অধিনায়ক কুশল পেরেরার অনবদ্য শতকে জয়ের ভিত গড়েছে সফররত শ্রীলঙ্কা। তার ১২০ রান আর ডি সিলভার অর্ধশতকের উপর ভর করে শ্রীলংকা পেয়েছে জয়ের মতো সংগ্রহ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান লঙ্কাদের। বাংলাদেশ দলের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ৯ ওভারে ৪৬ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। বাকি বোলাররা যেমন ছিলেন, ফিল্ডাররাও ছিলেন তেমনই – যেন ধুসর কোনো পাণ্ডূলিপি।
ক্রাইসিস থেকেই জন্ম হয় নতুন সম্ভাবনার, ইংরেজি প্রবাদ পুরোপুরি খাটে তাসকিন আহমেদের বেলায়। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে খরুচে বোলিংয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে যখন দল থেকে ছিটকে গেলেন তাসকিন, তার ঘোর কল্পনাতেও বোধহয় আসেনি এমন ফেরার গল্প। একাদশের বাইরে থাকলেও সাইফউদ্দিনের মাথার ইনজুরি তাকে একাদশে ফেরায়, ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে মাঠে ফেরেন তাসকিন, ভালো বোলিং করে নিশ্চিত করেন শেষ ম্যাচের টিকেট। আর শেষ ম্যাচে নিজেকে পুরোপুরি নিংড়ে দিয়েছেন এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। প্রথম ওভারে ১২ রান খরচার পর দ্বিতীয় ওভারেই তুলে নেন দানুস্কা গুনাথালিকা আর পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট। এর মাধ্যমে তৃতীয় দ্রুততম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে মাত্র ৩৯ ম্যাচে স্পর্শ করেন ৫০ উইকেটের মাইলফলক।
শুরুতে হানা দিয়েছিল বৃষ্টি, পরের সময়টায় দাপট দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৃষ্টির হানা থাকলেও ম্যাচ শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়েই। ঘুর্নিঝড় ‘যশ’ যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, শ্রীলঙ্কার ইনিংসে বাংলাদেশের আতঙ্কের নাম ছিল কুশল পেরেরা আর গুনাথালিকা। গুনাথালিকা ফিরে গেলেও মাত্র ৪৪ বলে অর্ধশতক পুরণ করা পেরেরা পানি পানের বিরতিতে যখন গেলেন স্কোরবোর্ড চোখ রাঙাচ্ছে বড় লক্ষ্যের।
Kusal Perera – 120
Dhananjaya de Silva – 55*Sri Lanka put up 286
Would that be enough for them to win the third #BANvSL ODI?
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) May 28, 2021
গত দুই ম্যাচের পার্শ্বনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ছিলেন নিজের ছাঁয়া হয়ে। দিন দুয়েক আগেই পেয়েছিলেন সুসংবাদ। মিরাজ এখন ওয়ানডেতে বিশ্বের দুই নম্বর বোলার। সুযোগ ছিল এক নম্বরে যাওয়ার পথ সুগম করার । সেটাও হয়নি, উইকেট নিতে না পারলেও রানের গতি আটকে রাখার যে কাজটা মিরাজ করতেন নিয়মিত সেটারও ব্রাত্যয় ঘটেছে।
ব্যাক্তিগত ৬৬ রানে জীবন পান পেরেরা, সাকিব আল হাসানের বলে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ মিস করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যাক্তিগত ৭৯ রানে আবারও জ়ীবন পান পেরেরা, আবারও বোলারের খাতায় নামটা সাকিব আর এযাত্রায় মিসের মহড়ায় আফিফ হোসেন। আফিফ ভুল করলেও ভুল করেননি অধিনায়ক তামিম ইকবাল, বোলার আবারও তাসকিন। ভয়ংকর হয়ে ওঠার আভাস দেওয়া কুশল মেন্ডিসকে ফেরালেন এই স্পিডস্টার।
যে মুস্তাফিজ জীবন দিয়েছিলেন পেরেরাকে, তার সামনে ছিল প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ। কিন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যে ক্যাচটা ছাড়লেন, অমন সহজ ক্যাচ বোধহয় কোনোদিন ধরেনই নি রিয়াদ। তিনবার জীবন পাওয়া পেরেরা তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ওয়ানডে শতক। শেষ পর্যন্ত ১২০ রানে ফিরেছেন পেরেরা, শরিফুলের বলে ক্যাচটাও সেই রিয়াদের।
কোনো নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার সুযোগ ছিল সাকিবের সামনে, ছিল বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার সুযোগ। দুটোর কোনোটিই হয়নি, সাকিবের ব্যর্থতার থেকেও দোষটা অনেকটা ভাগ্যের। দুটো ক্যাচ মিস তাকে অপেক্ষমান রেখেছে।
তিনশ’র কমে সফররতদের বেঁধে রাখার কৃতিত্ব তাই বাংলাদেশি বোলারদের। পাঁচের কম ইকোনোমিতে বোলিং করে যার নেতৃত্ব আবার দিয়েছেন সাকিব-মিরাজ-মুস্তাফিজ। ২৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামবে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ আর বিশ্বকাপ সুপার লিগের পূর্ণ ত্রিশ পয়েন্ট জয়টাই হয়তো বাংলাদেশ দলের টাচলাইন।