লং অনে বলটাকে ঠেলে দিয়ে বাবর আজমের দৌড়। দুই রান কমপ্লিট করতে পারলেই আসবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে জয়। পুরো স্টেডিয়াম নীরব, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা রান নেয়ার জন্য তুমুল গতিতে ছুটছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুই রান পূরণ হতেই হেলমেট, গ্লাভস খুলে দিলেন এক দৌড়; সেইসাথে শুরু স্টেডিয়ামে উপস্থিত পাকিস্তানি সমর্থকদের উল্লাস। বাবরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বসিত রিজওয়ান; ভিরাট কোহলি এসে মাথাটাতে দিলেন হাতটা বুলিয়ে! এমন সুন্দর দৃশ্য শেষ কে দেখেছেন কবে? দশ উইকেটে জিতলেও ম্যাচ শেষে যেভাবে পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যানকে অভিনন্দন জানিয়েছে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা, তা তো ভাতৃত্বেরই কথা বলে।
ব্যাট হাতে মাঠে প্রবেশ করছেন বাবর আজম- মোহাম্মদ রিজওয়ান। পুরো দলকে সাথে নিয়ে তখন নিজের পরিকল্পনা ব্যক্ত করতে ব্যস্ত ভারতীয় অধিনায়ক ভিরাট কোহলি। গ্যালারী ভর্তি দর্শক, ভীষণ সিরিয়াস কোহলি; বল হাতে ভুবেনশ্বর কুমার। পাকিস্তানের লক্ষ্য ১৫২, ভারতের ১০ উইকেট!
প্রথম ওভারেই রিজওয়ানের এক চার এবং এক ছয়! দুর্দান্ত শুরুর পর পাওয়ারপ্লেতে বিশাল সংগ্রহ তোলার পথে পাকিস্তান; কোনো উইকেট না হারিয়ে প্রথম ছয় ওভারে মেন ইন গ্রিনরা তুলতে পেরেছে ৪৩।
ড্রিংকস ব্রেকে পুরো দলকে নিয়ে আবারও একসাথে কোহলি। হয়তো সকলকে বলছেন, পাকিস্তানকে জিততে হলে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। জাসপ্রিত বুমরাহ-ভুবিদের হয়তো ঘাবড়ে না যাবারই মন্ত্র দিচ্ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। দশ ওভার শেষে মেন ইন গ্রিনদের সংগ্রহ তখন ৭১; জয়ের জন্য প্রয়োজন ৮১!
দলটা ভারত, আর ম্যাচটা ভারত-পাকিস্তানের বলেই হয়তো তখনও জেতার আশায় মেন ইন ব্লুদের সমর্থকেরা। দুর্দান্ত সব বোলার নিয়ে সাজানো বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে যে ৮১ রান তোলাটা সহজ হবে না সেটা তো অনুমান করাই যায়। কিন্তু, বাবর আজমের এতকিছু ভাবার সময় কোথায়! তেরোতম ওভারে বল করতে আসা বরুণ চক্রবর্তীকে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশতক পূরণ করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক; পরের ওভারে জাদেজাকে দুই চার! জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৬ বলে ৪০!
বল হাতে বুমরাহ, দ্বিতীয় বলেই চার; অর্ধশতক মোহাম্মদ রিজওয়ানের। দাঁড়িয়ে শুকরিয়া আদায় করলেন সৃষ্টিকর্তার, এমন ম্যাচে জয়টা যে অনেক বড় কিছু সেটা তো নিজেও জানেন পাকিস্তান ওপেনার। বড় ম্যাচে স্নায়ু জয় যারা করতে পারে, জেতে নাকি তারাই। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো হয়ে থাকলো পাকিস্তান দুই ওপেনারই। ইনিংসের শুরু করতে নেমে খেলেছেন শেষ অব্দি; দলকে এনে দিয়েছেন দশ উইকেটের জয়। রিজওয়ানের ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৭৯* রান, অধিনায়ক বাবর করেছেন ৬৮*। ম্যান অব দ্য ম্যাচ ৩১ রানে ৩ উইকেট নেয়া শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ম্যাচ শেষে দুই ওপেনারকে শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে এসেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। রিজওয়ানের মাথায় দিয়েছেন হাতটা বুলিয়ে। পাকিস্তান ওপেনারদের একে একে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাকিরাও। হাত মেলাতে ডাগআউট ছেড়ে মাঠে প্রবেশ মহেন্দ্র সিং ধোনির; উচ্ছ্বসিত পাকিস্তানের তরুণ খেলোয়াড়েরাও। বাবরকে কিছু একটা বললেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, শুনে হেসে দিলেন বাবর। কিছুক্ষণ পর ধোনিকে দেখা গেল শোয়েব মালিকের সাথে দাঁড়িয়ে একান্তে কথা বলতে। ক্যামেরার লেন্স খুঁজে নিল কোহলি-বাবরকেও। হাসিমুখে দুই দলের দুই অধিনায়ক দাঁড়িয়ে। কে জিতেছে, কে হেরেছে বোঝার উপায় নেই। এমন ম্যাচের এত সুন্দর সমাপ্তি তো চোখের জন্যও প্রশান্তির!