২০১৩ অ্যাশেজ সিরিজে গ্যালারী থেকে ইংল্যান্ডের স্বীকৃত সমর্থকগোষ্ঠী বার্মি আর্মি একসাথে গাইছিল, ‘হি ইজ বিগ, হি ইজ ব্যাড, হি ইজ বেটার দ্যান হিজ দ্যাড; স্টুয়ার্ট ব্রড, স্টুয়ার্ট ব্রড।’ ক্রিকেট সম্পর্কে সামন্য জ্ঞান থাকলে স্টুয়ার্ট ব্রডকে না চেনার তেমন কোনো কারণ আসলে নেই, তবে ক্রিস ব্রডকে চিনতে হলে মাঠ আর মাঠের বাইরের খেলা সম্পর্কে কিছুটা হলেও বিস্তর জ্ঞান থাকা চাই। সম্পর্কে দুইজন বাবা ছেলে, দুইজনই খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। বাবা ক্রিস ব্রড যেখানে ২৫ টেস্ট খেলে প্রায় চল্লিশ গড়ে করেছেন ১৬৬১ রান, সেখানে স্টুয়ার্ট ব্রড ইংলিশ ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ১৪৮ টেস্ট খেলে স্টুয়ার্ট ব্রডের উইকেটসংখ্যা ৫২৩, ওয়ানডেতে ১২১ ম্যাচে ব্রড নিয়েছেন ১৭৮ উইকেট। মজার ব্যাপার ঘটে ২০২০ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাজে ভাষা ব্যবহার করায় ছেলে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ম্যাচ ফি’র ১৫ শতাংশ অর্থ জরিমানা করেন ওই টেস্টে ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে থাকা বাবা ক্রিস ব্রড।
ক্রিস কেয়ার্নসকে বিবেচনা করা হয় ইতিহাসের সুদর্শন ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে। ক্রিকেট ছেড়ে পরবর্তীতে তিনি কাজ করেছেন পেট্রোল পাম্পে। কেয়ার্নসের এমন গল্প অবাক করার মতোই। সব ঘটনাই তো আর গল্প নয়, গল্প তাই যা লেখক লিখে। এই কিউই অলরাউন্ডারকে নিয়ে চাইলেই গল্প লেখা যেতে পারে। কেয়ার্নসের বাবা ল্যান্স কেয়ার্নসও খেলেছেন ব্লাকক্যাপদের হয়ে, এগারো বছরের ক্যারিয়ার, ছেলের মতো তিনিও ছিলেন অলরাউন্ডার, ৪৩ টেস্টে নিয়েছেন ১৩০ উইকেট, তবে ছেলে ক্রিস ক্রিকেট মাঠে ছাড়িয়ে গেছেন বাবাকে, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৩ হাজার রান আর ২০০ উইকেটের বিরল রেকর্ড আছে ক্রিস কেয়ার্নসের। টেস্টের সাথে ওয়ানডে ফরম্যাটেও ক্রিস ছিলেন দুর্দান্ত, বল হাতে দুইশর বেশি উইকেট, ব্যাট হাতে প্রায় পাঁচ হাজার রান।
হানিফ মোহম্মদ ছিলেন পাকিস্তানের সোনালী যুগের ক্রিকেট সারথীদের একজন। তার তিন ভাই ওয়াজির, মুশতাক, সাদিক খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। ক্রিকেটীয় পরিবারের লেগেসি পরবর্তীতে ধরে রেখেছেন তার ছেলে শোয়েব মোহম্মদ দীর্ঘসময় খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। দেশটির হয়ে ৪৫ টেস্টে শোয়েব মোহম্মদ করেছেন ৭ সেঞ্চুরি। মজার ব্যাপার হচ্ছে শোয়েবের ছেলে শেহযার মোহম্মদও খেলেছেন পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট।
ক্রিকেটের সবচেয়ে আইকনিক প্লট হয়তো জিওফ মার্শের পরিবার, বাবা বেশ সুনামের সঙ্গেই খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। দুই ছেলে মিচেল আর শন মার্শ’তো আধুনিক ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। তিনজনই আবার মাথায় পড়েছেন ব্যাগী গ্রীন ক্যাপ, হাসজ্জ্বোল চেহেরায় বন্দী হয়েছেন ছবির ফ্রেমে। বাবা জিফও মার্শ সফল ছিলেন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে। ৫০ টেস্ট খেলেছেন, তবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তার গড় যেখানে ৩৩.১৮ সেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটে তার গড় ৩৯.৯৭। বাবার মতো ছেলে শন মার্শ ওয়ানডে ফরম্যাটে বেশ সাবলীল, অন্য ছেলে মিচেল মার্শ অবশ্য বোলিং অলরাউন্ডার।
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। বাবার, স্বভাব, পছন্দ স্বাভাবিকভাবেই তার সন্তনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কেউ বাবাকে ছাড়িয়ে যান, কেউ আবার পারেন না। তবে এই দুইয়ের থেকে একদমই ভিন্ন ছিলেন ডন ব্র্যাডম্যানের ছেলে। অস্ট্রেলিয়া যার ব্যাটে হাসতো, আনন্দ খুঁজে পেত সেই ব্র্যাডম্যানের ছেলে পরবর্তীতে নিজের নাম থেকে সরিয়ে ফেলেছিলেন বাবার স্মৃতি। জন ব্রাডম্যান থেকে নাম বদলে রেখেছিলেন জন ব্র্যাডসেন। সব গল্পতো আর সমান হয় না।