মিরপুরে বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ে সিরিজে ২-০ তে সিরিজে এগিয়ে গেলো টাইগাররা। ৩১ বলে ৩৭ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন আফিফ হোসেন।
১২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের আঘাত। না, কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তৃতীয় বলে স্টার্কের করা বাউন্সারটা নাইম শেখের হেলমেটে গিয়ে আঘাত হানলে, কিছু মুহুর্তের জন্য তৈরী হয়েছিলো সংশয়ের। ফিজিও দৌড়ে মাঠে এলেও আত্মবিশ্বাসী নাইম জানিয়ে দিলেন, তার কিছুই হয়নি, সে প্রস্তুত লড়তে।তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে স্টার্কের করা ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে সৌম্য যখন ০ রানেই প্যাভিলিয়নের পথে, তখন বাংলাদেশি সমর্থকদের মনে সংশয়।
কিন্তু, তাদের সংশয় এসেই দূর করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। স্টার্ককে টানা তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন আজও জিততে চলেছেন টাইগাররা। সাকিব দুর্দান্ত শুরু এনে দিলেও পরের ওভারের প্রথম বলেই জশ হ্যাজলউডের ইনসুইংয়ে বোল্ড হয়ে ১৩ বলে ৯ রান করেই ড্রেসিং রুমে ফিরে যেতে হয়েছে নাইমকে। ব্যাটিংয়ে শেখ মাহেদি হাসান, হ্যাজলউডের করা বাকি পাঁচটা বলে নিতে পারেননি ১টি রানও। পরের ওভারে ২ টি ক্যাচ তুলে দিলেও ক্যাচগুলো লুফে নিতে পারেনি স্টার্ক এবং অ্যান্ড্রু টাই। পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৮/২।
মাহেদি এরপরে ক্যাচ তুলেছেন আরো দুবার, অজিদের করা এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাকিবকেও আউট দিয়েছেন আম্পায়ার। কিন্তু কোনোটাই যায়নি অজিদের পক্ষে। ভাগ্যদেবী এভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে জানলে হয়তো এই সফরেই আসতেননা অজিরা। এরআগে টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বাংলাদেশ সফরে আসা অজিরা আরো একটি সিরিজ হারবার পথে।অ্যান্ড্রু টাইয়ের নাকল বলে বোল্ড হয়ে ১৭ বলে ২৬ রান করে সাকিব যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, ততোক্ষণে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের করে নিয়েছে টাইগাররা। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬৪ রান, হাতে ৭ উইকেট, ইনিংসে বাকি ৬৯টি বল।
কিন্তু, ক্রিকেট যে ফানি গেইম সেটা আরো একবার প্রমাণ করতেই বোধহয় পরের ওভারে অ্যাস্টন আগারের বলে ওভাবে আউট হলেন টাইগার অধিনায়ক। আগারের বাইরে যাওয়া বলটাকে কাভারে ঠেলে দিতে গিয়ে যেভাবে ইনসাইডেজ হয়ে আউট হলেন রিয়াদ, সেটা যেনো ব্যাটিংয়ে তার খারাপ সময়টাকেই মনে করিয়ে দিয়ে গেলো আরেকটাবার।
এরপরে ফিরেছে মাহেদিও, বেশ কিছু উইকেটের সুযোগও তৈরী করেছে অজিরা। টানটান উত্তেজনাকর এই ম্যাচে যখন সবার মুখ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে, ফ্লাডলাইটের নীচে দাড়িয়ে ১৩তম ওভারের শেষ বলে দুপা এগিয়ে এসে টাইয়ের ফুল লেংথ বলটাকে আফিফের ফ্লিক করে হাঁকানো ছক্কাটা তখন মাত্র আলো ছড়ানো শুরু করেছে ক্রীড়াপ্রেমিদের মনে। ঐ বলটাতেই আলো ছড়িয়েছেন ক্যারিও। ছক্বা হতে যাওয়া বলটাকে বাউন্ডারিলাইনে উল্টোদিকে ডাইভ দিয়ে সেইভ করার সেই আপ্রাণ চেষ্টাটা তো ছিল আজকের দিনেরই সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। এরপরে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি অজিরা। সোহান আফিফের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয় ৫ উইকেটে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে অজিদের সংগ্রহ ১২১ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংসের সূচনা করতে ব্যাটিংয়ে জস ফিলিপ-অ্যালেক্স ক্যারি, বোলিং প্রান্তে শেখ মাহেদি হাসান। মঙ্গলবার মাহেদির করা ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন বাহাতি ক্যারি, এজন্যই হয়তো আজ ইনিংসের সূচনা করলেন ডানহাতি ফিলিপ। প্রথম ওভারে দুজনই খেললেন সমান তিনটি করে বল, ওভার শেষে রান বিনা উইকেটে ১।
পরের ওভারে বোলিংয়ে আগের ম্যাচের হিরো নাসুম আহমেদ। নাসুমকে যেভাবে রিভার্স সুইপ করে দুটি বাউন্ডারি হাঁকালেন ক্যারি, তাতে মনেই হলো না আজ স্পিনারদের নিয়ে খুব বেশী চিন্তিত অজিরা।তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে আবারও মাহেদি। ব্যাটিং প্রান্তে ক্যারি বলেই হয়তো অধিনায়ক মাহেদির হাতেই বল তুলে দিলেন আরো একবার। এবং, তৃতীয় বলে মাহেদিকে মিডঅনের উপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সৌম্যের হাতে বন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ক্যারি। পরপর দুই ম্যাচেই ক্যারিকে আউট করলেন মাহেদি। তিন ওভার শেষে অজিদের সংগ্রহ ১৩/১। মাহেদি ২ ওভারে ৩ রান দিয়ে ১ উইকেট।
পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে মুস্তাফিজ, প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিজকে স্বাগতম জানালেন ফিলিপ। কিন্তু চতুর্থ বলে মুস্তাফিজের স্লোয়ার কাঁটার বুঝতে না পেরে অফ স্ট্যাম্পের উপরে গিয়ে যেভাবে লেগ স্ট্যাম্পে বোল্ড হলেন ফিলিপ, তা যেনো পুরো অস্ট্রেলিয়া দলের ইনিংসেরই প্রতিকি চিত্র হয়ে থাকলো। ছয় ওভারের পাওয়ারপ্লে শেষে অজিদের সংগ্রহ ৩২/২। দশ ওভার শেষে ৫৩/২। ২৭ রান করে অপরাজিত সাম্প্রতিক সময়ে সেরা ফর্মে থাকা মিচেল মার্শ।
১৫তম ওভারে বোলিং করতে এসে দ্বিতীয় বলে মইসিস হেনরিকসকে আর্ম ডেলিভারিতে বোল্ড করে যখন প্যাভিলিয়নে পাঠাচ্ছেন সাকিব, ততোক্ষণে মার্শ-হেনরিকস জুটি করে ফেলেছে ৫২ বলে ৫৭ রান। ১৫ ওভার শেষে অজিদের সংগ্রহ ৯০/৩। সাকিব ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ টি উইকেট। ৩৮ রান করে তখনও অপরাজিত মিচেল মার্শ।
১৭তম ওভারে বল করতে এসে নিজের প্রথম বলেই মিচেল মার্শকে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের ক্যাচে পরিণত করেছেন শরিফুল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করা মিচেল মার্শ যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, ততোক্ষণে খেলে ফেলেছেন ৪২টি বল। এরপর ইনিংসে থিতু হতে পারেননি আর কেউই। শেষ অব্দি অজিদের সংগ্রহ ১২১ রান। মুস্তাফিজ ২৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ টি উইকেট।
পুরো ইনিংসেই স্পিনারদের বলে ভুগতে থাকা অজিরা আজও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। স্পিনারদের করা ১১ ওভারে রান নিতে পারেনি ২৮টি বলেই। অজিদের ভুগিয়েছে পেসাররাও। এক মার্শ ছাড়া সাবলীলভাবে পেসারদের খেলতে পারেনি আর কেউই্। প্রথম ইনিংসে অজিদের খেলা ৪৯টি ডট বল তো তাদের মাথা তুলে দাড়াতে না পারার গল্পই বলে যায়।
টানা ২টি ম্যাচ হেরে সিরিজ হারার পথে অজিরা। সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে শুক্রবার মাঠে নামবে দুই দল।