৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

‘কুলনেস’, ‘প্যাশন’ ও ‘পাগলামি’র এক মিশ্রণ আমি: নিগার সুলতানা

- Advertisement -

স্কুলে থাকতে নাকি সবসময় ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করতেন। যখন জাতীয় দলে এলেন, বড়ভাই নাকি বলেছিলেন, “দেখিস তুইই ক্যাপ্টেন হবি”

ক্যাপ্টেন হওয়ার আশা তো সবাই করে, তিনিও করেছিলেন। তবে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তা পেয়ে যাবেন নিজেও ভাবেননি, যেখানে দলে রুমানা আহমেদ, সালমা খাতুন, জাহানারা আলমদের মতো সিনিয়ররা আছেন।

তবে মহামারীর পর যখন বাংলাদেশ নারীদের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাঠে গড়ালো, তখন নিগার সুলতানা জ্যোতিই পেলেন অধিনায়কত্বের ভার, এবং সেই দায়িত্বে এখনো পর্যন্ত শতভাগ সফল এই উইকেটকিপার ব্যাটার। জিম্বাবুয়েকে ৩-০তে ধবলধোলাই করার পর নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক অসাধারণ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ তাঁর নেতৃত্বে।

আইসিসি ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিগার সুলতানা তুলে ধরেছেন এই জয়, তাঁর অধিনায়কত্ব, দল নিয়ে নিজের ভাবনা, মহামারীর দুঃসহ সময়ে নিজেদের সামলানো- সবকিছু।

“অসাধারণ একটি ম্যাচ ছিলো। আমি এখনো যখন মুহুর্তটির কথা ভাবি চোখ বন্ধ করে ফেলি। (হাসি)”– পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ সম্পর্কে বলে উঠলেন নিগার।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টস করছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি

২০১১ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পরও বাংলাদেশ নারী দল ওয়ানডে খেলার সুযোগ পায় খুব কম। ওয়ানডে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বেও কোনদিন খেলার সুযোগ পায়নি তারা। তবে এবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে, আর বিশ্বকাপে খেলা মানে বিশ্ব ক্রিকেটে আলাদা পরিচিতি যা হয়তো ডেকে আনবে আরো অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ।

“বাছাইপর্বে আমরা ভালো শুরু পেয়েছি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বকাপে উঠতে পারলে আমরা অনেক বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারবো।” 

এতো কমবয়সে এতো সিনিয়র পরিপূর্ণ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, পারফর্ম করিয়ে নিচ্ছেন। কিভাবে পারছেন নিগার? জবাবে দিলেন মজার এক উত্তর-

“আমার মধ্যে ‘কুলনেস’, ‘পাগলামি’ ও প্যাশনের একটি মিশ্রণ রয়েছে- আমি মাঠের মধ্যে অনেক পাগলাটে সিদ্ধান্ত নেই, তবে সেগুলো কাজে লেগে যায়, (হাসি) বেশিরভাগ সময়ই কাজে লেগে যায়।”

“একজন উইকেটকিপার পুরো মাঠ দেখতে পায়, উইকেট দেখতে পায়। কাজেই উইকেটকিপারের জন্য অধিনায়কত্ব করাটা খুব সহজ হয়ে যায়। এবং আমার মনে হয় উইকেটকিপিংয়ের জন্যই আমি কনফিডেন্স পাই আমার ব্যাটিংয়েও।”

“দলে বেশ কয়েকজন আছেন যারা অতীতে ক্যাপ্টেনসি করেছেন। আমি ভাবিনি তাদের টপকে আমি এতো তাড়াতাড়ি দায়িত্ব পাবো। তবে আমি সবসময় আমার দায়িত্ব উপভোগ করি, দলে থাকা প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করি।” 

দলে নিগারের সাথে রয়েছেন সাবেক অধিনায়ক সালমা-জাহানারারাও

এমনিতেই যারা ম্যাচ খেলার সুযোগ কম পান, মহামারির সময়ে প্রায় দেড়বছর তারা পুরো সময় ঘরে বসে ছিলেন। সেই সময়টা কিভাবে কাটিয়েছেন তাও বললেন নিগার।

“টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ঘরে বসে থাকার ঐ সময়টা খুব কঠিন ছিলো। কেউ বুঝতে পারছিলাম না কি করবো, বাইরেও যেতে পারছিলামনা অনুশীলনের জন্য। অনেক মেয়েদের বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যরা ঘরোয়াভাবে তাদের অনুশীলনে সাহায্য করতেন। আমার বাবা তো প্র্যাক্টিস নেট না পেয়ে মাছ ধরার জাল দিয়ে নেট বানিয়ে আমাকে নিয়মিত বল ছুঁড়তেন। এবং বলগার্ল কে ছিলো জানেন? আমার মা!”

“৬ মাস পর আমরা অনুশীলন এবং ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই। তখন আমার মনে হয় আমরা সত্যিকারভাবে আমাদের ব্যক্তিগত শক্তি-দূর্বলতার ওপর কাজ করার সুযোগ পাই। আমরা একে অপরের সাথে অনেক খেলেছি। অনেক ঘরোয়া ম্যাচ খেলেছি কাজেই একে অপরকে খুব ভালোমত চিনি। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হচ্ছিলো না। এবছর জিম্বাবুয়ে সফরে আসার আগে আমরা জানতামও না যে আসবো। যখন জানতে পারলাম, তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে এই সুযোগটা সবাই কাজে লাগাবো।”

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ নারী দল আজ মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্রের।

 

 

 

 

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img