কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইরানকে একপ্রকার উড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। খলিফা ইন্টারন্যশনাল স্টেডিয়াম হ্যারি কেইনের দলের জয় ৬-২ গোলে। ইংল্যান্ডের পক্ষে জোড়া গোল করেছেন বুকায়ো সাকা; একটি করে গোল করেছেন জুড বেলিংহাম, রাহিম স্টার্লিং, মার্কাস রাশফোর্ড এবং জ্যাক গ্রিলিশ। ইরানের হয়ে জোড়া গোল করেছেন মেহেদী তারেমি।
ইরানের ডিভেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আদৌ কাজে দেবে কিনা সেই সন্দেহ সবসময়ই ছিলো। সন্দেহটা ইরানের জন্য রীতিমতো বিভীষিকায় বদলে যেতে সময় লেগেছে মিনিট দশেক! আরো নির্দিষ্ট করে বললে প্রথমার্ধের ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট। দশ মিনিটের ব্যবধানে ৩ গোল খেয়েছে ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান।
ইংলিশদের প্রথম গোলের স্কোরার জুড বেলিংহাম । বাঁম দিক থেকে লেফটব্যাক লুক শ’র ক্রস ছিলো মাপা। ছয়ফুট এক ইঞ্চির বেলিংহাম লাফিয়েছিলেন আরো তিন ফুটের মতো। সবমিলে আটগজ দূর আর প্রায় নয় ফুট উঁচু থেকে করা বুলেট গতির হেড যখন ইরানের গোলবারের ডান দিকের টপ কর্নারে যাচ্ছে, ততক্ষণে গোলকিপার দর্শক বনে গেছেন। ১৯ বছরের জুড বেলিংহামের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল, থ্রি লায়ন্সের লিড।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় গোলের উৎসও প্রথমটার মতো লেফট উইং, ম্যানচেস্টার আর্সেনাল কম্বিনেশন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লেফটব্যাক লুক শ’র নেয়া কর্নার হেড করে ডি বক্সে নামিয়েছেন তারই ইউনাইটেড টিম মেট হ্যারি ম্যাগুয়ের, সেই বলে চোখের পলকে শট নিয়েছেন আর্সেনাল উইঙ্গার বুকায়ো সাকা।
তৃতীয় গোল ৪৫ মিনিটে। স্কোরার রাহিম স্টার্লিং। মিডফিল্ডে জুড বেলিংহাম বল পেয়ে আক্রমণের সূচনা করে, বল দেন রাইট উইংয়ে থাকা অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে। ডি বক্সের ভেতরে নিচু ক্রিস পাঠান কেইন, বাকি কাজটুকু করেন স্টার্লিং।
প্রথমার্ধের শুরুতেই নাকে ব্যাথ্যা পেয়েছিলেন ইরানের গোলরক্ষক, তার চিকিৎসায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়ায় অতিরিক্ত সময় নির্ধারিত হয় ১৪ মিনিট, যা বিশ্বকাপের সর্ব্বোচ্চ। যদিও ওই অতিরিক্ত সময়ে আর গোল করতে পারেনি ইংল্যান্ড। না পারলেও কি? বিরতির আগেই যে ৩-০ গোলে এগিয়ে থ্রি লায়ন্স!
ইনজুরি দেখা গিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধেও, ইনজুরির জন্য ম্যাগুয়ের যখন মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬৭ মিনিট। ইংলিশরা ততক্ষণে পূরণ করে ফেলেছে গোল স্কোরের হালি; খেয়েও ফেলেছে এক গোল। চতুর্থ গোলের মালিক সাকা, যার পা থেকে এসেছিল দ্বিতীয় গোল। ইরানের হয়ে এক গোল শোধ দিয়েছেন ইরানি নাম্বার নাইন মেহেদী তারেমি।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে একইসঙ্গে ৪টি সাবস্টিটিউট করান ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। ম্যাগুয়েরের জায়গায় নামেন এরিক ডায়ের, স্টার্লিংয়ের জায়গায় জ্যাক গ্রিলিশ, ম্যাসন মাউন্টের জায়গায় ফিল ফোডেন এবং সাকার বদলি মার্কাস রাশফোর্ড। মাঠে নামার মিনিটখানেকের মধ্যেই স্কোরশিটে নাম তোলেন এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড। ডান পাশ থেকে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে বাঁ পায়ের নিখুঁত ফিনিশিংয়ে রাশফোর্ড গোল ব্যবধান করেন ৫-১।
যখন মনে হয়েছিল ওখানেই ম্যাচের ফলাফলের ইতি ঘটবে, তখনই মঞ্চে গ্রেলিশের আগমন। বদলি হিসেবে নামা রাশফোর্ড গোল করতে পারলে তিনিও বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? ম্যাচের ৯০ মিনিটে গোল করে ইংলিশদের ৬-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার। ম্যাচের ঘটনা তখনও শেষ হয়নি, প্রথমার্ধে অতিরিক্ত সময় ছিল ১৪ মিনিট; দ্বিতীয়ার্ধে ১০। তবুও সেখানে খেলা হয়েছে ১৩ মিনিট, কারণ ম্যাচের শেষ মিনিটে ইরান পেনাল্টি পেয়েছে এবং সেই পেনাল্টি থেকে গোলও করেছে। ইরানের দ্বিতীয় গোলও এসেছে প্রথম গোল স্কোরার তারেমির পা থেকে।