ইতিহাস গড়ে প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। প্যারিস সাঁ জার্মাঁর জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অভিষেক হবে তাঁর, পুরনো বন্ধু নেইমার ও অনুজ কিলিয়ান এমবাপ্পের সাথে মাঠে সাজাবেন সুন্দর ফুটবলের পসরা, এটিই দেখার আশায় এই ম্যাচে চোখ রেখেছিলো বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শক।
তবে প্রতিপক্ষ ক্লাব ব্রুজ তা থোড়াই কেয়ার করে! পিএসজির হয়ে লিওনেল মেসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিষেকটা তাঁরা স্মরণীয় করে রাখতে দিলনা মোটেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে নিজেদের মাঠে ১-১ গোলে ক্লাব ব্রুজ রুখে দিয়েছে পিএসজিকে। ঘরের মাঠে ফ্রেঞ্চ জায়ান্টদের বিপক্ষে অসাধারণ প্রতিরোধ-কাব্য লিখেছে বেলজিয়ান ক্লাবটি।
নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে, লিওনেল মেসি- আক্রমণভাগে খেলেছেন প্যারিসের ত্রিরত্নের সবাই। তবে ঊরুর ইনজুরির জন্য এই ম্যাচেও মাঠে নামা হয়নি সের্হিও রামোসের।
ম্যাচের শুরু থেকে পিএসজিই বলের দখলে এগিয়ে ছিল, তবে ঘরের মাঠে ক্লাব ব্রুজও ছেড়ে কথা বলছিলনা। সুযোগ পেলেই আক্রমণ শানাচ্ছিল পিএসজির রক্ষণে। ১৪ মিনিটের মাথায় গোলমুখ অবশ্য খোলে পিএসজিই। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ব্রুজ ডিফেন্ডার ক্লিনটন মাতাকে দারুণ দক্ষতায় ছিটকে ফেলে ক্রস করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, তাতে আন্দের হেরেরার নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি।
জবাব দিতে অবশ্য বেশি দেরী করেনি ব্রুজ। ২৬ মিনিটে উইংব্যাক এদুয়ার্দ সোবোলের ক্রসে গোল করে সমতা বিধান করেন হ্যানস ভানাকেন। এই নিয়ে ব্রুজের হয়ে টানা চার ম্যাচে গোল করলেন বেলজিয়াম জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার।
গোল দেবার পর যেন শরীরী ভাষাই পালটে যায় বেলজিয়ান ক্লাবটির। প্যারিসের রক্ষণে তারা বইয়ে দিতে থাকে আক্রমণের বন্যা। অপরদিকে পিএসজি নষ্ট করছিল সহজ সহজ সুযোগ। ব্রুজ গোলকিপার সাইমন মিনিওলে করছিলেন দুর্দান্ত কিছু সেইভ। দ্বিতীয়ার্ধেও সমানতালে আক্রমণ করতে থাকে কোচ ফিলিপ্পে ক্লেমাঁর দল। তাঁদের অসাধারণ দলীয় সমন্বয়ের সামনে মরিসিও পচেত্তিনোর পিএসজিকে মনে হচ্ছিল ছন্নছাড়া। ব্রুজের ১৬টি শটের বিপরীতে পিএসজির নেইমার-মেসি-ইকার্দি-এমবাপ্পে সবাই মিলে নেয় মাত্র ৯টি শট। বিশেষ করে গোলপোস্টের নিচে ব্রুজ গোলরক্ষক সাইমন মিনিওলে হয়ে গিয়েছিলেন অতন্দ্র প্রহরী। ১-১ ব্যবধানেই শেষ হয় ম্যাচ।
তবে এ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ঝড় বোধহয় গিয়েছে মেসির ওপর দিয়েই। প্রাণপণ চেষ্টা করেও দলকে উদ্ধার করতে পারেননি আর্জেন্টাইন এই তারকা। প্রথমার্ধের ২৯ মিনিটে মেসির বাঁ পায়ের দুর্দান্ত একটি শট বারে লাগে। ৭০ মিনিটে মেসির আরেকটি শট ঠেকিয়ে দেন মিনিওলে। ৭১ মিনিটে ইগনাসে ফন ডার ব্রেম্পটকে ফাউল করে হলুদ কার্ডও দেখেন মেসি। সতীর্থরা কাজে লাগাতে পারেনি তাঁর তৈরি করা একটি সুযোগও; এলোপাথাড়ি কিছু শটে নিজেও সহজ কিছু সুযোগ নষ্ট করেছেন মেসি।
পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অভিষেক বাদেও এটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসির ১৫০ তম ম্যাচ। তবে কি অভিষেক, কি মাইলফলক- ক্লাব ব্রুজের দৃঢ়তার সামনে কোনকিছুই স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না মেসি।