‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’- পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্কগুলির একটি হচ্ছে ‘সহোদর’দের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক সহযোগিতার, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার। ছোটবেলায় খেলার মাঠে যার সাথে একই টিমে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘মানিকজোড়’ হয়ে ছোটাছুটি করা, খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরও যদি সেই মায়ের পেটের ভাইকে একই ক্লাব বা জাতীয় দলের সতীর্থ হিসেবে পাওয়া যায়, কি চমৎকারই না ব্যাপার হয় সেটি।
এই যেমন, বৃহস্পতিবার ইউয়েফা নেশন্স লিগ সেমিফাইনালে ফ্রান্সের একাদশে খেললেন দুই ভাই লুকা হার্নান্দেজ ও থিও হার্নান্দেজ। ফ্রান্সের হয়ে ৪৭ বছর পর দুই সহোদর একই একাদশে খেলতে নামলেন। লুকা রাইট উইংব্যাক, থিও রাইট উইঙ্গার। ডানপ্রান্ত দিয়ে জুটি বেঁধে বেলজিয়ামের রক্ষণে আগুন ঝড়িয়েছেন দুইভাই। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ফ্রান্সের জয়সূচক গোলটি আসে ছোটভাই থিওর পা থেকেই; যার সুবাদে বেলজিয়ামকে হারিয়ে নেশন্স লিগ ফাইনালে পা রেখেছে ফ্রান্স।
ক্লাব ফুটবলে এমন সহোদরদের ছড়াছড়ি আছেই। তাদের অনেকে এক ক্লাবে, একই সাথে খেলেছেনও বটে। তবে এই লেখায় আমরা গুরুত্ত্ব আরোপ করছি থিও-লুকার মত সেইসকল সহোদরদের, যাঁরা আন্তর্জাতিক ফুটবলে জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন এবং পেয়েছেন উল্লেখযোগ্য সাফল্যও।
১. ইডেন হ্যাজার্ড ও থরগান হ্যাজার্ড
যে দেশের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে কাল ফ্রান্সকে ফাইনালে তুললেন থিও-লুকা, সেই বেলজিয়ামেই তো সম্ভবত এই প্রজন্মের সবচেয়ে খ্যাতিমান সহোদর জুটি খেলেন। ইডেন হ্যাজার্ড ও থরগান হ্যাজার্ড- ফুটবলপ্রেমী কারো বোধহয় এই দুই ভাইয়ের নাম অজানা নয়। ইডেন তো চেলসি কাঁপিয়ে এখন রিয়াল মাদ্রিদে; থরগান খেলছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। যদিও গতকাল স্কোয়াডে ছিলেন না ছোটভাই থরগান; তবে জাতীয় দলের হয়ে অহরহই এখন খেলতে দেখা যায় দুই ভাইকে।
২. মাইকেল লাউড্রুপ ও ব্রায়ান লাউড্রুপ
ডেনমার্কের ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে এই দুই ভাইকে গণ্য করা হয়। জুভেন্তাস, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো বড় বড় ক্লাব কাঁপিয়ে আসা বড় ভাই মাইকেল লাউড্রুপ অবশ্য বিশ্ব ফুটবলে একটু বেশি পরিচিত, কিন্তু রেকর্ড টানা চারবার ড্যানিশ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার জেতা ব্রায়ানও কম যাননা। দুজনই পেলে মনোনীত ‘ফিফা ১০০’ (১২৫ জন সর্বকালের সেরা ফুটবলার) তালিকায় স্থান পেয়েছেন। দুই ভাই মিলে জাতীয় দলের হয়ে ১৯৯৫ ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ শিরোপা জিতেছিলেন; এর আগে ১৯৯২ সালে ইউরো জিতেছিলেন ছোটভাই ব্রায়ান।
৩. আরউইন কোমান ও রোনাল্ড কোমান
বার্সেলোনার কোচ হিসেবে রোনাল্ড কোমানকে এখন কে না চেনে? বার্সেলোনার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও প্রায় কিংবদন্তী পর্যায়ের ফুটবলার ছিলেন কোমান। তাঁর বড়ভাই আরউইনের ক্লাব ক্যারিয়ার নেদারল্যান্ডসেই কেটে গেছে। তবে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে দুই ভাই একত্রে জিতেছিলেন ১৯৮৮ ইউরো শিরোপা।
৪. গ্যারি নেভিল ও ফিল নেভিল
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিখ্যাত ‘ক্লাস অফ ‘৯২’ এর কৃতী ছাত্র এই দুই ভাই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকেও এনে দিয়েছেন অনেক অনেক সাফল্য। গ্যারি তার পুরো ক্যারিয়ার ইউনাইটেডে পার করলেও ফিল নেভিল পরে এভারটনে চলে যান। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে একত্রে খেলেছেন এমন ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১টি ম্যাচ খেলেছেন গ্যারি ও ফিল। খেলা ছাড়ার পরও কোচিং-ধারাভাষ্য-সমালোচক হিসেবে ইংলিশ ফুটবলে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে ‘নেভিল ব্রাদার্স’দের।
৫. কোলো তোরে ও ইয়াইয়া তোরে
বড়ভাই কোলো আর্সেনালের ‘ইনভিন্সিবলস’ দলের সদস্য, ছোটভাই ইয়াইয়া টানা চারবার হয়েছেন আফ্রিকান ফুটবলার অব দ্য ইয়ার; দুই ভাই একসাথে মিলে রবার্তো মানচিনির ২০১১-১২ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপাজয়ী ম্যানচেস্টার সিটি দলের সদস্য। আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টের ইতিহাসে সেরা দুজন ফুটবলার এই তোরে ভাইরা। দেশের হয়ে দুজন একসাথে জিতেছেন ২০১৫ আফ্রিকান কাপ অব নেশনস শিরোপা; খেলেছেন বিশ্বকাপেও।
৬. স্যার ববি চার্লটন ও জ্যাক চার্লটন
সম্ভবত তালিকার সবচেয়ে সফল এবং সবচেয়ে বিশাল মাপের ফুটবলার এই দুই ভাই। কারণ তালিকায় এরাই একমাত্র সহোদর, যাঁরা একসাথে জিতেছেন একটি বিশ্বকাপ। ১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন স্যার ববি চার্লটন ও তাঁর ভাই জ্যাক চার্লটন। স্যার ববি তো ইংলিশ ফুটবলের সর্বকালের সেরাদেরই একজন- প্রথম ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে জিতিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাপ। জ্যাকের ক্লাব ক্যারিয়ার কেটেছে লিডস ইউনাইটেডে। লিডসের হয়ে এফএ কাপ, লিগ কাপ ও চ্যারিটি শিল্ড জিতেছেন জ্যাক।