২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, শুক্রবার

ক্রোয়েশিয়া ৩-৫ স্পেন, রেকর্ড গড়ে ইউরোর শেষ আটে স্পেন

- Advertisement -

রেকর্ডগড়া মাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-৫ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে স্পেন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় সমতা ছিলো ৩-৩ গোলে। ম্যাচের ১০০ এবং ১০৩ মিনিটে দুই গোল করেন আলভারো মোরাতা এবং বদলি ফুটবলার মিকেল ওরজাবাল। টানা দুই মাচ ৫ গোল করে নতুন রেকর্ড গড়েছে লুইস এনরিকের স্পেন।

ছবি: টুইটার

কোপেনহেগেন, ইউরো রাউন্ড অব সিক্সটিন, ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি স্পেন। প্রথম বিশ মিনিটে একটা দলই ফুটবল খেলেছে, স্পেন। ফুটবল খেলা নয়, ক্রোয়েশিয়ার কাজ ছিলো স্পেনকে আটকানো অথবা তাদের খেলতে না দেয়া। মিডফিল্ডের দখল কিংবা উইংয়ের ব্যবহার, ক্রোয়াটদের হিমশিম খেতে হয়েছে স্প্যানিশদের সামলাতে। ওর মধ্যেই অবিশ্বাস্য এক কান্ড করে বসেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন। মিডফিল্ডের বাম দিকে থেকে, প্রায় মাঝরেখা বরাবর জায়গা থেকে ব্যাকপাস করেন পেদ্রি। সিমনের তিরিশ গজের মধ্যেও ছিলেন না কোন ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড়। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের মতো সিমনের মাথাও “হ্যাং” করেছিলো কিনা কে জানে!! ডান পায়ে বল রিসিভ করতে গিয়ে শেষ মূহুর্তে চোখ সরিয়ে নিলেন। স্প্যানিশদের চমকে দিয়ে, দর্শকদের থমকে দিয়ে, বল জালে!!

ছবি:টুইটার

ততক্ষণে ডগআউট বসা স্পেন কোচ লুইস এনরিকে পানির বোতল দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টায়। যা দেখেছেন হয়তো বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না!! আর কেনই বা বিশ্বাস হবে, এই পর্যায়ের ফুটবলে এমন গোল দেখাও অবিশ্বাস্য। চলতি ইউরোর নবম আত্মঘাতী গোল, যা রেকর্ডতো বটেই, আগের ১৫টি ইউরো মিলিয়েই আত্মঘাতী গোল হয়েছিলো নয়টা!!

প্রথমার্ধে স্পেনের কাছে বলের দখল ছিলে ৭৩ শতাংশ, গোল শট ১১টি, ক্রোয়েশিয়ার ১৩৮ পাসের জায়গায় স্প্যানিশদের পাস ছিলো ৩৬২!! সম্পূর্ণ দাপট দেখানো বলতে যা বোঝায়, সেটাই করেছে স্পেন, প্রত্যাশিতভাবেই সমতা ফিরিয়েছে ৩৮ মিনিটে। বক্সের দুই প্রাস্ত থেকে স্পেনের একের পর এক পাসে খেই হারিয়েছিলো ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ। বক্সের ভেতরে বাম দিকে বল পেয়ে শট নেন আত্মঘাতী গোলের ব্যাকপাস করা পেদ্রি। ক্রোয়াট গোলকিপার পেদ্রির শট ফিরিয়ে দিলেও পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গায় বল পেয়ে যান পাবলো সারাবিয়া। রিসিভ করারও প্রয়োজন মনে করেননি, জোড়ালো শটে বল জালে, ক্রোয়েশিয়া ১-১ স্পেন; ওটুকুই ছিলো প্রথমার্ধে।

ছবি: টুইটার

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিড নেয় স্পেন। দুই উইঙ্গার বারবার জায়গা বদলে বেশ বিপাকেই ফেলে দেয় ক্রোয়েশিয়া ডিফেন্সকে। বামদিক থেকে ডিবক্সে মাপা ক্রস করেন ফেরান তোরেস, মার্কারকে বোকা বানিয়ে হেড করেন সেজার আজপিলকুয়েতা। চেলসি ডিফেন্ডারের স্প্যানিশ ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল, ২-১ গোলে এগিয়ে স্পেন।

ছবি: টুইটার

ক্যারিয়ারের প্রথম গোল এমনিতেই বিশেষ, স্পেনের জন্যেও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন ২৭তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা আজপিলকুয়েতা। গোল করেছেন ৩১ বছর ৩০৪ দিন বয়সে, সবচেয়ে বেশি বয়সে ইউরোতে গোল করা স্প্যানিশ ফুটবলার এখন সেজার আজপিলকুয়েতা।

ছবি: টুইটার

ম্যাচে সমতা ফেরানোর মতো পরিষ্কার সুযোগ তৈরী করে না পারলেও, হাফ চান্স পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ফিনিশিংয়ের অভাবে গেল বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টদের সমতায় ফেরা হয়নি। উল্টো গোল খেয়ে বসে ৭৬ মিনিটে। নিজেদের হাফের বাম দিকে সেন্টার লাইনের শেষ মাথায় ফ্রি-কিক পায় স্পেন। অতদূর থেকে আর কি হবে!! এই ভেবেই কিনা একটু যেনো গা ছাড়া দিয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। সেই সুযোগটাই নিয়েছে স্পেন। বাম থেকে আড়াআড়ি, একেবারে ডানদিকে সেন্টার হাফের একটু আগে ফেরান তোরেসকে খুঁজে পায় ফ্রি-কিক। ক্রোয়াট লেফটব্যাক ইয়োসকো গার্দিওলকে গতিতে পেছনে ফেলে  বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে ক্রোয়াট বক্সে ঢুকে যান তোরেস। ঠান্ডা মাথায় ফিনিশ করেন, তিন একের লিড পায় স্পেন। ম্যাচ বাকি ৫ মিনিট।

যারা ভেবেছিলেন স্পেন জিতে গেছে, তাদের জন্য চমক ছিলো পরের ৬ মিনিটে, অবিশ্বাস্যভাবে দুই গোল করে খেলা অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। দুই বদলি খেলোয়াড় মিসলাভ ওরসিচ এবং মারিও পাসালিচ নাম তোলের স্কোর শিটে। গোলমুখের জটলা থেকে ৮৫ মিনিটে ক্রোয়াটদের দ্বিতীয় গোল করেন ওরসিচ। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় ক্রোয়েশিয়া।

ছবি: টুইটার

বাম প্রান্ত থেকে উড়ে আসা ক্রসে হেড করে বিশ্বকাপ ফাইনালিস্টদের তৃতীয় গোল করেন পাসালিচ। ইউরোতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তিন গোল হজম করলো তিনবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ২০০০ সালে প্রথমবার ইউরোতে তিন গোল হজম করেছিলো স্পেন, যদিও সেই ম্যাচ ৪-৩ গোলে যুগোস্লাভিয়ার সাথে জিতেছিলো স্প্যানিশরা।

৯৬ মিনিটে চতুর্থ গোল করার দারুণ সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া, স্পেনকে বাঁচিয়েছেন প্রথমার্ধে আত্মঘাতী গোল খাওয়ানো গোলকিপার উনাই সিমন। পেনাল্টি স্পটেরও সামনে থেকে নেয়া আন্দ্রে ক্রামারিচের শট ঠেকিয়ে দেন সিমন। এরপর আবারো স্প্যানিশ ম্যাজিক, ৪ মিনিটে দুই গোল। পাক্কা একশো মিনিটে স্পেনের চতুর্থ গোল করেন আলভারো মোরাতা। তার পরেই দুই বদলি খেলোয়াড়ের কম্বিনেশনে পঞ্চম গোল পায় স্পেন। ডানপ্রান্ত থেকে দানি ওলমোর ক্রস ডিবক্সের ভেতরে নিয়ন্ত্রনে নেন আরেক বদলি মিকেল ওরজাবাল। ডিফেন্ডারকে কোন রকম সুযোগ না দিয়ে, গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে, কাছের পোস্টে গোল করেন ওরজাবাল।

ছবি: টুইটার

ততক্ষণে ম্যাচের স্কোরলাইন ক্রোয়েশিয়া ৩-৫ স্পেন, ইউরোর দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ গোলের ম্যাচ। রেকর্ডটা ৯ গোলের, ১৯৬০ সালে ফ্রান্স-যুগোস্লাভিয়া ম্যাচে; চার গোল হজম করে ফ্রেঞ্চদের পাঁচ গোল দিয়েছিলো যুগোস্লাভিয়া। যদিও ততক্ষণে আরেক রেকর্ড গড়ে ফেলেছে স্পেন, প্রথম দল হিসেবে ইউরোতে টানা দুই ম্যাচে ৫ গোল!! এই দল কোয়ার্টারে খেলবে না তো কেন দল খেলবে? ফেভারিটের মতোই ইউরোর শেষ আটে স্পেন।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img