আদিকালের মুনিঋষিগণ কাঙ্খিত বস্তু অর্জনের জন্য কঠোর তপস্যা করতেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই ব্যক্তিকে তাঁদের সাথে তুলনা দেওয়াই যায়। সবচেয়ে বেশিসময় ধরে জাতীয় দলের চুড়ান্ত স্কোয়াডে থাকা কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেক না হওয়া বাংলাদেশী ক্রিকেটারের ‘রেকর্ড’টি সম্ভবত তারই।
কতোবার দলে থাকা হলো এ পর্যন্ত? প্রশ্নের জবাবে লাজুক হেসে বললেন, “সেই হিসেব করতে হলে তো ২০১৯ থেকে আসতে হবে, সব মিলিয়ে ৪-৫বার তো হবেই”
সেই যে ২০১৯ বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভালো করে বিশ্বকাপের ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসেবে জাতীয় দলে ঢুকলেন, এরপর থেকে এই সিরিজ ওই সিরিজ মিলিয়ে কতোবার যে স্কোয়াডে থেকেছেন, কিন্তু টিম কম্বিনেশনসহ আরো নানান জটিলতা মিলিয়ে অভিষেকটা হয়নি। যদিও ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে নিয়মিতই দেখা যায় তাঁকে, টেস্ট দলের ‘বদলি ফিল্ডার’ হিসেবে স্লিপ ও সিলি পয়েন্টে বলতে গেলে ‘চাকরি’ই পেয়ে গেছেন। শর্ট ক্যাচিংয়ে যোগ্যতার প্রমাণও দিয়েছেন, তবে মূল যে কাজ ব্যাটিং, সেটিই তো করার সুযোগ মিলছে না!
তবে এবার বাতাস জোরালো। গুঞ্জন আছে আসন্ন পাকিস্তান সিরিজেই টেস্ট অভিষেক হচ্ছে ইয়াসির আলী চৌধুরীর; ডাকনাম যার রাব্বি। টি-টোয়েন্টি দলে থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। যে কারণে জাতীয় লিগ চলাকালীনই তাকে দল থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে মিরপুরে। সেখানে খালেদ মাহমুদ সুজনের অধীনে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন রাব্বিসহ আরো বেশকিছু তরুণ।
সোমবার হোম অব ক্রিকেটে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের উত্তরই দিলেন ২৫ বছর বয়সী চট্টগ্রামের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তার ক্যারিয়ার, তার লক্ষ্য বা তার সম্ভাবনা সংক্রান্ত প্রশ্নের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতাজনিত নানান প্রশ্ন করা হয়েছে এই তরুণ ব্যাটসম্যানকে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই অত্যন্ত সপ্রতিভ ছিলেন রাব্বি। জানিয়েছেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যে ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত উন্নতির মধ্যে থাকতে হয় তা তিনি জানেন।
“এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ (পাকিস্তান সিরিজে তরুণদের সুযোগ পাওয়া প্রসঙ্গে)। তবে দলে থাকি না থাকি উন্নতির কিছু জায়গা সবসময় থাকে যেমন রেঞ্জ হিটিং, ব্যাট সুইং এসব বিষয়ে। সেসব নিয়েই কাজ করছি এখন”
“শেখার কোন শেষ নেই। ক্রিকেট চেঞ্জ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, ক্রিকেট মডার্ন হচ্ছে। এই জিনিসগুলো যদি আমরা না জানি তাহলে আমরা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের থেকে পিছিয়েই থাকব। ছোট ছোট বিষয়গুলো শেখা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই জিনিসগুলোই আমাদেরকে ১৯ থেকে ২০ এ নিয়ে যায়”– যোগ করেছেন রাব্বি
২০১৮-১৯ বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের ১১ ম্যাচে তিন ফিফটি সহ ২৭.৯০ গড়ে ৩০৭ রান; স্ট্রাইকরেট ১২৪.২৯। ২০২০ এ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বেক্সিমকো ঢাকার হয়ে ৯ ম্যাচে দুই ফিফটিসহ ৩৬.৭৫ গড়ে ২৯৪ রান; স্ট্রাইকরেট ১২৪.৫৭। গাট্টাগোট্টা শরীরে বড়বড় ছক্কা হাঁকাতে পারেন বলে অনেকেই তাকে ‘টি-টোয়েন্টি ম্যাটেরিয়াল’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। তবে রাব্বির ফার্স্ট ক্লাস গড় ৫০.৩৭ যা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের একটি। রাব্বিরও ইচ্ছে তিন ফরম্যাটেই দেশকে কিছু দেওয়া।
“আমি তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। সেই হিসেবে দলে আমার রোল যদি পাওয়ার হিটিংয়ের থাকে তাহলে আমি সেটি করতেই রাজি।”
পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য গায়ের জোর বেশি প্রয়োজন না মানসিকতা? এমন প্রশ্নের জবাবে রাব্বির সোজা উত্তর,
“মানসিকতা অনেক বেশি জরুরী। একটা ব্যাটসম্যানের জন্য সাহস থাকা খুব জরুরী। সাহস না থাকলে আপনি কখনো ছয় মারতে পারবেন না।”
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির পেছনেও মানসিক কোন সমস্যার দায়ই দেখেন রাব্বি।
“বিশ্বকাপে খারাপ পারফরম্যান্সের পেছনে টেকনিক্যাল কোন ব্যাপার নাই। তবে আমার মনে হয় মেন্টালি আমরা একটু ডাউন ছিলাম কোন কারণে”
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মারতে পারেনা, এজন্য মন্থর উইকেটে খেলার দায়ও খানিকটা স্বীকার করলেন তিনি।
“শুধু মিরপুরের উইকেট বলবো না তবে উইকেট অবশ্যই দায়ী। তার সাথে দায়ী খেলোয়ারদের ‘মেন্টাল স্পেস’ টা। উইকেট যখন বাজে আচরণ করে তখন ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা আসে না মারার। তো কিছুটা তো দায় আছেই।”
এতোবার অভিষেকের কাছে গিয়ে ফিরে আসছেন, সাধারণ কোন মানুষের তো হতোদ্যম হয়ে পড়ার কথা। তবে রাব্বি জানালেন, তিনি বিষয়টা দেখেন অন্য দর্শনে,
“এক বড়ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন তুমি যে জায়গায় আছো সেই জায়গায় বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারই নাই। ঐভাবে চিন্তা করো। আমিও ঐভাবেই ভাবি। যে আমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, যেকোনো সময় ঢুকতে পারি।”
দরজায় দাঁড়ানো রাব্বির জন্য দরজাটা কিন্তু খুলে যেতে পারে এই সিরিজেই!