দ্য বিউটিফুল গেইম; ফুটবলের নব্বই মিনিট ছড়ায় উত্তেজনা, আর তাতে যদি থাকে বাড়তি রসদ তবে বাংলা প্রবাদ মেনেই বলা যায়, ‘জমে ক্ষীর’। মঙ্গলবার রাত দশটা, ইউরোর রাউন্ড অব সিক্সটিনে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড আর জার্মানি। দুই হেভিওয়েট দলের লড়াই ছাপিয়ে ইতিহাসের অপেক্ষায় ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম; ইতিহাসের তিনশোতম ম্যাচ, ম্যাচের পয়লা মিনিট থেকেই ইতিহাসের অংশ হবে ওয়েম্বলি. তবে ইতিহাস আর অতীত ছাপিয়ে নজর মূলত থাকবে ম্যাচের দিকেই। খেলা শুরুর আগে যে পাঁচ বিষয় জেনে নিতে পারেন আপনি।
কোনো দলই ফেভারিট নয়
গ্রুপ পর্বের সেরা হয়েই সুপার সিক্সটিনে ইংল্যান্ড, তাদের বড় শক্তির জায়গা রক্ষণ। এখন পর্যন্ত কোনো গোল হজম করেনি থ্রি লায়ন্স। ইংলিশ ভক্তদের অবশ্য চিন্তার জায়গাও আছে। সেটা হচ্ছে সুযোগ তৈরি করতে না পারা আর তৈরি হওয়া সুযোগ কাজে লাগানোয় ব্যর্থতা। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের গোল সংখ্যা দুই, হিসেব বলছে ইউরোর ইতিহাসে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলগুলোর মধ্যে সর্বনিন্ম।
সীমান্তে যে প্রান্তে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড তার ঠিক অপরপ্রান্তে জার্মানি। হাঙ্গেরীর বিপক্ষে শেষ মুহুর্তের ড্রতে গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা হয়ে সুপার সিক্সটিনে জার্মানরা। জার্মানির কী করবে-না করবে সেটা অনুমান করা কঠিন; ফ্রান্সের বিপক্ষে ১-০ গোলের হারের ম্যাচেও জার্মানি খুব একটা খারাপ খেলেনি। পরের ম্যাচে পর্তুগালের ৪-২ গোলে জয় দিয়ে ফেরা। জার্মানদের ভোগাচ্ছে তাদের রক্ষণ, তিন ম্যাচের কোনোটাইতেই ক্লিনশিট রাখতে পারেনি তারা।
খেলা হবে ডাগআউটেও
দুই দলের দুই ম্যানেজারের থাকবে নিজেদের প্রমাণের তাড়না। মাঠ ছাপিয়ে তাই লড়াইটা হবে মাঠের বাইরেও। ইউরোর ম্যাচ, মাঠে ইংল্যান্ড-জার্মানি, তাই ফিরে ফিরে আসছে ১৯৯৬ সালের ইউরোর সেমিফাইনাল। ইংলিশদের ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগ্যাট বলেই হয়তো, কারণ দুই যুগেরও বেশি সময় আগে সাউথগ্যাটের পেনাল্টি মিসেই জার্মানির সাথে সেমিফাইনাল হেরে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারের আসরের হট ফেভারিট ইংলিশরা, নিশ্চিতকরেই হয়তো সাউথগ্যাট প্রহর গুণবেন প্রতিশোধের।
জার্মানির ডাগ আউটে জোয়াকিম লো’র শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। ঘোষনা দিয়েছিলেন আগেই, নিশ্চিতকরেই হয়তো জার্মান প্রশিক্ষিক শেষটা রাঙ্গাতে চাইবেন ক্যানভাসের সব রঙ দিয়ে। লো’র সর্বোচ্চ সাফল্য দুই হাজার চৌদ্দর বিশ্বকাপ জয়। তবে ২০১৬ সালের ইউরোর সেফিফাইনাল থেকে বিদায় আর প্রায় ৮ দশক পর ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব পেরুতে না পারা তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনেই দাঁড় করিয়েছে। তবে শেষটা যদি হয় সাফল্য দিয়ে তবে মাঝের ব্যর্থতার কথা আর কেই-বা মনে রাখতে চাইবে। নয়তো মুহূর্তের কবি হয়ে লো’কে বিদায় বলতে হবে।
দল নির্বাচন নিয়ে আছে ধাঁধা
টপক্লাস অ্যাটাকিং সাইড নিয়েও ইংল্যান্ডের গোল খরা। বিগ ম্যাচের আগে প্লেয়িং ইলেভেন নিয়ে আছে প্রশ্ন। কে খেলবেন, কাকে খেলানো হবে? অ্যাস্টন ভিলা স্টার জ্যাক গ্রেলিশ হতে পারে ইংলিশদের ভাবনার সহজ সমাধান, কিংবা জ্যাদন সাঞ্চোকে বেশী সময় খেলানো। চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা বুকায়ো সাকা কি দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখবেন? অনেকগুলো প্রশ্ন; উওর খুঁজতে গ্যারেথ সাউথগ্যাটকে বেশ কষ্টই করতে হবে।
জোয়াকিম লো খুব ভাবনাহীন থাকবেন সেটাও বলা যাচ্ছে না। হাঙ্গেরির বিপক্ষে শেষ মুহুর্তে গোলটা করেছিলেন লিওন গোরেৎজকা। দলে জায়গা পাওয়ার দাবি তিনি সেখানেই রেখেছেন। থমাস মুলার যদি ফিট থাকেন তবে তার অভিজ্ঞতাকেতো আর ছুঁড়ে ফেলার সুযোগ নেই। লো’কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে জামাল মুসিয়ালাকে নিয়ে। ১৮ বছর বয়স, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছেন ইংল্যান্ডে, হাঙ্গেরির বিপক্ষে শেষদিকে নেমে আলো কেড়েছেন, তাকে নিয়ে যে দোদুল্যমান অবস্থায় পড়তে হবে জার্মানদের সেটা হয়তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জয় শুধু জয় নয়
এই একটা জয় ফাইনালের রাস্তা করতে পারে পরিস্কার। ইউরোর ড্র সেকথাই বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইংল্যান্ড আর জার্মানির মধ্যে জয়ী দলের সুপার এইটে প্রতিপক্ষ হবে সুইডেন অথবা ইউক্রেন। সেমিফাইনালে উঠলে প্রতিপক্ষ হতে পারে চেক রিপাবলিক অথবা ডেনমার্ক। অর্থাৎ বলাই যায় সুপার সিক্সটিনের ম্যাচই অঘোষিত সেমিফাইনাল। যেকোনো কিছুই হতে পারে তবে শক্তিমত্তা নিয়েওতো ভাবা যায়, যেখানে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়েই থাকবে ইংল্যান্ড আর জার্মানি।
হেড টু হেড
১৯৬৬ সালে জার্মানিকে হারিয়েই বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর আর কোনো টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বেই জার্মানদের হারাতে পারেনি থ্রি লায়ন্স। শেষবার দুদলের দেখায় ৪-১ গোলের জয় জার্মানদের, ২০১০ বিশ্বকাপে। স্বাগতিক দল হওয়ায় কিছুটা হলেও সুবিধা পাওয়ার কথা ইংল্যান্ডের। ওয়েম্বলিতে শেষ ১৫ ম্যাচে তাদের হার কেবল ২ ম্যাচে।
পরিসংখ্যান দিয়ে কী আসে যায়? খেলা হবে মাঠে; শক্তির বিচারে দুদলই নিজেদের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা, চেষ্টা সবশেষে মিলবে ফলাফল। যেখানে জিততে পারে ইংল্যান্ড বা জার্মানি যেকেউ।