ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন ফিফা’র চার বছরের পরিবর্তে দুই বছর অন্তর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাবের সবাই যতটা বিরোধিতা করছে, ততটা বিরোধিতার যোগ্য হয়তো এই প্রস্তাবটি নয়।
দুই বছর অন্তর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারশন (ফিফা)। সংস্থাটির বৈশ্বিক উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আর্সেন ওয়েঙ্গারের মাথায় প্রথম এই চিন্তাটি আসে, যে ২০২৮ বিশ্বকাপের পর থেকে প্রতি চার বছরের পরিবর্তে প্রতি দুবছর অন্তর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজন করলে কেমন হয়? এতে করে বিশ্বজুড়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে এবং আরো বেশি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে; আর্থিক দিক দিয়েও বেশ লাভবান হবে ফিফা। এই প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে ফিফায় পেশ করেছেন সাবেক আর্সেনাল কোচ এবং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো সেটিকে বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।
তবে এই প্রস্তাবে বেঁকে বসেছে ফুটবলের আরেক বৈশ্বিক সংস্থা ইউয়েফা। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থাটি এই প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। আপত্তি এসেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ফুটবল ফেডারেশন, ঘরোয়া লিগ কর্তৃপক্ষ এবং সেখানে খেলা ক্লাবসমূহের কোচদের তরফ থেকেও।
এর কারণ, ফুটবল বিশ্ব সারাবছর মাতিয়ে রাখে ইউরোপের এই লিগগুলোই। এই লিগসমূহে খেলেন বিশ্বের সকল বড়বড় খেলোয়াড়রা। এর সাথে আবার চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগের মত ইউরোপিয় টুর্নামেন্টগুলোও রয়েছে; আবার ক্লাব ফুটবলের ফাঁকে ফাঁকে নেশন্স লিগ, কোপা আমেরিকা, ইউরো, কনফেডারেশন্স কাপ বা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচসমূহে দেশের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করতে হয় খেলোয়াড়দের। অর্থাৎ তাঁরা প্রায় সারাবছর খেলার মধ্যেই থাকেন।
এবং দু’বছর পর পর বিশ্বকাপ হলে খেলোয়াড়দের এই ধকল আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের শরীর, মন ও ক্যারিয়ারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। একটু বেশি অর্থের লোভে ফুটবলারদের এমন ঝুঁকির মুখে ফেলতে আগ্রহী নয় ইউরোপের দেশগুলো। ইউয়েফা সভাপতি আলেকসান্দর সেফেরিন তো হুমকিই দিয়েছেন, এমন হলে ইউরোপের দেশগুলো বিশ্বকাপ বয়কট করবে।
তবে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ফিফার এই প্রস্তাবের সাথে খানিকটা সহমত প্রকাশ করেছেন ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। তিনি মনে করেন এই উদ্যোগ ফুটবলের জন্য ‘ইতিবাচক’ হবে।
“বিশ্বকাপ একটি অসাধারণ আয়োজন। এটিই ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর এবং আমি যদি দুইবছর পরপর একটি করে বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ পাই আমি অবশ্যই খুশি হব। আমি আর্সেনের সাথে সম্পূর্ণ একমত যে, যদি বিশ্বকাপ না হয় তাহলেও কিন্তু ফুটবলারদের ইউরো, নেশন্স কাপ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতেই হবে, তার বদলে বিশ্বকাপ কেন নয়?” – বলেছেন গার্দিওলা
খেলোয়াড়দের শরীরের উপর বাড়তি চাপের বিষয় সম্পর্কেও অবগত আছেন স্প্যানিশ এই কোচ, তবে তিনি মনে করেন সেজন্য সবআর স্বার্থ বিবেচনা করে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় আসতে হবে সবাইকে।
“নতুন একটি পরিকল্পনাকে এভাবে বিরোধিতা করার কিছু নেই। ফুটবলের বিষয়ে আমাদের নিজ নিজ স্বার্থ ভুলে এক হতে হবে। এটা বাস্তব যে খেলার সংখ্যা বেশি হলে খেলোয়াড়দের শারীরিক ধকল খুব বেশি হবে। তারা অবসরও পাবেন খুব কম। তবে আমি বলছি না সেজন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ বা অন্যান্য টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দিন বা জাতীয় দলের খেলা বন্ধ করে দিন। আমি বলছি এই বিষয়ে সবার আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে”- যোগ করেন পেপ।