শুধু কয়েকটি অঙ্ক একটু এদিক ওদিক- কিন্তু আইপিএলের প্রেক্ষাপটে ২০১২ ও ২০২১ দুটি বছরেই মিলে গেছে একবিন্দুতে।
২০১২ মৌসুমে ফাইনাল খেলেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। কলকাতার সেটিই ছিল প্রথম ফাইনাল, চেন্নাইয়ের চতুর্থ। চীপকের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে মাইক হাসির ৫৪, মুরালি বিজয়ের ৪২ ও সুরেশ রায়নার ৩৮ বলে ৭৩ রানের খুনে ইনিংসের কল্যাণে চেন্নাই গড়েছিল ১৯০ রানের পাহাড়। কলকাতার হয়ে মানবিন্দর বিসলা ৪৮ বলে ৮৯ ও জ্যাক ক্যালিস ৪৯ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলে পাল্টা জবাব দিলেও বাকিদের ব্যর্থতা ও রান বলের ব্যবধানের চাপে চেন্নাইয়ের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখনই ঘটে নাটকীয় ঘটনা।
১৯তম ওভারে ক্যালিস যখন আউট হন, জয়ের জন্য কলকাতার তখনো প্রয়োজন ৭ বলে ১৬ রান। পরের বলেই বেন হিলফেনাউসের বলে ক্যাচ আউট হন সাকিব আল হাসান, তবে সেটি ছিল নো বল, সাকিব দৌড়ে নিয়ে নেন ৩ রান, পরের বলেই সাকিবের সেই বিখ্যাত ‘স্কুপ’শটে চার! ২ বলে ৭ রান চলে আসায় উল্টো কলকাতার জয়টিই হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। শেষ ওভারে মনোজ তিওয়ারির টানা দুটি বাউন্ডারিতে নিশ্চিত হয় কলকাতার জয়। প্রথমবার ফাইনালে উঠেই শিরোপা জেতে শাহরুখ খানের দল।
২০২১ মৌসুমের ফাইনালেও দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় মুখোমুখি হচ্ছে চেন্নাই ও কলকাতাই। চেন্নাইয়ের সামনে হাতছানি নিজেদের চতুর্থ আইপিএল শিরোপা জয়ের; আবার কলকাতার সামনে হাতছানি শিরোপার সংখ্যায় চেন্নাইয়ের সমান হওয়ার।
‘ধারাবাহিকতা’র বিচারে চেন্নাই সুপার কিংসকে আইপিএলের সফলতম দল বলা যায়। এই নিয়ে ১৪ আসরে ৮মবার ফাইনালে খেলছে দলটি, তিনবার শিরোপা জয়ের পাশাপাশি, পাঁচবারের রানার্স-আপ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়ে গেছে এখন চেন্নাই ফাইনালে না খেলাই যেন আইপিএলের এক অস্বাভাবিক ঘটনা, যেমন ২০২০ এ প্লে অফে না উঠাটাকে ধরা হয় ‘অঘটন’ হিসেবে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য ব্যাপারটি সেরকম নয়। এপর্যন্ত দুবার ফাইনালে উঠেছে তারা, দুবারই জিতেছে। তবে ১৪ আসরের অর্ধেক আসরেই তারা শেষ চারে উঠতে পারেনি। এবারও করোনার প্রকোপে স্থগিত হওয়ার আগে তারা শেষ চারে উঠবে এমনটা জোর গলায় বলতে পারার মত লোকের অভাব ছিল। শেষ চারে ওঠার জন্য আমিরাত পর্বে তাদের বলতে গেলে প্রতিটি ম্যাচকেই ‘ফাইনাল’ ভেবে খেলতে হত, এবং কেকেআর ঠিক তাই করেছে। যে দল প্রথম কিস্তিতে জিতেছিল মাত্র দুটি ম্যাচ, তারা দ্বিতীয় কিস্তিতে হেরেছে মাত্র দুটি ম্যাচ। শেষ চারে ভিরাট কোহলির রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু এবং আসরের প্রায় পুরোটা সময়ই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দিল্লী ক্যাপিটালসকে হারিয়ে তারা উঠে এসেছে ফাইনালে।
চেন্নাইয়ের এই দলটার মূল শক্তির জায়গা তাদের ব্যাটিং। ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় মাত্র ২৪ রান করলেই এই মৌসুমের অরেঞ্জ ক্যাপ পেয়ে যাবেন, আরেক ওপেনার ফাফ ডুপ্লেসির জন্য কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়, তাঁর লাগে ৮০ রান। এছাড়াও মঈন আলী, আম্বাতি রায়ুডু, রবিন উথাপ্পা, সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাদেজা, ধোনি- এক কথায় বড় টার্গেট দেওয়া বা বড় টার্গেট তাড়া করা, চেন্নাই দুটোই করতে পারে খুব অনায়াসে। তবে বোলিংয়ে নেই খুব বেশি ‘এক্স ফ্যাক্টর’।
কলকাতার আবার রয়েছে ব্যাটিং বোলিং মিলিয়ে ভালো ভারসাম্য। মূলত তারুণ্যনির্ভর কলকাতার ব্যাটিংয়ের অগ্রভাগে রয়েছে শুভমান গিল, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, রাহুল ত্রিপাঠি, নিতীশ রানাদের মত তরুণ প্রতিভা যারা কিনা নামে খাটো হলেও সামর্থ্যে একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাবার বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন। বোলিংয়ে টিম সাউদি, শিভাম মাভি, লকি ফার্গুসনদের পেস আক্রমণের পাশাপাশি সাকিব আল হাসান, সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তীর মতো স্পিনার। সাকিব, নারিনের পাশাপাশি আন্দ্রে রাসেলও রয়েছেন- যারা রাখতে পারেন ব্যাটেবলে সমান অবদান।
আজ রাতে নয় বছর আগের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামকে দুবাইতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে কলকাতা, নাকি চেন্নাই কলকাতাকে হারিয়ে নেবে নয় বছর আগের বদলা- সেটি সময় বলে দেবে। কিন্তু বাংলাদেশী দর্শক সমর্থকদের মনে অবশ্য ফাইনালের এই জমজমাট লড়াইয়ের পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষাতেও সময় কাটছে। তা হল সাকিব আল হাসান কি ফাইনালে খেলবেন?
এই মৌসুমে একাদশে ফেরার পর থেকে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাট অথবা বল হাতে অবদান রেখে গিয়েছেন সাকিব। তবে শেষ ম্যাচে সাকিবের ভুলে প্রায় ম্যাচ হারতে বসেছিল কলকাতা। ফাইনালে সেই মাশুল কি গুণবেন সাকিব? নাকি আগের ম্যাচগুলোর কথা মাথায় রেখে তাকে একাদশে রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট? এর আগে কলকাতার দুটি শিরোপা জয়ের ম্যাচেই একাদশে ছিলেন সাকিব আল হাসান। দুটিতেই ব্যাট বল হাতে ছোট ছোট কিন্তু কার্যকর অবদান রেখেছেন।
আজ একাদশে থাকলে সাকিবের সামনেও হাতছানি, কলকাতার পাশাপাশি নিজেরও তৃতীয় আইপিএল শিরোপা মাঠে ‘পারফর্ম’ করেই জিতে নেওয়ার।