টাইগারদের পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন, অফিশিয়ালি দায়িত্ব নিয়েছিলেন; দুই হাজার বিশ সালের একুশ জানুয়ারি। দায়িত্ব নিতে না নিতেই করোনা প্যান্ডেমিক, কতটুকুই বা কাজ করতে পেরেছেন। যতটুকুই করেছেন, টুকটাক প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। একই সাথে শোনা যাচ্ছে, টিম সংশ্লিষ্টদের সাথে বিভিন্ন সময়ে গিবসন নাকি তারই স্বদেশী কোর্টনি ওয়ালশের কাজের সমালোচনাও করেছেন!
কোর্টনি ওয়ালশ সম্পর্কে একই সমালোচনা বিসিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাদের মুখেও শোনা যায়। দুই হাজার ষোলোর সেপ্টেম্বর থেকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ, প্রায় তিন বছর জাতীয় দলের সাথে থাকলেও পেস বোলিং মেন্টর বা কোচ হিসেবে ওয়ালশের থেকে প্রাপ্তির খাতা প্রায় শূণ্য বলেই অভিযোগ করেন বিসিবি কর্তা এবং ক্রিকেটাররা, একইসাথে গ্রেট ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্টবোলারকে নিয়োগ দেয়াও ছিলো বড় ভুল, সেই অনুযোগও শোনা যায়। সে যাই হোক, ওয়ালশ চলে গেছেন, তারপর ল্যাঙ্গেভেল্ট, আপাতত ওটিস গিবসনে বিসিবির আস্থা। গিবসনের সময়ে ফাস্টবোলাররা কোথায় আর কী কী ভালো করছে, যেটা ওয়ালশের সময়ে হয়নি? তথ্য না ঘেঁটে বিশ্লেষণ করা কঠিন; মুস্তাফিজকে দিয়েই শুরু করা যাক।
ওয়ালশের সময়ে এগারো টেস্টে মুস্তাফিজের উইকেট চব্বিশটা, সাড়ে তিনের কম ইকোনমি তবে গড় ৩৮.৬২। গিবসনের সময় মুস্তা টেস্টই খেলেছেন একটা, ইকোনমি কিংবা গড় সবকিছুই ওয়ালশের সময়ের চাইতে বেশি। তবে বলা হচ্ছে, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ভেতরে বল আনার কাজটা গিবসনের সময়েই শিখে গেছেন মুস্তাফিজ, যদিও তার প্রতিফলন খুব কমই দেখা গেছে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সময়টা ওয়ালশের হাতেই ছিলেন মুস্তা। ওয়ালশ বা গিবসন, পরিসংখ্যানের হেরফের খুব কম। ওয়ালশের সময় মুস্তাফিজের বোলিং গড় ছিল ২৬.১২, আর গিবসনের সময় ২৬.১৮। তবে পুরোনো মুস্তাফিজকে একটু একটু করে ফিরিয়ে আনছেন গিবসন, এই প্রংশসা শোনা যায়। আসলে কি তাই?
ওয়ানডের মতে টি-টোয়েন্টিতেও, দুই কোচ ওয়ালশ আর গিবসনের মধ্যে কার কাছে ভাল শিখেছেন মুস্তাফিজ, তার প্রতিফলন সামান্যই। পরিসংখ্যান কাছাকাছি, যেখান থেকে সত্যিকার অর্থেই সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। গড়, ইকোনমি কোনোটাই অবশ্য খুব ভালো বার্তা দেয় না।
মুস্তাফিজের পর তাসকিন আহমেদ, যিনি কিনা সবশেষ টেস্টই খেলেছেন দুই হাজার সতেরোর সেপ্টেম্বরে। সাড়ে তিন বছর আগে টেস্ট খেলা কোন পেইসারের টেস্ট পারফর্ম্যান্স নিয়ে আপাতত আলোচনার কোনো মানে নেই। নজরটা থাকুক সাদা বলে।
ওয়ানডেতে ওয়ালশ থেকে গিবসনে হাতবদলের পর তাসকিনের ইকোনমি ভাল হয়েছে, ওই সময়টায় যা ছিল ৬.২৬ এখন তা ৫.৩৮। গতি আর লেন্থও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কিন্তু উইকেটের সংখ্যা কমেছে যেখানে বড় দায় ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস।
দুই ক্যারিবিয়ান পেইস ওস্তাদের কাছে যাই শিখুন, টি-টোয়েন্টিতে তাসকিনের পারফর্ম্যান্স দায় কোনো কোচের নয় বরং তার নিজেরই। ওয়ালশ-গিবসন কারো সময়েই টি-টোয়েন্টির তাসকিনকে ভাল পারফর্মার বলা যাবে না। ওয়ালশের সময় তাসকিন বল করেছেন ১১.২১ ইকোনমিতে, গিবসনের সময় ১২.৫১।
দুই সিনিয়র ফাস্টবোলার মুস্তাফিজ আর তাসকিন, ওয়ালশ আর গিবসন কোন কোচের সময়ে কেমন পারফর্ম করেছেন, সেই তথ্যগুলো দেখেছেন। এবার একজন টেস্ট বোলার দুই কোচের দুই রকমের শিক্ষায় কতটুকু বদলেছেন, সেই পরিসংখ্যান দেখা যাক।
ওটিস গিবসনের সময়ে আবু জায়েদ রাহীর পরিসংখ্যান যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। গড়ে বাইশ রানে এক উইকেট যা ওয়ালশের সময় ছিলো চল্লিশের মতো। এই পরিবর্তনটা অবশ্যই চোখটানা, দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ওয়ানডে পরিসংখ্যানও ওয়ালশের সময়ের চাইতে অনেকটাই বদলে গেছে গিবসনের কোচিংয়ে। উইকেট প্রতি রান দিচ্ছেন ষোলর কম, এমনকি ডেথ ওভার বোলিংয়েও উন্নতি করেছেন সাইফউদ্দিন। একই উন্নতির গ্রাফ দেখা যায় টি-টোয়েন্টিতে। ওয়ালশের সময় যেখানে বোলিং করেছেন ১০.৭৪ ইকোনমিতে সেখানে গিবসনের সময় ৯.০৭। শুধু পরিসংখ্যান হিসেবে, ওয়ালশের চেয়ে গিবসনের কোচিংয়ে অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিনের বোলিং বেশী কার্যকর।
তথ্য দিয়ে কখোনোই পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা যায় না, খেলার মাঠের হিসেবে সেটা আরও কঠিন। কিন্তু তারপরও তথ্যের ওপর ভরসা করেই কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ওয়ালশ টাইগারদের পেইস ইউনিটের ক্ষতি করে গেছেন নাকি ভালো? আবার গিবসনের হাত ধরে কতটুকু এগুবে টাইগারদের পেস ইউনিট? এগুলো বিশ্লেষণ করতে তাই তথ্যের সাহায্য নেয়া ছাড়া উপায়ও ছিলো না। তবে এটাও সত্যি, টেস্ট স্ট্যাটাসের দুই দশক পরেও বোলিং পার্টনারশিপ তৈরি না হওয়া কিংবা পেইস বোলিং ইউনিট গড়ে তুলতে না পারার দায় যতোটা কোচদের তারচেয়ে অনেক বেশি ক্রিকেটারদের এবং ক্রিকেট বোর্ডের।