টসের অপেক্ষায় শারজাহ স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকেরা। শুধুই কি স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকেরাই? টসের অপেক্ষায় টেলিভিশনের সামনে বসে হাজারও আফগান জনতাও কি নয়? দেশের এই দুঃসময়ে আফগানদের জন্য যদি সুখ বলতে কিছু থাকে তাহলে সেটা তো এই ক্রিকেটটাই! সকলের সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে হাসিমুখে টস করতে এলেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি।
দেশের এই কঠিন সময়ে কেউই ভাল নেই, মনটা নিশ্চয়ই কাঁদছে আফগান খেলোয়াড়দের। তবুও সবারই হাসিমুখে নিজেদের উপস্থাপনের চেষ্টা; হয়ত দেশে থাকা প্রিয়জনদের দিতে চান ভাল থাকার বার্তাটাই। কিন্তু, মনের ভেতরে জমাট বাঁধা কষ্টটাকে কতোক্ষণ আর আড়াল করে রাখা যায়! জাতীয় সঙ্গীত গাইবার সময়ে তাই মোহাম্মদ নবির গাল বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে এল অশ্রু।
“চোখ থেকে মুছে ফেলো অশ্রুটুকু, এমন খুশির দিনে কাঁদতে নেই।“- সাবিনা ইয়াসমিনের গানের লাইনগুলোই যে তখন হাজারও মানুষের মনে বাজছিল!
চোখ মুছেছেন অধিনায়ক; ক্যামেরার লেন্স খুঁজে নিয়েছে গ্যালারীতে থাকা আফগান সমর্থকদের। গালে আফগানিস্তানের পতাকা এঁকে এসেছেন বেশকিছু ক্ষুদে শিশু, একজন তো গায়ে জড়িয়েছেন সামরিক বাহিনীর পোশাকটাও। ছোটরা হয়তো জানেনা কি চলছে তাদের দেশে, তবুও তাদের মুখে হাসি নেই। কিন্তু বড়রা হাসতে ভুলেননি। হয়তো ক্যামেরা সামনে পেয়ে হাসিমুখটা দেখিয়ে দেশে থাকা প্রিয়জনদের জানাতে চাইলেন, “ভালই আছি আমরা। তোমরাও ভাল থেকো।“
ম্যাচ শুরুর পর যতোই খেলা এগিয়েছে, ততোই মেতে উঠেছে পুরো স্টেডিয়াম। সবার চোখ-মুখ ভর্তি হাসিটা যেন আফগান তারকার কথাগুলোকেই মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল বারবার, “এইমুহুতে আফগানিস্তানে সুখ বলতে যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা ক্রিকেটটাই। যদি আমরা টুর্নামেন্টে ভালো খেলি, ম্যাচ জিতি তাহলে অগণিত মানুষের মুখে হাসি ফিরবে।”
হাসি ফিরেছে সবার মুখে, দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেই জিতেছে আফগানিস্তান। স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে। পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন মুজিব-উর-রহমান, চার উইকেট রশিদ খানের। অথচ এই বিশ্বকাপে আফগানদের খেলা নিয়েই ছিল সংশয়। সেখান থেকে এমন প্রত্যাবর্তন তো ক্রিকেট ইতিহাসের পাতাতেই লিখা থাকবে বহুদিন।
ম্যাচ শেষে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন প্রত্যেকে, চোখ ছলছল হয়েছে রশিদ-শেহজাদদের। স্টেডিয়ামে উপস্থিত ভক্তরা মেতেছে আনন্দে। আফগানিস্তানের জয়ের পর এমন উৎসবমাখা মুহুর্তগুলো তো চোখের দেখার জন্যও প্রশান্তির। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নেমেই ম্যাচসেরা মুজিব; ট্রফি হাতে জানিয়েছেন সমর্থকদের উপস্থিতিতেই এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। সেটা শোনে পুরো স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের চিৎকার এবং উল্লাস; শুধুই কি স্টেডিয়ামের দর্শকদের! পুরো আফগানিস্তান জুড়েই তো আজ সকলের উল্লাসে মেতে ওঠার কথা। ক্রিকেটটাই যে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে আফগানদের; সুখ বলতেও তো বাকি ঐ ক্রিকেটটাই!