নিউজিল্যান্ড সিরিজের পঞ্চম টি-টোয়েন্টি চলাকালীন ঘটনা। উইকেট পেলেন শরিফুল ইসলাম, ফিল্ডিংয়ে দাঁড়ানো তাসকিন আহমেদ ছুটে এলেন তাঁর দিকে। এরপর বুকে বুক লাগিয়ে যে উদযাপনটি করলেন, তা বাংলাদেশ সমর্থকদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল ২০১৫ বিশ্বকাপের স্মৃতির করিডোরে। ভারতের বিপক্ষে এমসিজিতে এই তাসকিনের সাথেই তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার যে উদযাপনটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অংশ হয়ে গেছে।
সেদিন তাসকিন ছিলেন সদ্য জাতীয় দলে আসা এক তরুণ, মাশরাফী ছিলেন তার সিনিয়র। ৬ বছর পর বদলেছে দৃশ্যপট; এখন শরিফুল তরুণ, তাসকিন তাঁর সিনিয়র। তবে কি মাশরাফী যেভাবে তাসকিনের শুরুর সময়টায় তাকে আগলে রাখতেন, সাহস দিতেন, উৎসাহ দিতেন, এখন তাসকিনও শরিফুলের জন্য সেই একই ভূমিকা পালন করছেন?
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ (বুধবার) সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। কথোপকথনে তাসকিনের বিশ্বকাপ-ভাবনা, প্রস্তুতি প্রভৃতি প্রসঙ্গের পাশাপাশি সেই উদযাপনের প্রসঙ্গও উঠল। উত্তরে তাসকিন বললেন, বিশ্বকাপ দলে তাদের দুজনেরই অন্তর্ভুক্তির খুশিতে শরিফুলের মাথাতেই নাকি খেলেছিল উদযাপনের ‘আইডিয়া’।
“আমাকে শরিফুল বলছিল বারবার যে, ভাই একটা সেলিব্রেশন করা দরকার, বিশ্বকাপে আমরা দুজনেই আছি। আমি বললাম, দেখ ওভাবে তো আমার কখনো সেলিব্রেশন করা হয়নি। একবারই করা হয়েছে মাশরাফি ভাইয়ের সাথে, করলে ওটাই করতে পারিস। ও বলল যে, ঠিক আছে“- উদযাপন প্রসঙ্গে তাসকিন।
তবে বিশ্বকাপেও দুই পেসারের এমন উদযাপন দেখা যাবে কিনা, সে প্রসঙ্গে অবশ্য কিছু বলেননি তাসকিন।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন তাসকিন; আছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে। প্রস্তুতিটা কি মনমতো নিতে পেরেছেন এই ফাস্ট বোলার? জবাবে তাসকিন বলেছেন-
“আমি অনেক খুশি যে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছি। কন্ডিশনের কারণে লাস্ট দুইটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পারিনি কিন্তু শেষ একটা ম্যাচ খেলা হয়েছে। এর বাইরে বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ও টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে নিয়মিত কাজ করছি। প্রস্তুতির জন্য আমরা ওখানে গিয়ে ১০ দিন পাচ্ছি। তিনটার মতো প্র্যাকটিস ম্যাচও পাবো। আমার বিশ্বাস দল হিসেবে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো”
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কন্ডিশন অনুযায়ী বোলিং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিতে চান এই ফাস্ট বোলার।
“টি-টোয়েন্টি খেলাটাই এমন যে, কন্ডিশন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা ও তাঁর প্রয়োগ করতে হবে। যেমন, যে উইকেটে কাটার কম ধরে সেখানে ইয়র্কার বা লেংথ বলের প্রয়োগটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই এটি একটি আইসিসি ইভেন্ট, মাথায় থাকবে ফ্ল্যাট ট্র্যাক বা স্পোর্টিং উইকেট হবে। চ্যালেঞ্জিং হবে বোলারদের জন্য। তবে পরিকল্পনা সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারলে ভালো করার সুযোগও থাকবে”- আরো বলেছেন তাসকিন।
এর আগে কোনদিন ওমান বা আরব আমিরাতে খেলার সুযোগ হয়নি তাসকিনের। প্রথমবার এই কন্ডিশনে নিজের গতির ঝড় তুলতেও মুখিয়ে রয়েছেন তিনি।
“আমি খুবই উচ্ছ্বাসিত, কারণ ওমানে এর আগে আমার কখনো খেলতে যাওয়া হয়নি। এমনকি দুবাইতেও যে ইভেন্ট গুলো হয়েছে আমি এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলিনি। আমার জন্য ওমান ও দুবাইতে খেলাটা একদম নতুন হবে। যদি সুযোগ হয়, আমি চাই ভালো কিছু উপহার দিয়ে ম্যাচ জেতানোর।“-জানান তাসকিন।
২০১৬ তে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তাসকিন। বিশ্বকাপের মাঝপথে বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে গেছিলো তাঁর। ২০১৯ বিশ্বকাপ আবার খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। বিশ্বকাপ মানেই তাসকিনের দুঃসহ সব স্মৃতি। দুয়ারে যখন আরেকটি বিশ্বকাপ, সেই স্মৃতিগুলো কি তাড়া করছে তাসকিনকে? উত্তরে তাসকিন বলেছেন,
“সত্যি কথা বলতে দুটো স্মৃতিই আলাদা আলাদা। তবে সেগুলো এখন অতীত, আমি এখন বর্তমানেই নজর দিতে চাই। সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ রাখে আর আমি যেন ভালো করতে পারি।“