হয়তো’ গুলির চেয়ে বাস্তবে চোখ দিলে, ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ এবং লিটন দাসের ওই ক্যাচ মিস দুটিকে তোলা হচ্ছে কাঠগড়ায়, হয়তো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্বের চেয়েও বেশি। তবে নিখাদ খেলোয়াড়ি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ক্যাচ মিস তো খেলারই অংশ, প্রায় প্রতি ম্যাচেই হয়, যে কেউই করতে পারে। আবার সেই খেলোয়াড়টিই পরের ম্যাচে অসাধারণ ফিল্ডিং করতে পারে।
আর কেউ সেটি বুঝুক আর না বুঝুক ওটিস গিবসন তা ভালোই বোঝেন। বুধবার সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের বোলিং কোচ সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি হলেন লিটন দাসের ক্যাচ মিস নিয়েই। তবে গিবসন জানালেন ক্যাচ মিসের জন্য লিটনকে শূলে চড়ানো তার কাছে একেবারেই অর্থহীন।
“লিটন আমাদের সেরা খেলোয়াড়দের একজন, এবং সে আমাদের সেরা ফিল্ডারদেরও একজন। কয়েকটি ক্যাচ মিস তার সেই মর্যাদা কেড়ে নেয়না। যে কেউ ক্যাচ ফেলতে পারে। লিটনের জায়গায় অন্য যে কেউই ফেলতে পারতো। দল হিসেবে আমাদের উচিত তাকে সমর্থন দেওয়া ও তাকে বুঝানো যে সে এখনো আমাদের সেরাদের একজন।”
“প্রতিটি ক্রিকেট ম্যাচেই ক্যাচ পড়ে। এটা খেলার অংশ। আমরা নিয়মিত ফিল্ডিং অনুশীলন করি, ক্যাচিং ড্রিল করি। কিন্তু মাঠে প্রেশার সিচুয়েশনে সবাই নার্ভাস হয়ে ভুল করে। এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। অবশ্যই ক্যাচ পড়লে সেটা নিয়ে কথা হবেই, তবে আমরা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করি যাতে এমন ভুল না হয়।”
তবে ম্যাচ হারের দায় লিটন দাসের হোক, মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্তের ভুল হোক আর যাইহোক, অনলাইনে অফলাইনে কিন্তু আগুন থামছে না। এমনকি সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী তো আজ এই দুটি কারণ ছাপিয়ে নিজের পোস্টে সরাসরি আঙ্গুল তুলেছেন বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে। তবে গিবসন জানালেন, দলের ‘সার্কেল’ এর বাইরে কে কি বলছে তা পাত্তা দেননা দল বা কোচিং প্যানেলের কেউই।
“দলের বাইরে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কি বলছে আমরা তা আমরা কন্ট্রোল করতে পারব না। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিতও নই। তবে দলের মধ্যে কেউ তাকে দোষ দিচ্ছে না। বরং এখন দলের সবার উচিত তাকে যথাসম্ভব সাহস দেওয়া। ক্যাচ ফেলার ঘটনাটা যাতে তার মনে কোনভাবে প্রভাব না ফেলে সেটা নিশ্চিত করা। তাকে বোঝানো যে সে দলের জন্য কতোটা মূল্যবান। আবারো বলছি ক্যাচ যে কেউই ফেলতে পারে। এখনো চারটি ম্যাচ আছে। আগামীকালই সে একটি অসাধারণ ক্যাচ ধরবে এবং মানুষ এখন যা বলছে তার থেকে খুবই আলাদা কিছুই বলবে।”
এর আগে শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন ইংল্যান্ডের বোলিং কোচ হিসেবে পূর্বে দুইদফা দায়িত্ব পালন করা এই ক্যারিবিয়ান।
“ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ অনেক শক্তিশালী। এবং তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে আমাদের নিজেদের ‘এ’ গেইমে থাকতে হবে। গতরাতে আমরা এ বিষয়ে টিম মিটিংয়ে কথা বলেছি। আজ অনুশীলনেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুশীলন করেছি যা তাদের হারাতে কাজে লাগবে। তারা আমাদের শক্ত চ্যালেঞ্জই জানাবে, তবে তারা আমাদের সুযোগও যথেষ্ট দেবে। যেমন গতম্যাচেই আমরা দেখলাম তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৬ রান তাড়া করতে ৪টা উইকেট হারিয়েছে। আমাদের ভালো খেলতে হবে এবং এই সুযোগগুলি কাজে লাগাতে হবে”
সংবাদ সম্মেলনে এক পর্যায়ে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিলো, বাংলাদেশ কি গ্রুপে আর একটি ম্যাচেও জয় আশা করতে পারে কিনা, উত্তরে কোচের চোখ উঠে গেছে কপালে,
“কি অদ্ভুত প্রশ্ন। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি আমরা যে কোন দলকে হারাতে পারি। কোয়ালিফাইং গ্রুপ কঠিন ছিল, আমরা তা পার করছি। মানি এখন একটু কঠিন সময় যাচ্ছে, তবে আমরা এই স্টেজে শুধু দলের কোটা পূরণ করতে এসেছি তা তো নয়, আমরা এখনো বড়বড় দলের বিপক্ষে জিততে সক্ষম।”