লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে নিয়ে নতুন বাজি ধরতে যাচ্ছেন চান্ডিকা হাথুরুসিংহে। তাকে যদি আয়ারল্যান্ডের সাথে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেই মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়, তাহলেও অবাক হবার কিছুই থাকবে না। কিন্তু কি কারণে হঠাৎ রিশাদকে দলে চাইলেন হাথুরু? যে স্পিনার ২০১৯ সালের পর আর কোন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি, সবশেষ বিপিএলেও দল পাননি, সেই স্পিনারের ওপরেই কেন ভরসা রাখতে চাচ্ছেন টাইগারদের নতুন হেড কোচ?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে লেগ স্পিনারদের কদর বেড়েছে সেও অনেক দিন। আধুনিক ক্রিকেটের চাহিদার সাথে খাপ খাওয়াতে দলে একজন লেগ স্পিনার হাথুরু তার প্রথম মেয়াদেই চেয়েছিলেন, জুবায়ের লিখনকে ভেবেছিলেন ট্রাম্প কার্ড। সময়ের সাথে লিখনের ভাগ্যের লিখন বদলে গেছে, তারপর আমিনুল বিপ্লবও জাতীয় দলে এসে বাদ পড়েছেন। হাথুরুসিংহে চলে যাবার পর আর কোন কোচই লেগিদের নিয়ে আলাদা করে ভাবতে চাননি বা ভাবার মতো সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় মেয়াদে টাইগারদের দায়িত্ব নিয়ে আবারও পুরোনো তত্ত্বে ফিরে গেছেনে চান্ডিকা, তার এবারের “বাজি” রিশাদ হোসেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩ ম্যাচ খেলা রিশাদের উইকেট ২০টি। গত মার্চে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেকে উইকেটশূন্য, তারপর আর ম্যাচ খেলারই সুযোগ হয়নি। যে সংস্করণের জন্য তিনি জাতীয় দলে ডাক পেলেন, সেই টি-টোয়েন্টিতে ১৪ ম্যাচেও তার উইকেট মোটে ৬টি, ইকোনমি ৯! তবুও রিশাদেই সম্ভবনা দেখছেন হাথুরু। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগের দিন রিশাদকে নিয়ে হেড কোচের বক্তব্য, “ওর (রিশাদ) জন্য এটা একেবারেই নতুন শুরু। আমাদের মনে হয়, ওর বেশ ভালো স্কিল আছে। মনে হচ্ছে ওর মধ্যে স্পেশাল কিছুই আছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, রিশাদকে আমরা আরও ভালো করে গড়ে তুলতে পারি”
হাথুরুর কথাতেই বোঝা যায়, রিশাদকে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্যই পরিকল্পনা করছেন চান্ডিকা আর সেই পথে আয়ারল্যান্ডের মতো দলের সাথে হোম সিরিজে তাকে দলে নেয়া বা খেলানোর চিন্তা অবশ্যই বেশ যৌক্তিক। হাথুরুর মতোই, লেগ স্পিনার রিশাদকে অনেকদিন ধরেই নিজেদের “রাডারে” রেখেছেন নির্বাচকরা। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশে খেলানো হয়েছিলো রিশাদকে, তারপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও ডাক পেয়েছিলেন, পরের বছরেই একধাপ এগিয়ে রিশাদকে নেয়া হয় বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। গত কয়েক বছরে নানা সময়ে ‘এ’ দল, বিসিবি একাদশে রাখার পাশপাশি এইচপি স্কোয়াড এবং বিভিন্ন স্পিন ক্যাম্পের নিয়মিত মুখ রিশাদ হোসেন। তবে সমস্যা সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হলো, ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া। ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজি কেউই লেগ স্পিনারদের নিয়ে আগ্রহ দেখায় না, তাই রিশাদদেরও ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় না। যে কারণে, ২০১৮ সালে স্বীকৃত ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকের পর গেলো ৫ বছরে তিন সংস্করণ মিলিয়ে মাত্র ২৮ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। আর পারফর্ম্যান্স? কোনো সংস্করণেই নজর কাড়ার মতো না।
তারপরও রিশাদে ভরসা খুঁজে বাজির ঘোড়া বানানোর চেষ্টা হচ্ছে আর সেটার পেছনেও ইতিবাচক কিছু ভাবনা রয়েছে। বল ঘোরাতে পারেন, পারেন গুগলি। ৬ ফুটের বেশি লম্বা হওয়ার কারণে উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় রিশাদের দিকে নজর টানার আরেকটা কারণ! বোলিং পারফর্ম্যান্সে যদিও এসব কিছুর প্রকাশ অনেকটাই কম দেখা যায়, গেলো দুই বছরে ব্যাটিংয়ের উন্নতিই বেশি চোখে পড়ে। বড় শট খেলা বা দ্রুত রান তোলাতে রিশাদ সমসাময়িক যে কারোর চেয়ে পিছিয়ে নেই। রোববার জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটেও বড় শটের অনুশীলন করেছেন রিশাদ। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের থ্রো ডাউনে বড় বড় ছক্কা মারতে দেখা গেছে তাকে। সব মিলিয়ে রিশাদের মধ্যে ভবিষ্যতে ভালো সম্ভাবনাই দেখছেন হাথুরু, তাই লেগ স্পিনারকে বাজিয়ে দেখতেও ভয় নেই লঙ্কান কোচের।
“ওকে (রিশাদ) দলে নেওয়ার পেছনে মূল ভাবনা হলো ভবিষ্যত। আপাতত যা-ই হোক না কেন, ও ভালো করুক বা নাই করুক, আগামীর কথা ভেবে আমরা কয়েকজন আক্রমণাত্মক স্পিনার খোঁজার চেষ্টা করছি।”
হাথুরুর এই চেষ্টার ফল মিষ্টি হবে নাকি আগের মতোই “লেগ স্পিনার প্রজেক্ট” ব্যর্থতায় মুখ লুকাবে, সেই আলোচনা দূরে রেখে রিশাদের সাফল্য কামনা করা জরুরী। লম্বা সময় ধরে টাইগার ক্রিকেটে লেগ স্পিনারের খোঁজ এবং তার সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার ধারা রিশাদ হোসেন বদলে দেবেন। তার মাঝেই বাংলাদেশ খুঁজে পাবে কাঙ্ক্ষিত লেগ স্পিনার, সেই আশাতেই হয়তো বুক বেঁধে আছে জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট।