মঞ্চ ছিল প্রস্তুত, অপেক্ষা ছিল তাঁর প্রত্যাবর্তনের। এই ম্যাচেই সেটি হবে কিনা তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। তবে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সেই শঙ্কাও দূর করে দেন কোচ ওলে গানার সুলশার। নিশ্চিত করেন, ফুরোচ্ছে ভক্তদের একযুগের অপেক্ষা! শনিবার নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ১২ বছর পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ঘরের মাঠে ম্যাচ দিয়েই ঘরের ছেলে ফিরে আসছে ঘরে।
এবং ঘরে ফেরাটা কি অসাধারণভাবেই না রাঙ্গিয়ে দিলেন ‘সিআরসেভেন’। তাঁর জোড়া গোলের সুবাদে নিউক্যাসেলের বিপক্ষে ৪-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অপর দুটি গোলটি এসেছে ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও জেসে লিনগার্ডের পা থেকে।
এই ম্যাচটা যতটা না ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের, তাঁরচেয়ে অনেক বেশি যেন ছিল ‘রোনালদোর ম্যাচ’। প্রিয় তারকাকে আবারো নিজেদের রংয়ে মাঠ মাতাতে দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ভেঙে পড়েছিল যেন গোটা ম্যানচেস্টার। এসেছিলেন পিতৃপ্রতিম কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন, এসেছিল ইউনাইটেড মালিকপক্ষ গ্লেজার্স পরিবার। “ভিভা রোনালদো, ভিভা রোনালদো” গানে মুখরিত ছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডের ৭৫ হাজার দর্শক।
রোনালদো কে সেন্টার ফরোয়ার্ডে রেখে ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজিয়েছিলেন কোচ ওলে। ইউনাইটেডের বাকি দু’জন নতুন সাইনিং রাফায়েল ভারানে ও জেডন সাঞ্চোও ছিলেন প্রথম একাদশে। রোনালদো মাঠে নামার উৎসাহে উজ্জীবিত হয়েই যেন শুরু থেকেই নিউক্যাসলের উপর দাপট দেখিয়ে খেলতে থাকে ইউনাইটেড। রোনালদোও সময়ে সময়ে তাঁর কারিকুরি দিয়ে সমর্থকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর সোনালী দিনগুলিতে। ৪ মিনিটের সময় অবশ্য একটি গোলের সুযোগ মিস করেন তিনি। ১০ মিনিটে চমৎকার ড্রিবল করে ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলে আরো একটি শট লাগান সাইড নেটিংয়ে।
অবশেষে প্রথমার্ধের একদম শেষ মাথায় এলো সেই কাঙ্ক্ষিত মুহুর্তটি, যেটির জন্য অপেক্ষা করে ছিল বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক। গ্রিনউডের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটটি নিউক্যাসল গোলকিপারের হাতে লেগে ছিটকে যায়; ক্ষুধার্ত শিকারীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বল জালে জড়ান রোনালদো। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা ওল্ড ট্রাফোর্ড। ২০০৯ সালের মে মাসের পর ইউনাইটেডের জার্সিতে এটিই রোনালদোর প্রথম গোল। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ব্যবধানে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৫ মিনিটে অবশ্য কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল পেয়ে যায় নিউক্যাসল। সেন্ট ম্যাক্সিমাঁর এসিস্টে সমতা ফেরান হাভিয়ের ম্যানকুইলো। সাময়িক অঘটনের শঙ্কায় কাঁপছিল ওল্ড ট্রাফোর্ড। তবে ইউনাইটেডের একজন রোনালদো যে তখনও আছেন! ৬১ মিনিটে লুক শ’ এর বাড়ানো বলটি মাঝমাঠ থেকে নিউক্যাসল ডিফেন্ডারদের প্রায় দৌড় প্রতিযোগিতায় হারিয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোলে পরিণত করেন পর্তুগিজ মহাতারকা। ইউনাইটেড জার্সিতে যেটি তাঁর ১২০তম গোল।
এরপর আর ম্যাচেই ফিরতে পারেনি নিউক্যাসল। ৮০ মিনিটে রোনালদোর পর্তুগিজ সতীর্থ ব্রুনো ফার্নান্দেজের গোলের পর অতিরিক্ত সময়ে জেসে লিনগার্ডের গোলটি শেষ পেরেক ঠুকে দেয় নিউক্যাসলের কফিনে। পল পগবা পেয়েছেন জোড়া অ্যাসিস্ট। ৪-১ ব্যবধানে শেষ হয় ম্যাচ।
এই জয়ে ৪ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ৩৬ বছর বয়সে ‘থিয়েটার অফ ড্রিমসে’ ফিরেই সিআরসেভেন দিলেন স্বপ্নময় এক ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স! প্রমাণ করলেন ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়…’