আজ যিনি রাজা, কাল তিনি ফকির। যে আলভারো মোরাতা ্গোল করে ম্যাচে এনেছিলেন স্পেনকে, সেই মোরাতাই টাইব্রেকারে মিস করায় সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল স্পেন। নির্ধারিত সময় ১-১ ব্যাবধানে সমতায় থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ ব্যাবধানে জয়লাভ করে ইতালি। ইতালি এবং স্পেনের হয়ে গোল করেছিলেন দুই জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড ফেদ্রিকো কিয়েসা এবং আলভারো মোরাতা।
Jorginho scores and wins the shoot-out for Italy!
??: ❌✅✅✅✅
??: ❌✅✅❌#EURO2020— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) July 6, 2021
বল পজিশন, পাসিং এমনকি কর্নারে এগিয়ে ছিল স্পেন। শুধু গোলটা ছাড়া। ইউরোতে টানা ১৬ ম্যাচ জিতেছে ইতালি। আর সবধরনের ফুটবলে ইতালি অপরাজিত ৩৩ ম্যাচ, জিতেছে ১৪ ম্যাচ যেখানে গোল খেয়েছে মাত্র তিনটা। ইতালি চলে গেল নিজেদের চতুর্থ ইউরো ফাইনালে। আর ১০ম বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে, জার্মানির পর যা কিনা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।
ওয়েম্বলিতে কিক অফের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ইতালি প্রমাণ করে, চলতি ইউরোতে কেন তারা সব ম্যাচ জিতেছে। ম্যাচের মাত্র চার মিনিটেই সত্যিকারের সুযোগ তৈরি করে ইতালি। ইউরোতে ইতালির সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় লিওনার্দো স্পিনাজোলার ইনজুরিতে সুযোগ পাওয়া এমারসন পালমেরি নিকোলো বারেলার উদ্দেশ্যে থ্রু বল বাড়ালেন। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন স্পেন গোলকিপার উনাই সিমন। সঙ্গীর অপেক্ষা করলেন বারেলা, শেষে নিজেই শট নিলেন। সিমনের মাথার উপর দিয়ে মারা শট প্রতিহত হলো পোস্টে। গোলবঞ্চিত হলো ইতালি। তবে সেই বল জলের দেখা পেলেও কাজের কাজটাই হতো না, কারন বারেলা অফসাইডে ছিলেন।
ম্যাচের ২১ মিনিটে আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার এমারসনের উদ্দেশ্যে থ্রু বল, আবারো পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন সিমন। শট নেওয়ার মতো সুযোগ তৈরি করতে না পারায় এমার বল বাড়ালেন বক্সের কানায় থাকা বারেলাকে। প্রথমবার বল নিজের দখলে ঠিকঠাক নিতে না পারায় ফাঁকা পোস্ট পেয়েও গোলেই শট নিতে পারেননি পিএসজি মিডফিল্ডার। মিনিট চারেক পর ইতালিয়ান গোলকিপার জিয়ানলুইজি দনারুমা প্রমান করেন, কেন তার নামের পাশে ইতালির জার্সি গায়ে কখনোই ম্যাচে দুই গোল না খাওয়ার পরিসংখ্যান। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে দানি অলমোর উদ্দেশ্যে মাইকেল অর্যাবাল বল বাড়ালেন, সেই বল ভলি করলেন অলমো, তবে তার শট আটকে যায় লিওনার্দো বেনুচ্চির পায়ে। ফিরতি বলে শট নেন, এবার ঝাঁপিয়ে পড়ে তার শট ঠেকিয়ে দেন এসি মিলান গোলরক্ষক।
? Donnarumma denies Olmo… ?#EURO2020 pic.twitter.com/thGTGquGGa
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) July 6, 2021
এর বাইরে প্রথমার্ধের বড় ঘটনা, এমারসনের শট বারে লাগা। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার মিনিটখানেক আগে মাঠের বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে ভেতরে ঢোকেন লরেঞ্জ ইনসিনিয়া। তবে তাকে ক্রস করার জন্য বিন্দুমাত্র জায়গা দেননি সেজার আজপিলিকুয়েতা। ফলে তিনি বল বাড়ান এমারসনের উদ্দেশ্যে। চেলসি উইংব্যাকের কোনাকুনি শট প্রতিহত হয় পোস্টে। ফলে গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দুদল।
? Emerson ?????? gives Italy the lead at the end of the first half ?#EURO2020 pic.twitter.com/3JcUgxgX7i
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) July 6, 2021
বিরতি থেকে ফেরার মিনিট সাতেক পর গোলের সুযোগ তৈরি করে স্পেন। ইনসিনিয়াকে উদ্দেশ্য করে বারেলার বাড়ানো বল স্লাইড ট্যাকল করে ক্লিয়ার করেন আজপিলিকুয়েতা। রাইট উইংয়ে তার সেই লং বল ধরে ডি বক্সে ঢুকে যান অর্যাবাল। ডি বক্সের ভিতরে এসে গোলে শট নিতে না পেরে পাস দেন সের্জিও বুসকেটসকে। স্পেন অধিনায়ক বল দখলে না নিয়েই শট নেন। তার ডান পায়ের শট বারের সামান্য উপর দিয়ে গেলে গোলবঞ্চিত হয় স্পেন। তারপর ইতালির কাউন্টার অ্যাটাক, তবে ফেদ্রিকো কিয়েসার ডান পায়ের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন স্পেন কিপার উনাই সিমন।
আট মিনিট পর আর হতাশায় পুড়তে হয়নি কিয়েসাকে। স্পেন ডিফেন্সের ভুলে ডি বক্সের কানায় বল পেলেন, তারপর ভিতরে ঢুকে দুজনের মাঝখান দিয়ে শট নিলেন। ডানপায়ের কোনাকুনি শটে স্পেন গোলকিপারকে দর্শক বানিয়ে গোল করলেন ইতালির জুভেন্তাস স্ট্রাইকার।ফলে ইতালির দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইউরো সেমিফাইনালে গোল করলেন কিয়েসা। এছাড়া ইতালির হয়ে তৃতীয় গোল করে ফেললেন কিয়েসা। যার সবগুলোই আবার ইউরোতে। দুটো মূলপর্বে, একটা বাছাইপর্বে। ফলাফল ১-০ গোলে এগিয়ে ইতালি।
?? Chiesa fires Italy into the lead at Wembley! ⚽️#EURO2020 https://t.co/Ag4XxlIVMD pic.twitter.com/6GmFi1jCXA
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) July 6, 2021
মিনিট চারেক পর সমতায় ফেরার সুযোগ হাতছাড়া করে স্পেন। ইতালি ডিফেন্ডারদের মাথার উপর দিয়ে অর্যাবালের উদ্দেশ্যে বল বাড়ালেন কোকে। ফাঁকা বার পেয়েও,গোলকিপারের মাত্র কয়েক গজ সামনে থেকেও অর্যাবালের হেড চলে যায় গোলপোস্টের বাইরে। তিন মিনিট পর আবার কিয়েসার দুর্দান্ত ফুটবল নৈপুণ্য। ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে দমিনিক বেরার্দির উদ্দেশ্যে দারুন থ্রু বল, গোলের সুযোগ পেয়েও বেরার্দি সেই বলকে মারলেন স্পেন গোলকিপারের পায়ে। ফলে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করল ইতালি।
??? ?? close to an equaliser for Spain…#EURO2020 pic.twitter.com/uhZ5lijVbB
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) July 6, 2021
শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দশেক আগে দারুন এক গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান স্পেনের ‘সুপার সাব’ আলভারো মোরাতা। দানি অলমোর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলে ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে ঠান্ডা মাথায় ফিনিশ করলেন। ফলাফল সমতা, যে গোল ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়েছে। দুর্দান্ত ফুটবল পূর্ণতা পেলো যে গোলে। স্পেন জার্সিতে করে ফেললেন নিজের ২১তম গোল। ইউরোতে এ নিয়ে তার গোল হয়ে গেল ছয়। সঙ্গে সঙ্গে বনে গেলেন স্পেনের ইউরো ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এছাড়া তার জুভেন্টাস সতীর্থ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোর একাধিক আসরে তিন গোল করার রেকর্ড গড়লেন মোরাতা।
?? Álvaro Morata puts Spain level! ?#EURO2020 https://t.co/4Yb9f3zoDO pic.twitter.com/G9zPLd2ZVj
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) July 6, 2021
নির্ধারিত সময়ের বাকিটা চলেছে দুদলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। তবে কোথায় যেন একটু তাল কেটে গিয়েছিল দুদলেরই। ডি বক্সের সামনে এসে খেই হারিয়েছে দুদলের স্ট্রাইকাররা। ডিফেন্ডাররাও দারুন খেলেছেন, ফলে ১-১ গোলে সমতায় থেকে শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের খেলা। তারপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইউরো ইতিহাসে তৃতীয় দল হিসেবে টানা তিন ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে খেলল স্পেন।
অতিরিক্ত সময়ে দুদলই রক্ষণ সামলে আক্রমণে যায়। তবে সত্যিকারের কয়েকটা সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে স্পেন, তবে গোল আসেনি। পায়ে পায়ে ঘুরিয়েছে ইতালিকে, তবুও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। উল্টো ১১০ মিনিটে গোল করেন বেরার্দি, তবে অফসাইডের কবলে পড়ে সেই গোল বাতিল হয়ে গেলে হতাশায় পুড়ে ইতালির দর্শকরা। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। ইতালির জার্সিতে কখনোই দুই গোল না খাওয়ার রেকর্ড ধরে রাখল ইতালি গোলকিপার দনারুমা।
প্রথম শট নিতে আসেন ইতালির লুকাতেলি। প্রথম শটেই ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিলেন স্পেন কিপার উনাই সিমন। লুকাতেলির দেখানো পথেই হাটলেন দানি অলমো। তার ভাঁসানো শট চলে যায় বারের উপর দিয়ে। দ্বিতীয় শটে গোল করলেন ভেলুত্তি, তার মতোই গোল করেন ইতালির বেনুচ্চি, বের্নারদেস্কি, স্পেনের জেরার্দ মোরেনো, থিয়েগো। চতুর্থ শটে মিস করলেন মোরাতা, ইতালির হয়ে পঞ্চম শটে গোল করে জয় নিশ্চিত করলেন জর্জিনিও। ফলে নয় বছর পর ইউরো ফাইনালে ইতালি। এ নিয়ে টানা ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত ইতালি।